একটি স্বার্থক বাক্যের কী কী গুণ থাকতে পারে?
যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।অর্থাৎ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এক বা একাধিক শব্দ সুশৃঙ্খলভাবে বসে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে।
বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। ভাষার বিচারে একটি স্বার্থক বাক্যের তিনটি গুন থাকা আবশ্যক।
১। আকাঙক্ষা:- বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তাকে আকাঙক্ষা বলে। যেমন-সূর্য পূর্বদিকে-বললে বাক্যটি অসম্পূর্ণ। এটি মনের ভাব সম্পূর্ণ করতে পারেনি।এর পরে আরো কিছু কথা বা শব্দ শোনার ইচ্ছা হয়।যখন- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে-বললে বাক্যটি পূর্ণতা পাবে। তাই একটি পদের পরে আরেকটি পদ শোনার ইচ্ছাকে আকাঙক্ষা বলে।
২। আসত্তি:- একটি বাক্যের শব্দগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে মনোভাব প্রকাশে বাধাগ্রস্থ না হয়। অর্থাৎ বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন- ছাত্র দশম একজন আমি শ্রেণির। এখানে শব্দগুলো ঠিকভাবে সাজানো না হওয়ায় মনোভাব যথাযথ প্রকাশিত হয়নি। তাই একটি বাক্য নয়।ঠিক বাক্যটি হবে-আমি একজন দশম শ্রেণির ছাত্র।এখন পদগুলো সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত হয়েছে তাই এটি তাই এ বাক্যে আসত্তি নামক গুণটি বজায় রয়েছে।
৩। যোগ্যতা:-বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। অর্থাৎ বাক্যের পদগুলোর শব্দগত এবং অর্থগত মিল থাকার নামই হচ্ছে যোগ্যতা।
যেমন- আমার মন মন্দিরে আজ আশার বীজ উপ্ত হলো।কারো মনমন্দিরে আশার বীজ বপন করা হয়না। বীজ বপন করা হয় ক্ষেতে বা মাঠে। মন্দিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় পূজা পালন করতে যান।
কোন কোন কারণে বাক্য তার যোগ্যতা হারায়?
(ক) দুর্বোধ্যতা: অপ্রচলিত এবং দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য যোগ্যতা হারায়। যেমন:-তুমি আমার সঙ্গে প্রপঞ্চ করেছ। এখানে প্রপঞ্চ চাতুরী বা অর্থ ব্যবহৃত হলেও বাংলায় প্রপঞ্চ শব্দটি অপ্রচলিত।
(খ) উপমার ভুল প্রয়োগ: ঠিকভাবে উপমার প্রয়োগ না করলে বাক্য তার যোগ্যতা হারায়। যেমন:- আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হল।এই বাক্যটি তার যোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ বীজ ক্ষেতে বপন করা হয়, মন্দিরে নয়। বাক্যটি এরকম হতো- আমার হৃদয় -ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হল।
(গ) বাহুল্য-দোষ: প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করলে বাহুল্য দোষ ঘটে এবং শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমন:- দেশের সব আলেমগণই আমাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন।'আলেমগণ' বহুবচন হওয়ায় এর সাথে 'সব' ব্যবহার করায় বাক্যটিতে বাহুল্য দোষ ঘটেছে ।আর এতে বাক্যটি তার যোগ্যতা হারিয়েছে।
(ঘ) বাগধারার শব্দ পরিবর্তন: বাগধারা বাংলা ভাষার একটি ঐতিহ্য। তাই বাগধারার শব্দ পরিবর্তনে বাক্য তার যোগ্যতা হারায়।যেমন:- 'অরণ্যে রোদন' না বলে 'বনে ক্রন্দন' কিংবা 'ঘোড়ার ডিম' না বলে 'ঘোটকের ডিম্ব' ব্যবহার করলে বাক্য তার যোগ্যতা হারাবে।
(ঙ) গুরুচণ্ডালী দোষ: তৱসম শব্দের সাথে দেশী শব্দের ব্যবহারকে গুরু চণ্ডালী দোষের সৃষ্টি করে। আর এতে বাক্য যোগ্যতা হারায়। যেমন; 'গরুর গাড়ি' না বলে 'গরুর শকট', 'শবদাহ' না বলে 'শবপোড়া' কিংবা 'মরাপোড়া' এর পরিবর্তে 'মড়াদাহ' ব্যবহার করলে বাক্য যোগ্যতা হারাবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নৈবক্তিক প্রশ্ন:-
১। ভাষার বিচারে বাক্যের গুন কয়টি?
(ক) ২টি (খ) ৩টি (উত্তর)
(গ) ৪টি (ঘ) ৫টি
২। কোনটি বাক্যের গুন নয়?
(ক) আকাঙক্ষা (খ) আসক্তি (উত্তর)
(গ) আসত্তি (ঘ) যোগত্যা
৩। 'চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে'- বললে বাক্যের কোন গুনটির অভাববোধ হয়?
(ক) আকাঙক্ষা (উত্তর) (খ) যোগ্যতা
(গ) আসত্তি (ঘ) কোনটিই নয়
৪। 'কাল বিতরণী হবে উৱসব স্কুলে আমাদের পুরস্কার অনুষ্ঠিত'- এ বাক্য তার কোন গুনটি হারিয়েছে?
(ক) আকাঙক্ষা (খ) যোগ্যতা
(গ) আসত্তি (উত্তর) (ঘ) কোনটিই নয়
৫। 'বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে'। এক বাক্য তার কোন গুনটি হারিয়েছে?
(ক) আকাঙক্ষা (খ) যোগ্যতা (উত্তর)
(গ) আসত্তি (ঘ) কোনটিই নয়
৬। দেশের সব আলেমগণই আমাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন।এ বাক্যটি কোন দোষে দুষ্ট?
(ক) আকাঙক্ষা (খ) দুর্বোধ্যতা
(গ) বাহুল্য (উত্তর) (ঘ) উপমার ভুল প্রয়োগ
৭। 'শবপোড়া' শব্দটির কী দোষ দেখা যায়?
(ক) গুরুচণ্ডালী (উত্তর) (খ) আকাঙক্ষার ভুল প্রয়োগ
(গ) উপমা ভুল প্রয়োগ (ঘ) দুর্বোধ্যতা
৮। বাক্যে এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তাকে কী বলে?
(ক) আকাঙক্ষা (উত্তর) (খ) যোগ্যতা
(গ) আসত্তি (ঘ) কোনটিই নয়
৯। কোনটি বাগধারার পরিবর্তনজনিত ভুলের উদাহরণ?
(ক) ঘোড়ার ডিম (খ) গৌরীসেনের টাকা
(গ) গোড়ায় গলদ (ঘ) ঘোটকের ডিম্ব (উত্তর)
১০। কোন বাক্যাংশটি গুরুচণ্ডালী দোষযুক্ত?
(ক) ঘোড়ার গাড়ি (খ) শবদাহ
(গ) ঘোটকের গাড়ি (উত্তর) (ঘ) মড়াপোড়া
নিয়মিত চর্চা করুন। আর লেখায় কোন ভুল থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
No comments:
Post a Comment