হাদীস নং-৯০১। আবূল ইয়ামান (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে ওমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : এটি তো তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যানের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর ওমর (রাঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, ওমর (রাঃ) তা গ্রহন করেন এবং সেটি নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখেরাতি) কল্যানের কোন অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি্ এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।
হাদীস নং-৯০২। আহমদ ইবনু ঈসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বৃ’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ্) বাজানো হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বণু আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তথন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও।
হাদীস নং-৯০৩।হাজ্জাজইবনু মিনহাল) (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরুপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল।
হাদীস নং-৯০৪। উবাইদ ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবূ বকর (রাঃ) এলেন তখন আমার নিকট আনসার দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হল আমাদের আনন্দ।
হাদীস নং-৯০৫। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়াতে আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।
হাদীস নং-৯০৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে যে যবেহ করবে তাকে আবার যবেহ(কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজাকের এদিন গোশত খাওয়ার আকাংক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার কাছে দু’টি হ্ষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও বেশী পছন্দনীয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানিনা, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি না?
হাদীস নং-৯০৭। উসমান (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় বলেন: যে আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে কুরবানী করল তা সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। বারাআ- এর মানা আবূ বুরদাহ্ ইবনু নিয়ার (রাঃ) তখন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জানামতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে , আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বকরীই। তাই আমি আমার বকরীটি যবেহ করেছি এবং সালাত (নামায/নামাজ) আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশতাও করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার বকরীটি গোশতের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে। তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে এমন একটি ছয় মাসের শেষ শাবক আছে যা আমার কাছে দু’টি বকরীর চাইতেও পছন্দীয়। এটি (কুরবানী দিলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য যথেষ্ট কবে না।
হাদীস নং-৯০৮। সায়ীগ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত (নামায/নামাজ)। আর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সায়ীদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা বরাবর এই নিয়ম অনুসরন করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদিনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনু সালত (রাঃ) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসুলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সায়ীদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানিনা। সে তখন বলল, লোকজন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই দিয়েছি।
হাদীস নং-৯০৯। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর সালাত (নামায/নামাজ) শেষে খুতবা দিতেন।
হাদীস নং-৯১০। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন। এরপর খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করেন। রাবী বলেন, আমাকে আতা (রহঃ) বলেছেন যে, ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর বায়’আত গ্রহনের প্রথম দিকে আব্বাস (রাঃ) এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হতো সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরে। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে প্রথমে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ)- এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তার কাপড় জড়িয়ে ধরলে, মহিলাগণ এতে সাদাকার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা (রহঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি এখনো যরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগনের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই যরুরী। তাদের কি হয়েছে যে, তারা তা করবে না?
হাদীস নং-৯১১। আবূ আসিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, এবং উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) হাযির ছিলাম। তারা সবাই খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
হাদীস নং-৯১২। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) …ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর এবং উমর (রাঃ) উভয় ঈদের সালাত (নামায/নামাজ) খুতবার পূর্বে আদায় করতেন।
হাদীস নং-৯১৩। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে দু রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। তারপর বিলাল (রাঃ)কে সঙ্গে নিয়ে মহিলাগনের কাছে এলেন এবং সাদাকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।
হাদীস নং-৯১৪। আদম… বারাআ ইবনু আযিব… থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর আমরা (বাড়ী) ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যাক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে কুরবানী করল, তা শুধু গোশত বলেই গন্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য আগেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানী কিছুই নেই। তখন আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) নামক এক আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো (আগেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চাইতে উত্তম। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটিকে যবেহ করে ফেল। তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ঠ হবে না।
হাদীস নং-৯১৫। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ সুকাইন (রহঃ) সায়ীদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তার পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তার পা রেকাবের সাথে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এ ঘটে ছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌছলে তিনি তাকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বললো, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তাকে আমি শাস্তি দিতাম)। তখন ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তুমিই আমাকে আঘাত করেছে। সে বলল, তা কি ভাবে? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তুমিই সেদিন(ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র ধারণ করা হত না। তুমিই অস্ত্রকে হারাম শরীফে প্রবেশ করিয়েছ, অথচ হারাম শরীফে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।
হাদীস নং-৯১৬। আহমদ ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) … সায়ীদ ইবনু আস (রাঃ) এর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তার কাছে ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কেমন আছেন? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, ভাল। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে? তিনি বললেন, আমাকে সে ব্যাক্তি আঘাত করেছে যে সে দিন অস্ত্র ধারণের আদেশ দিয়েছে, যে দিন তা ধারণ করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।
হাদীস নং-৯১৭। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) … বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। তিনি বলেন, আজাকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা ‘মসিন্না’1 মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার স্থলে এটই কুরবানী করে নাও। অথবা তিনি বললেনঃ এটই যবেহ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষশাবক যথেষ্ঠ হবে না। ১। মুসিন্না অর্থ যার বয়স এক বছর পুরে দ্বিতীয় বছরে পড়েছে।
হাদীস নং-৯১৮। মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল, অনান্য দিনের আমলের তুলনায় উত্তম। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন: জিহাদও নয়। তবে সে ব্যাক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে নিজের জানো ও মালের ঝুকি নিয়েও জিহাদ করে এবং কিছু্ই নিয়ে আসে না।
হাদীস নং-৯১৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা থেকে যখন আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কিরুপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না।
হাদীস নং-৯২০। মুহাম্মদ (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহর থেকে বের করতাম এবং মাসিক মাসিক চলাকালীন মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু’আর সাথে দু’আ করত-তারা আশা করত সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা।
হাদীস নং-৯২১। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বর্শা পুতে দেওয়া হত। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
হাদীস নং-৯২২। ইবরাহীম ইবনু মুনযিন (রহঃ) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকাল বেলায় ঈদগাহে যেতেন, তথন তার সামনে বর্শা বহন করা হতো এবং তার সামনে ঈদগাহে তা স্থাপন করা হতো এবং একে সামনে রেখে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
হাদীস নং-৯২৩। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) উম্মে আতীয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হত। আইয়্যুব- (রহঃ) থেকে হাফসা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে যে, ঈদগাহে মাসিকচলা মহিলারা আলাদা থাকতেন।
হাদীস নং-৯২৪। আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাগণের কাছে গিয়ে তাদের উপদেশ দিলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং তাদেরকে সা’দকা দানের নির্দেশ দিলেন।
হাদীস নং-৯২৫। আবূ নু’আইম (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন বাকী’ (নামক কবরস্থানে) গমন করেন। তারপর তিনি দুরা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এরপর আমাদের দিকে মুখ করে দাড়ালেন এবং তিনি বলেন, আজকের দিনের প্রথম ইবাদাত হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর (বাড়ী) ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ করবে তা হলে তার যবেহ হবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। তখন এক ব্যাক্তি (আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি (তো সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি শেষশাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চাইতে উত্তম। (এটা কুরবানী করা যাবে কি?) তিনি বললেন, এটাই যবেহ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।
হাদীস নং-৯২৬। মূসা দ্দাস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তার কাছে আমার মর্যাদা না থাকত তা হলে কম বয়সী হওয়ার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবনু সালাতের গৃহের কাছে স্থাপিত নিশানার কাছে এলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাগনের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার সংঙ্গে বিলাল রা ছিলেন। তিনি তখন মহিলাগনের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সাদাকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মহিলাগণের নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে বিলাল রা এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। এরপর তিনি এবং বিলাল রা নিজ বাড়ীর দিকে চলে গেলেন।
হাদীস নং-৯২৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু নাসর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে মহিলাগণের নিকট আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ) এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তার কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। মহিলাগণ এতে দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন (আমি ইবনু জুরাইজ) আতা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি ঈদুল ফিতরের সাদাকা? তিনি বললেন না, বরং এ সাধারণ সাদাকা যা তারা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোন মহিলা তার আংটি দান করলে অন্যান্য মহিলাগণও তাদের আংটি দান করতে লাগলেন। আমি আতা (রহঃ) কে আবার জিজ্ঞাস করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেওয়া কি ইমামের জন্য জরুরী? তিনি বললেন, অবশ্যই, তাদের উপর তা জরুরী। তাদের (ইমামগণ) কি হয়েছে যে, তারা এরূপ করবেন না? ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলছেন, হাসান ইবনু মুসলিম (রহঃ) তাইস (রহঃ) এর মধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর সংঙ্গে ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তারা খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইশারায় (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। এরপর তাদের কাতার ফাক করে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের কাছে এলেন। বিলাল (রাঃ) তার সংঙ্গে ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন: অর্থ “ হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়’আত করতে আসেন (সূরা মুমতাহিনা:১২)। এ আয়াত শেষ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ বায়’আতের উপর আছ? তদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান (রহঃ) জানেন না, সে মহিলা কে? এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সাদাকা কর। সে সময় বিলাল (রাঃ) তার কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন মহিলাগণ তাদের ছোট-বড় আংটি গুলো বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, ‘’ হল বড় আংটি যা জাহেলী যুগে ব্যবহৃত হত।
হাদীস নং-৯২৮। আবূ মা’মার (রহঃ) হাফসা বিনত সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একবার জনৈক মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসা’দ অবস্থান করলেন। আমি তার নিকট গেলে বললেন, তার ভগ্নিপতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তার বোনও স্বামীর সাথে অংশ গ্রহন করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের সেবা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যানকর কাজে ও মমিনদের দুআয় অংশগ্রহন করেন। হাফসা (রাঃ) বলেন, যখন উম্মে আতিয়া (রাঃ) এলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনছেন? তিনি বললেন হ্যা, হাফসা (রহঃ) বলেন, আমার পিতা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই এ কথা বলতেন। তাবুতে অবস্থান-কারিণী যুবতীগণ এবং মাসিকচলা মহিলাগণ যেন বের হন। তবে মাসিকচলা মহিলাগণ যেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান থেকে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যানকর কাজে ও মমিনদের দু’আয় অংশগ্রহন করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম মাসিকচলা মহিলাগণও? তিনি বললেন, হ্যা মাসিকচলা মহিলা কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না?
হাদীস নং-৯২৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, (ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা মাসিকচলা, যুবতী এবং তাবুতে অবস্থানকারীনী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। ইবনু আওন (রহঃ) এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাবুতে অবস্থানকারীনী যুবতী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। অতঃপর মাসিকচলা মহিলাগণ মুসলমানদের জামা’আত এবং তাদের দুআতে অংশ গ্রহন করতেন। তবে ঈদগাহে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন।
হাদীস নং-৯৩০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে নাহর করতেন কিংবা যবেহ করতেন।
হাদীস নং-৯৩১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, করবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি বললেন, যে আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং আমাদেরে কুরবানীর মত কুরবানী করবে, তার কুরবানী যথার্থ বলে গন্য হবে। আর যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে কুরবানী করবে তার সে করবানী গোশত খাওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। তখন আবূ বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাঃ) দড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম! আমি তো সালাতে (নামাযে) বের হবার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি যে, আজকের দিনটি তো পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি। আমি নিজে খেয়েছি এবং আমরা পরিবারবর্গ ও প্রতিবেশীদেরকেও আহার করায়েছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটা গোশত খাওয়ার বকরী ছাড়া আর কিছু হয়নি। আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, তবে আমার নিকট এমন একটি শেষ শাবক আছে যা দু’টো (গোশত খাওয়ার) বকরীর চেয়ে ভাল। এটা কি আমার পক্ষে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যা তবে তোমার পরে অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হবে না।
হাদীস নং-৯৩২। হমিদ ইবনু উমর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তারপর খুতবা দিলেন। এরপর নির্দেশ দিলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। তখন আনসারগণের মধ্যে থেকে এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার প্রতিবেশীরা ছিল উপবাসী অথবা বলেছেন দরিদ্র। তাই আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে আমার নিকট এমন মেষশাবক আছে যা দু’টি মোটাতাজা বকরীর চাইতেও আমার নিকট অধিক পছন্দসই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি প্রদান করেন।
হাদীস নং-৯৩৩। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা; কুরবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, এরপর খুতবা দেন। তারপর যবেহ করেন এবং তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে যে ব্যাক্তি যবেহ করবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ করতে হবে। এবং যে যবেহ করেনি, আল্লাহর নামে তার যবেহ করা উচিৎ।
হাদীস নং-৯৩৪। মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি অধিকতর সহীহ।
হাদীস নং-৯৩৫। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ বকর (রাঃ) তার নিকট এলেন। এ সময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তার নিকট দু’টি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) মেয়ে দুটিকে ধমক দিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমন্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবূ বকর! ওদের বাধা দিও না। কেননা, এসব ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিল মিনার দিন। আয়িশা (রাঃ) আরো বলেছেন, হাবশীরাা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গনে) খেলাধুলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। উমর (রাঃ) হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওদের ধমক দিও না। হে বণু আরফিদা! তোমরা যা করছিলে তা নিশ্চিতে কর।
হাদীস নং-৯৩৬। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) কে সংঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি এর আগে ও পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি।
No comments:
Post a Comment