Jan 28, 2020

সহীহ বুখারী, অধ্যায়-২৩, বিষয়:-সাওম বা রোজা

Screenshot_1হাদীস নং-১৭৭০। কুতায়বা ইবনু সা’ইদ (রহঃ) তালহা ইবনু ‘উবাদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এলোমেল চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত (নামায/নামাজ) ফরজ করেছেন? তিনি বলেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত (নামায/নামাজ); তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম); তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমান যাকাত ফরয করেছেন? রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেও সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।
হাদীস নং-১৭৭১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরজ হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ (রহঃ) এ সিয়াম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগূলোতে সাধারন সিয়াম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।
হাদীস নং-১৭৭২। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, জাহিলী যুগে কুরায়শগন ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরে এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরজ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার ইচ্ছা ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না।
হাদীস নং-১৭৭৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রানে, অবশ্যই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।
হাদীস নং-১৭৭৪। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদিন ‘উমর (রাঃ) বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত (নামায/নামাজ), সিয়াম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। ‘উমর (রাঃ) বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ওই ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আন্দোলিত হতে থাকবে। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ সরজা আছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, ভেঙ্গে যাবে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমার মাস্রুক (রহঃ) কে বললাম, হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করূন, ‘উমর (রাঃ) কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি এরুপ জানতেন যে রুপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত।
হাদীস নং-১৭৭৫। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।
হাদীস নং-১৭৭৬। ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী, তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর দরজা থেকে ডাকা হবে। সে মিজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সিয়াম পালনকারী, তাঁকে রায়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সা’দকা দাঙ্কারী তাঁকে সা’দকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।
হাদীস নং-১৭৭৭। কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
হাদীস নং-১৭৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানকে।
হাদীস নং-১৭৭৯। ইয়াহহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাহ কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ন করবে। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা লায়স (রহঃ) থেকে ‘উকায়লা এবং ইউনুস (রহঃ) সূত্রে বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।
হাদীস নং-১৭৮০। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।
হাদীস নং-১৭৮১। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
হাদীস নং-১৭৮২। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং-১৭৮৩। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কব্জায় মুহাম্মদের প্রান, তাঁর শপথ! সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়ইমের জন্য রয়েছে দূ’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র বিনিময়ে আনন্দিত হবে।
হাদীস নং-১৭৮৪। ‘আব্দান (রহঃ) ’আলকামা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে চলতে ছিলাম তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষন করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) তাঁর প্রবৃত্তিকে দমন করে। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, শব্দের অর্থ বিবাহ।
হাদীস নং-১৭৮৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় (ত্রিশ দিন) পরিমান পূর্ন করবে।
হাদীস নং-১৭৮৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ন করবে।
হাদীস নং-১৭৮৭। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেনঃ মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি বন্ধ করে নিলেন।
হাদীস নং-১৭৮৮। আদম (রহঃ) ’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা বললেন, আবূল কাসিম বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শ’বানের গননা ত্রিশ পুরা করবে।
হাদীস নং-১৭৮৯। আবূ ‘আসিম (রহঃ)। উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করলেন। ঊনত্রিশ দিন পার হওয়ার পর সকালে বা সন্ধায় তিনি তাঁদের নিকট গেলেন। তাঁকেপ্রশ্ন করা হ, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন? তিনি বলেলেন, মাস ঊনত্রিশ হয়েও থাকে।
হাদীস নং-১৭৯০। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে করলেন। এ সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় উনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরন করলে ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
হাদীস নং-১৭৯১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’টি মাস কম হয় না। রতা হল ঈদের দু’মাস রমযানের মাস ও যুলহজের মাস। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেন, রমযান ঘাটতি হলে যুলহাজ্জ (হজ্জ) পূর্ন হবে। আর যুলহাজ্জ (হজ্জ) ঘাটতি হলে রমযান পূর্ন হবে। আবূল হাসান (রহঃ) বলেন, ইসহাক ইবনু রাহওয়াই (রহঃ) বলেন, ফযীলতের দিক থেকে এ দুই মাসে ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক।
হাদীস নং-১৭৯২। আদম (রহঃ) ইদন ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা উম্মী জাতি। আমরা লিখি না এবং হিসাবও করিনা। মাস এরুপ অর্থাৎ কখনও উনত্রিশ দিনের আবার কখনও ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।
হাদীস নং-১৭৯৩। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) থেকে বর্নিত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কেউ রমজানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) করতে পারবে।
হাদীস নং-১৭৯৪। ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ এর সাহাবীগন অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন, ইফতারের সময় হলে ইফতার না করে ঘুমিয়ে গেল। সে রাতে এবং পরের সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবনু সিরমা আনসারই (রাঃ) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কিছু খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে আমি যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি। তিনি কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর চোখ ভিজে গেল। এরপর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন তাঁকে বললেন, হায়, তুমি বঞ্ছিত হয়ে গেলে! পরদিন দুপুর হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করা হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়ঃ সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। এ হুকুম সমন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগন খুবই আনন্দিত হলেন। এরপর নাযিল হলঃ তোমরা পানাহার কর যতক্ষন রাতের কাল রেখা হতে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্ট তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়।
হাদীস নং-১৭৯৫। হাজ্জ (হজ্জ) ইবনু মিনহাল (রহঃ) ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হলঃ ‘’তোমরা পানাহার কর রাত্রির কাল রেখা হতে সাদা রেখা যতক্ষন স্পষ্ট রুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়্‌ তখন আমি একটি কাল এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টি কে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগূলোকে দিকে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হল না। তাই সকালেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেনঃ এতো রাতের আধার এবং দিনের আলো।
হাদীস নং-১৭৯৬। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হওঁ। ; ‘’তোমরা পানাহার কর, জতক্ষন না কাল রেখা সাদা রেখা স্পষ্ট রুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। কিন্তু তখনো কথাটি নাযিল হয় নি। তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে ইচ্ছুক লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি সাদা সুতলি বেধে নিতেন এবং সাদা কাল এই দুইটির পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা শব্দটি নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত (এর আধার) এবং দিন (এর আলো)।
হাদীস নং-১৭৯৭। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে এবং কাসিম মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) রাতে আযান দিতেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা ফজর না হওয়া পর্যন্ত যা আযান দেয় না। কাসিম (রহঃ) বলেন, এদের উভয়ের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন।
হাদীস নং-১৭৯৮। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী খেতাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) শরীক হওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করতাম।
হাদীস নং-১৭৯৯। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাহরী খাই এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়ান। বর্ননাকারী বলেন, আম জিজ্ঞেসা করলাম আযান ও সাহরীর মাঝে কতটিকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমান।
হাদীস নং-১৮০০। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়াল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিষেধ করলেন। তাঁরা বলল, আপনি যে এক নাগাড়ে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন? তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদের মত নই। আমাকে খাওয়ানও হয় ও পান করানো হয়।
হাদীস নং-১৮০১। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাহরী খাও , কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।
হাদীস নং-১৮০২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) সালম ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , ‘ আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন , যে ব্যাক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন , সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।
হাদীস নং-১৮০৩। আবদুল্লাহ ইবনু মাসআলা (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু ‘আব্দুর রাহমান থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি এবং আমার পিতা ‘আয়িশা (রাঃ) এবং উম্মে সালামা (রাঃ)নিকট গেলাম। (অপর বর্ণনায়) আবূল ইয়ামান (রহঃ) মারওয়ান (রহঃ)থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়িশা (রাঃ) এবং উম্মে সালামা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে , নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। মারওয়ান (রহঃ)‘আব্দুর রাহমান ইবনু হারিস (রহঃ) কে বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি , এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে শঙ্কিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান (রহঃ)মদিনার গভর্ণর ছিলেন। আবূ বাকর (রহঃ) বলেন মারওয়ান (রাঃ) এর কথা ‘আব্দুর রাহমান (রহঃ) পছন্দ করেননি রাবী বলেন , এরপর ভাগ্যক্রমে যুল-হুলাইফাতে একত্রিত হয়ে যাই। সেখানে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর একখন্ড জমি ছিল। আব্দুর রাহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা কে বললেন , আমি আপনার নিকট একটি কথা বলতে চাই , মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলতেন , তাহলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। তারপর তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) ও উম্মে সালামা (রাঃ) এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করলেন , ফাযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবহিত। হাম্মাম (রহঃ) এবং ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এরূপ ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগ করে খাওয়ার হুকুম দিতেন। প্রথমোক্ত হাদীসটি সনদের দিক থেকে বিশুদ্ধ।
হাদীস নং-১৮০৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে অধিক সক্ষম ছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ)বলেন মানে হাজত বা চাহিদা। তাউস (রহঃ) বলেন, মানে বোধহীন , যার মেয়েদের প্রতি কোন খাহিশ নেই।
হাদীস নং-১৮০৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসআলা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সায়িম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (একথা বলে) ‘আয়িশা (রাঃ) হেসে দিলেন।
হাদীস নং-১৮০৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একই চাঁদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার হায়য শুরু হল। তখন আমি আমার হায়যের কাপড় পরিধান করলাম। তিনি বললেন :তোমার কি হল? তোমার কি হায়য দেখো দিয়েছে? আমি বললাম , হ্যাঁ; তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে চাঁদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতেন এবং সায়িম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চুমু দিতেন।
হাদীস নং-১৮০৭। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানো মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভোর হত ইহতিলাম ব্যতীত (জুনুবী অবস্থায় )। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
হাদীস নং-১৮০৮। ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু ‘আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট পৌছলাম। তিনি বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি , তিনি ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। আবূ জা‘ফর বলেন , ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)- কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম , কোন ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলে সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মত কাফ্ফারা আদায় করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো সম্পর্কে জানো না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলেও তার কাযা অঅদায় হবে না?
হাদীস নং-১৮০৯। ‘আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।
হাদীস নং-১৮১০। ‘আবদান (রহঃ) হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উসমান (রাঃ) -কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমন্ডল) ধুইলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর ডান পা তিনবার ধুইলেন তারপর বাম পা তিনবার ধুইলেন। এরপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং মনে মনে কোন কিছুর চিন্তা -ভাবনায় লিপ্ত হবে না , তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং-১৮১১। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মুনীর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এস বলল, সে তো জ্বলে গেছে। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল , রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (খেজুর ভর্তি)ঝুড়ি এল , যাকে ‘আরাক (১৫ সা‘ পরিমাণ )বলা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায়? লোকটি বলল , আমি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো সা’দকা করে দাও।
হাদীস নং-১৮১২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এস বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার কি হয়েছে? সে বলল , আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন : তুমি কি একাধারে দু’মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল , না। এরপর তিনি বললেনঃষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন , আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল , আমি। তিনি বললেন : এগুলো নিয়ে সা’দকা করে দাও। তখন লোকটি বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থকে সা’দকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় লাব ১ অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কউ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।
হাদীস নং-১৮১৩। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এস বলল , এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল , না। তিনি বললেন :তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল , ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থ কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃতাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।
হাদীস নং-১৮১৪। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সায়িম অবস্থায় ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
হাদীস নং-১৮১৫। আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
হাদীস নং-১৮১৬। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) সাবিত আল-বুনানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) - কে প্রশ্ন করা হল , আপনারা কি সায়িমের শিঙ্গা লাগানো অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন , না। তবে দূর্বল হয়ে যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা (রহঃ) শু’বা, (রহঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৮১৭। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , কোন এক সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন : সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল , ইয়া রাসুলাল্লাহ সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী থেকে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন : যখন দেখবে রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জাবীর (রাঃ) এবং আবূ বাকর ইবনু ‘আইয়াশ (রাঃ) ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম।
হাদীস নং-১৮১৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ক্রমাগত সিয়াম পালন করছি।
হাদীস নং-১৮১৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রাঃ) অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন , আমি সফরেও কি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারি? তিনি বললেন : ইচ্ছা করলে তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পার , আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার।
হাদীস নং-১৮২০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র অবস্থায় কোন এক রমজানে মক্কার পথে যাত্রা করলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌছার পর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , ‘উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।
হাদীস নং-১৮২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) অঅবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , কোন এক সফরে প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচন্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ হাত মাথার উপরে তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ছাড়া আমাদের কেউই সায়িম ছিল না।
হাদীস নং-১৮২২। আদম (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন , হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যাক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন : এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল , সে সায়িম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সফরে সায়িম পালনে কোন নেকী নেই।
হাদীস নং-১৮২৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সফরে যেতাম সায়িম ব্যাক্তি গায়ের সায়িমকে (যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছে না)এবং গায়ের সায়িম ব্যাক্তি সায়িমকে দোষারোপ করত না।
হাদীস নং-১৮২৪। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছিলেন। ‘উসফানে পৌছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ করে ধরে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌছলেন। এ ছিল রমজানো মাসে। তাই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করতে পারে।
হাদীস নং-১৮২৫। ‘আইয়াশ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে , ইহা রহিত।
হাদীস নং-১৮২৬। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমার উপর রমযানের যে কাযাথেকে যেত তা পরবর্তী সাবান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহিয়া (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর ব্যস্ততার কারণে কিংবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।
হাদীস নং-১৮২৭। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এ কথা কি ঠিক নয় যে হায়য শুরু হলে মেয়েরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনা এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করে না। এ হল তাদের দ্বীনেরই ত্রুটি।
হাদীস নং-১৮২৮। মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যাক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবকের পক্ষ থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করবে। ইবনু ওয়াহব (রহঃ) ‘আমর (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) ইবনু আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৮২৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আব্দুর রাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যাক্তি এস বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার মা এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) জিম্মায় রেখে মারা গেছেন , আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা করতে পারি? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য। সুলায়মান (রহঃ) বলেন , হাকাম (রহঃ) এবং সালামা (রহঃ)বলেছেন , মুসলিম (রহঃ)এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই একসাথে উপবিষ্ট ছিলাম তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে , ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে মুজাহিদ (রহঃ)-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা শুনেছি। আবূ খালিদ আহমার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া (রহঃ) ও আবূ ম‘আবিয়া ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার মা মারা গেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার মা মারা গেছে , অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রয়েছে। আবূ হারীয (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা মারা গেছে , অথচ তার যিম্মায় পনর দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রয়ে গেছে।
হাদীস নং-১৮৩০। হুমাদী (রহঃ) ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায় , তখন সায়িম ইফতার করবে।
হাদীস নং-১৮৩১। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সায়িম। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেন : হে উমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল , দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন , তারপর বললেন : যখন তোমরা দেখবে , রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে , তখন সায়িম ইফতার করবে।
হাদীস নং-১৮৩২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি রোযাদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি বললেনঃ তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আর একটু সন্ধ্যা হতে দিন। তিনি বললেন : তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এখনো তো আপনার সামনে দিন রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং ছাতু গুলিয়ে আনলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে বললেনঃযখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে আসছে , তখনই রোযাদারদের ইফতারের সময় হয়ে গেল।
হাদীস নং-১৮৩৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াকত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
হাদীস নং-১৮৩৪। আহমদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , এক সফরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে বললেন : সওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন। লোকটি বলল , আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত)অপেক্ষা করতেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন : নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। (তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ)যখন তুমি এদিক (পূর্বদিক) হতে রাত্রির আগমন দেখতে পাবে তখন রোযাদার ইফতার করবে।
হাদীস নং-১৮৩৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম , এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল , তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম (রহঃ) বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী)মা’মার (রহঃ) বলেন , আমি হিশামকে বলতে শুনেছি , তাঁরা কাযা করেছিলেন কি না তা আমি জানিনা।
হাদীস নং-১৮৩৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) রুবায়্যি‘ বিনত মু’আব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র১ সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন : যে ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে , আর যার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অবস্থায় সকাল হয়েছে , সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) (রাঃ) বলেন , পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁধলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , অর্থ পশম।
হাদীস নং-১৮৩৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল , আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি।
হাদীস নং-১৮৩৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল। লাহ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল হতে নিষেধ করলেন। লোকেরা বললো , আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন! তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমাকে পানাহার করানো হয়।
হাদীস নং-১৮৩৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে , তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে , আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান।
হাদীস নং-১৮৪০। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)ও মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল হতে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন , রাবী ‘উসমান (রহঃ) ‘তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
হাদীস নং-১৮৪১। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতিহীন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি যে বিরতীহীন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন? তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন : যদি চাঁদ উঠতে আরও দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরও বেশী দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
হাদীস নং-১৮৪২। ইয়াহ্য়য়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করা থেকে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি)দু’বার বললেন। তাঁকে বলা হল , আপনি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করেন। তিনি বললেন : আমি এভাবে রাত যাপন করি যে , আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
হাদীস নং-১৮৪৩। ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) খেকে বর্ণিত , তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করবে না। তোমাদের কউ যদি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতে চায় , তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে , আমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান , একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।
হাদীস নং-১৮৪৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান (রাঃ) ও আবূদ দারদা -এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান (রাঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) - এর সাথে সাক্ষাত করতে এস উম্মুদ দারদা (রাঃ) -কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মুদ দারদা (রাঃ) বললেন , আপনার ভাই আবূদ দারদার পার্থিব কোন কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবূদ দারদা (রাঃ) এলন। তারপর তিনি সালমান (রাঃ)-এর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন , আপনি খেয়ে নিন , আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। সালমান (রাঃ) বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবনা। এরপর আবূদ দারদা (রাঃ) সালমান (রাঃ) -এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবূদ দারদা (রাঃ) (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে)দাঁড়াতে গেলেন। সালমান (রাঃ) বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবূদ দারদা (রাঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবূদ দারদা (রাঃ) আবার সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান (রাঃ) বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হল, সালমান (রাঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) -কে বললেন , এখন দাঁড়ান। এরপর তারা দুজনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। পরে সালমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনার প্রতিপালকের হক আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার উপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবূদ দারদা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃসালমান ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং-১৮৪৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশী)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে , আমরা বলাবলি করতাম , তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশী) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে , আমরা বলাবলি করতাম , তিনি আর (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রমজানো ব্যতীত কোন পুরা মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশী (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি।
হাদীস নং-১৮৪৬। মুআ‘য ইবনু ফাযালা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসের চেয়ে বেশী (নাফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোন মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং বলতেন : তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলোয় ততটুকু (নফল) আমল কর, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা (সওয়াব দান )বন্ধ করেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাত (নামায/নামাজ)ই ছিল তাই- যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত। যদিও তা পরিমানে কম হত এবং তিনি যখন কোন (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।
হাদীস নং-১৮৪৭। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোন মাসে পুরা মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে , কউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিতেন যে , কউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না।
হাদীস নং-১৮৪৮। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে এভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম , তিনি এ মাসে আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না। আবার কোন মাসে এভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাঁকে রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাঁকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলা্য়মান (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে বলেন যে, তিনি আনাস (রাঃ) -কে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
হাদীস নং-১৮৪৯। মুহাম্মদ (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি আনাস (রাঃ) -কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নফল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন , যে কোন মাসে আমি তাঁকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি , তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাঁকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি , তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি।
হাদীস নং-১৮৫০। ইসহাক (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি [‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ “তোমার উপর মেহমানের হক আছে , তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। ” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) দাউদ (‘আ) কি? তিনি বললেন , “অর্ধেক বছর”(-এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা)।
হাদীস নং-১৮৫১। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘ আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং সারারাত সালঅত আদায় করে থাক। আমি বললাম , ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন : এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে )সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আবার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়েও দাও। (রাতে)সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে , তোমার চোখের হক রয়েছে , তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে , তোমার তমহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে , তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। কেননা নেক আমলের পরিবর্তে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হয়ে যায়। আমি বললাম আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃতবে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর , এর থেকে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কেমন? তিনি বললেন : অর্ধেক বছর। রাবী বলেন , ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন , আহা! আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম!
হাদীস নং-১৮৫২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি , আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম , আপনার উপর আমার পিতামাতা কুরবান হোক! আমি একথা বলেছি। তিনি বললেনঃতুমি ত এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। কারণ নেক কাজের ফল তার দশ গুন ; এভাবেই সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম আমিএর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং দুদিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমিএর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও। এই হল দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং এই হল সর্বোত্তম (সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)। আমি বললাম , আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এর চেয়ে উত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) (রাখার পদ্ধতি)আর নেই।
হাদীস নং-১৮৫৩। ‘আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ সংবাদ পৌছে যে , আমি একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন : আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে , তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না?(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন):তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরেরও ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। তিনি [ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তুমি দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , তা কিভাবে? তিনি বললেন : দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন , একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে? বর্ণনাকারী ‘আতা (রহঃ) বলেন , (এই হাদীসে)কিভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার এ কথাটি বলেছেন , সব সময়ের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) নয়।
হাদীস নং-১৮৫৪। মুহম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি এর চাইতে বেশী করার শক্তি রাখি। এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন যে , অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও এবং আরও বললেন : প্রতি মাসে (এক খতম)কুরআন পাঠ কর। তিনি বললেন আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন , অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর )।
হাদীস নং-১৮৫৫। আদম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি সব সময় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাক? আমি বললাম , জী হাঁ। তিনি বললেন তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমতূল্য। আমি বললাম আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর , তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না।
হাদীস নং-১৮৫৬। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাঁর জন্য খেজুরের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ (হেলান দিয়ে বসার জন্য) পেশ করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেনঃপ্রতি মাসে তুমি তিন দিন রোযা রাখলে হয়না? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন , আমি বললাম , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আরো)। তিনি বললেন সাতদিন। আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন : নয় দিন। আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন : এগারো দিন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র চেয়ে উত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আর হয় না - অর্ধেক বছর , একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও।
হাদীস নং-১৮৫৭। আবূ মা‘মার (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন , প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা এবং দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ)য -যুহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা।
হাদীস নং-১৮৫৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা )উম্মে সুলাইম (রাঃ) -এর ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি রোযাদার। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম (রাঃ) ও তাঁর পরিজনের জন্য দুআ করলেন। উম্মে সুলাইম আরয করলেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেনঃ কে সে? উম্মে সুলাইম (রাঃ) বললেন, আপনার খাদেম আনাস। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যানের দু‘আ করলেন। তিনি বললেন : হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস (রাঃ) বলেন , আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন এবং আমার কন্যা আমাকে জানিয়েছে যে , হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ)- এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে।
হাদীস নং-১৮৫৯। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) আনাস (রাঃ) -কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
হাদীস নং-১৮৬০। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অথবা (রাবী বলেন) অন্য এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন এবং ‘ইমরান (রাঃ)তা শুনেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের পিতা! তুমি কি এ মাসের শেষভাগে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করনি? (রাবী) বলেন , আমার মনে হয় (আমার ওস্তাদ)বলেছেন , অর্থাৎ রমযান। লোকটি উত্তর দিল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! না। তিনি বললেনঃ যখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন শেষ করবে তখন দু’দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে নিবে। আমার মনে হয় সালত (রহঃ) রমযান মব্দটি বর্ণনা করেননি। সাবিত (রহঃ) ‘ইমরান সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শাবানের শেষভাগে বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, শা’বান শব্দটি অধিকতর সহীহ।
হাদীস নং-১৮৬১। আবূ ‘আসিম (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমু‘আর দিনে (নফল)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন , হাঁ। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে , পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন (-কে নিষেধ করেছেন )।
হাদীস নং-১৮৬২। ‘উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে , তোমাদের কউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করে কিন্তু তার আগে একদিন বা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে পালন করা যায়)
হাদীস নং-১৮৬৩। মূসা’দ্দাদ ও মুহাম্মদ (রহঃ) জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি গতকাল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলে? তিনি বললেন , না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি আগামীকাল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন , না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ (রহঃ) স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করেন।
হাদীস নং-১৮৬৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন দিন কোন কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন? উত্তরে তিনি বলেলেন , না , বরং তাঁর আমল স্থায়ী হতো এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব আমল করার শক্তি - সামর্থ্য রাখতেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে সে সবের সামর্থ্য রাখে?
হাদীস নং-১৮৬৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল ফাযর বিনত হারিস (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে , কিছুসংখ্যক লোক ‘ আরাফাতের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে তাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাদের কউ বলল , তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। আর কউ বলল , না, তিনি করেন নাই। এতে উম্মুল ফাযল (রাঃ) এক পেয়ালা দুধ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উঠের পিঠে (‘আরাফাতে)উকূফ অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং-১৮৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমান দুধ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে)আবস্থান স্থলে ওকূফ করছিলেন।
হাদীস নং-১৮৬৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বনূ আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি একবার ঈদে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম , তখন তিনি বললেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন)যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দাও। আরেক দিন , যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেন , যিনি ইবনু আযহারের মাওলা বলে উল্লেখ করেছেন , তিনি ঠিক বর্ণনা করেছেন ; আর যিনি ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) - এর মাওলা বলেছেন , তিনিও ঠিক বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৮৬৮। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা থেকে , ‘সাম্মা ’ ধরনের কাপড় পরিধান করতে , এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের উপর বসতে (কেননা এত সতর প্রকাশ পাওয়ার আশংকা রয়েছে)এবং ফজর ও ‘আসরের পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং-১৮৬৯। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , দু’(দিনের) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ও দু’ (প্রকারের) ক্রয়- বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে , ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং মুলামাসা ও মুনাবাযা (পদ্ধতিতে ক্রয়- বিক্রয়)হতে।
হাদীস নং-১৮৭০। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , এক ব্যাক্তি এসে (‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) -কে বলল যে , এক ব্যাক্তি কোন এক দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার মানত করেছে , আমার মনে হয় সে সোমবারের কথা বলেছিল। ঘটনাক্রমে ঐ দিন ঈদের দিন পড়ে যায়। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন , আল্লাহ তা‘আলা মানত পুরা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই (ঈদের) দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং-১৮৭১। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন , তিনি বলেন , আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভাল লেগেছে। তিনি বলেছেন , স্বামী অথবা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ)পুরুষ ছাড়া কোন নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে। ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) নেই। ফজরের সারতের পরে সূর্যোদয় এবং ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সালাত (নামায/নামাজ) নেই। মসজিদে হারাম , মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে কেউ যেন সফর না করে।
হাদীস নং-১৮৭২। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) ও ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন , যাঁর নিকট কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নাই।
হাদীস নং-১৮৭৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি একই সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা পালনের সুযোগ লাভ করল সে ‘আরাফাতের দিবস পর্যন্ত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। সে যদি কুরবানী না করতে পারে এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন না করে থাকে তবে মিনার দিনগুলোতে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবরাহীম ইবনু সা‘দ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৮৭৪। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে কেউ চাইলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারে।
হাদীস নং-১৮৭৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন , পরে যখন রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা (আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না।
হাদীস নং-১৮৭৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনও এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন এবং ত পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয করা হল তখন ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দেয়া হল , যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।
হাদীস নং-১৮৭৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) হুমায়দ ইবনু ‘আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত , যে বছর মু‘আবিয়া (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করেন সে বছর ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে (মসজিদে নববীর) মিম্বরে তিনি (রাবী) তাঁকে বলতে শুনেছেন যে, হে মদিনাবাসিগণ! তোমাদের ‘আলিমগণ কোথায়? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আজকে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন , আল্লাহ তা‘আলা এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) তোমাদের উপর ফরয করেননি বটে , তবে আমি (আজ) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। যার ইচ্ছা সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করুক যার ইচ্ছা সে পালন না করুক।
হাদীস নং-১৮৭৮। আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে , ইয়াহুদীগণ ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর কেন?) তারা বলল , এ অতি উত্তম দিন , এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন , ফলে এ দিনে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী , এরপর তিনি এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দেন।
হাদীস নং-১৮৭৯। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনকে ইয়াহুদীগণ ঈদ মনে করত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরাও এ দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর।
হাদীস নং-১৮৮০। ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র উপরে অন্য দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)কে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখি নাই এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই )।
হাদীস নং-১৮৮১। মক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া ‘ (রাঃ)থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের এক ব্যাক্তিকে লোকজনের মধ্যে এ মর্মে ঘোষণা দিতে আদেশ করলেন যে , যে ব্যাক্তি খেয়েছে , সে যেন দিনের বাকি অংশে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে আর যে খায় নাই , সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে। কেননা আজকের দিন ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন।


No comments:

Post a Comment