Jan 28, 2020

সহীহ বুখারী, ৭ম অধ্যায়, বিষয়-তায়াম্মুম

হাদীস নং-৩২৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)......... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে কোন এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেনঃ ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তারপর আমি যে উট এ ছিলাম তাকে দাড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পড়ে আছে।
হাদীস নং-৩২৮। মুহাম্মদ ইবনু সিনান ও সা’ঈদ ইবনু নাযর (রহঃ)...... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্তেও তা প্রতিফলিত হয়; (২) সমস্ত যমীন আমার জন্য প্রবিত্র ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের উপযোগি করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মাতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে; (৩) আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি; (৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফা’আতের অধিকার দেওয়া হয়েছে; (৫) সমস্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হতেন কেবল তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।
হাদীস নং-৩২৯। যাকারিয়্যা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)......’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এক সময়ে (তাঁর বোন) আসমা (রাঃ)-এর হার ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (পথিমধ্যে) হারখানা হারিয়ে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটির খোঁজে লোক পাঠালেন। তিনি এমন সময় হারটি পেলেন, যখন তাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বিষয়টি তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে বর্ণনা করেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাআম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। সেজন্য উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) –কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আল্লাহর কসম! আপনি যে কোন অপছন্দনীয় পরিস্থিথির সম্মুখীন হয়েছেন, তাতেই আল্লাহ তা’আলা আপনার ও সমস্ত মুসলমানের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।
হাদীস নং-৩৩০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)......... আবূ জুহাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদিনার নিকটস্থ) ‘বি’রে জামাল’ থেকে আসছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সাথে এক ব্যাক্তির দেখা হল। লোকটি তাঁকে সালাম দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব না দিয়ে দেয়ালের কাছে অগ্রসর হয়ে তাতে (হাত মেরে) নিজ চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করে নিলেন, তারপর সালামের জওয়াব দিলেন।
হাদীস নং-৩৩১। আদম (রহঃ)......... সা'ঈদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবযা তাঁর পিতা [আবদুর রহমান (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে জানতে চাইলঃ একবার আমার গোসলের প্রয়োজন হল অথচ আমি পানি পেলাম না। তখন 'আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) - কে বললেনঃ আপনার কি সেই ঘটনা স্মরণ আছে যে, এক সময় আমরা দু'জন সফরে ছিলাম এবং দু'জনেরই গোসলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। আপনি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন না। আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তারপর আমি ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার জন্য তো এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। এ বলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'হাত মাটিতে মারলেন এবং দু'হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসেহ করলেন।
হাদীস নং-৩৩২। হাজ্জাজ (রহঃ)...... আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আম্মার (রাঃ)-ও এ কথা (যা পূর্বের হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে তা) বর্ণনা করেছেন। শু’বা (রহঃ) নিজের হস্তদ্বয় মাটিতে মেরে মুখের কাছে নিলেন (ফুঁ দিলেন)। তারপর নিজের চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করলেন। নাযর (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-৩৩৩। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)...... ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রহঃ) তাঁর পিতা থকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (‘আবদুর রহমান) ‘উমর (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলেন, আর ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বলেছিলেনঃ আমরা এক অভিযানে গিয়েছিলাম, আমরা উভয়ই জুনুবী হয়ে পড়লাম।
হাদীস নং-৩৩৪। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ)...... আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আম্মার (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) কে বলেছিলেনঃ (আমি তায়াম্মুমের উদ্দেশ্যে) মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বলেছিলেনঃ চেহারা ও হাত দু’টো মাসেহ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
হাদীস নং-৩৩৫। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম) (রহঃ) আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ) –এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বল্লেন, এর পর রাবী পূর্বের হাদিসটি বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-৩৩৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)...... ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা তাঁর পিতা (‘আবদুর রহমান) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আম্মার (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটিতে হাত মারলেন এবং তাঁর চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করলেন।
হাদীস নং-৩৩৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)...... ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে শেষরাতে এক স্থনে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চাইতে মধুর ঘুম আর হতে পারে না। (আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে,) সূর্যের তাপ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সর্বপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহঃ) তাঁদের সবারই নাম নিয়েছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহঃ) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারে জেগে ওঠা ব্যাক্তি ছিলেন ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালে আমরা কেউ তাঁকে জাগাতাম না, যতখন তা তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাঁর উপর কি অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানানেই। ‘উমর (রাঃ) জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যাক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে লাগলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওজর পেশ করলো। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই বা বললেনঃ কোন ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি আনলেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে দেখলেন, এক ব্যাক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেনঃ আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। আথচ পানি নেই। তিনি বললেনঃ পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যাক্তি কে ডাকলেন। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহঃ) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহঃ) তা ভুলে গিয়েছেন। তিনি ‘আলী (রাঃ)-কেউ ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুজে আনতে বললেন। তাঁরা পানির খোজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলা কে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ পানি কোথায়? সে বললোঃ গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার পাত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললোঃ কোথায়? তাঁরা বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট। সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’ (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেনঃ হাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা এখন চল। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। ‘ইমরান (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যাক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কি করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি নেয়া শেষ হল তখন আমাদের মনে হল, মশকগুলো পুরবাপেক্ষা অধিক ভর্তি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁটরিটি রেখে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুম জানো যে, আমার তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা’লাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন। এরপর সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞেসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্যনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশেপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোন ক্ষতি করতেন না। এসব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলাম দাখিল হয়ে গেল।
হাদীস নং-৩৩৮। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ)......... আবূ ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ (জুনুবী) পানি না পেলে কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ’ আমি এক মাস ও যদি পানি না পাই তবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব না। এ ব্যাপারে লোকদের যদি অনুমতি দেই তা হলে তাঁরা একটু শীত বোধ করলেই এরুপ করতে থাকবে। অর্থাৎ তায়াম্মুম করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে উমর (রাঃ)-এর সামনে ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথার তারপর্য কি হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ’ উমর (রাঃ) আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে আমি মনে করি না।
হাদীস নং-৩৩৯।উমর ইবনু হাফস (রহঃ)...... শাকীক ইবনু সালাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তাঁকে আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ ‘আবদুর রহমান। কেউ জুনুবী হলে যদি পানি না পায় তবে কি করবে? তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ পানি না পাওয়া পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে ‘আম্মার (রাঃ) এর কথার উত্তরে আপনি কি বলবেন? তাঁকে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন (তায়াম্মুম করে নেওয়া) তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বললেনঃ তুমি দেখ না উমর (রাঃ) ‘আম্মারের এই কথায় সন্তুষ্ট ছিলেন না? আবূ মূসা (রাঃ) পুনরায় বললেনঃ ‘আম্মারের কথা বাদ দিলেও তায়াম্মুমের আয়াতের কি ব্যাখ্যা করবেন? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কোন উত্তর দিতে পারলেন না। আমরা যদি লোকদের তার অনুমতি দিয়ে দেই তাহলে আশঙ্কা হয়, কারো কাছে পানি ঠাণ্ডা মনে হলেই তায়াম্মুম করবে। রাবী আ’মাশ (রহঃ) বলেনঃ আমি শাকীক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ‘’‘ আবদুল্লাহ (রাঃ) এ কারণে কি তায়াম্মুম অপছন্দ করেছিলেন?’’ তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
হাদীস নং-৩৪০। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ)...... শাকীক (রহঃ) থেকে বরনিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ) ও আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। আবূ মূসা (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বললেনঃ কোন ব্যাক্তির জুনুবী হলে সে যদি এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তাহলে কি সে তায়াম্মুম করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না? শাকীক (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ একমাস পানি না পেলেও সে তায়াম্মুম করবে না। তখন তাঁকে আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে সূরা মায়িদার এ আয়াত সম্পর্কে কি করবেন যে। "পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে" (৫:৬)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জওয়াব দিলেনঃ মানুষকে সেই অনুমতি দিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভবনা রয়েছে যে, সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই লোকেরে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। আমি বললামঃ আপনারা এ জন্যই কি তা অপছন্দ করেন? তিনি জওয়াব দিলেন, হাঁ। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ আপনি কি উমর ইবনু খাত্তব (রাঃ)-এর সম্মুখে ‘আম্মার (রাঃ)-এর এ কথা শোনেন নি যে, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা প্রয়জনে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সফয়ে আমি জুনুবী হয়ে পড়লাম এবং পানি পেলাম না। এজন্য আমি জন্তুর মত মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঘটনাটি বিবৃত করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য তো এতুকুই যথেষ্ট ছিল—এই বলে তিনি দু’হাত মাটিতে মারলেন। তারপর তা ঝেড়ে নিলেন এবং তা দিয়ে তিনি বাম হাতে ডান হাতের পিঠ মাসেহ করলেন কিংবা রাবী বলেছেন, বাম হাতের পিঠ ডান হাতে মাসেহ করলেন। তারপর হাত দুটো দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ আপনি দেখেন নি যে দেখ না উমর (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হন নি? ইয়া’লা (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এবং তিনি শাকীক (রহঃ) থেকে আরো বলেছেন যে , তিনি বললেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে হাযির ছিলাম; আবূ মূসা (রাঃ) বলেছিলেনঃ আপনি ‘উমর (রাঃ) থেকে ‘আম্মারের এ কথা শোনেন নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও আপনাকে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। তখন আমি জুনুবী হয়ে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছিলাম। তারপর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে এ বিষয় তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এই যথেষ্ট ছিল—এ বলে তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং দু’হাত একবার মাসেহ করলেন।
হাদীস নং-৩৪১। আবদান (রহঃ)...... আবূ রাজা’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন আল-খুযা’ঈ (রাঃ) বলেছেন যে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে জামা’আতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে পৃথক দাড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেনঃ হে অমুক! তুমি জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে না কেন? লোকটি বললোঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার গোসলের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু পানি নেই। তিনি বললেনঃ তুমি পবিত্র মাটির ব্যবহার (তায়াম্মুম) করবে। তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট।

No comments:

Post a Comment