হাদীস নং- ১৩১৩। আবূ ‘আসীম যাহ্হাক ইবনু মাখলাক (রাঃ)… ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ) আল্লাহর রাসূল - এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতি দিন ও রাতে পাঁছ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সা’দকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (যাকাত) উসূল করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং- ১৩১৪। হাফ্স ইবনু ‘উমর (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে, তার কি হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তার প্রয়োজন রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেনা, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] বাহ্য (রহঃ) শু’বা (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনু ‘উসমান ও তাঁর পিতা ‘উসমান ইবনু আবদুল্লাহ উভয়ে মূসা ইবনু তালহা (রাঃ) আবূ আইউব (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, (শু’বা, রাবীর নাম বলতে ভুল করেছেন)। আমার আশংকা হয় যে, মুহাম্মদ ইবনু ‘উসমান এর উল্লেখ সঠিক নয়, বরং এখানে রাবীর নাম হবে ‘আমর ইবনু ‘উসমান।
হাদীস নং- ১৩১৫। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মরুবাসী সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্হিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেনা, (পাঁছ ওয়াক্ত) ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি করবনা। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে।
হাদীস নং- ১৩১৬। মূসা দ্দাত (রহঃ) আবূ যুর’আ (রহঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। দেখুন হাদিসঃ ১৩১৫
হাদীস নং- ১৩১৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্হিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদিনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস (যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতিত নির্বিঘ্নে আসতে পারিনা। কাজেই এমন কিছু আমলের নির্দেশ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্হিতদেরকে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হলঃ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একক নির্দেশক) তাঁর হাতের আঙ্গুলী বদ্ধ করেন, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে, (--) শুষ্ক কদু খোলস, (--)সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, (--) খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র, (--), তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে। সুলায়মান ও আবূ নূ’মান (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে -- এরূপ বর্ণনা করেছেন (-- ব্যতীত)।
হাদীস নং- ১৩১৮। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফি‘ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন ‘উমর (রাঃ) [ আবূ বকর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে ] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরূদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে কস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লা ইলাহা ইলল্লাহু বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে, যে কেউ তা বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর)হিসাব-নিকাশ আল্লাহর যিম্মায়। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় আমি যুদ্ধ করবো যারা সালাত (নামায/নামাজ) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো। ‘উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবূ বকর (রাঃ) এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এই দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
হাদীস নং- ১৩১৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) জরীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার উপর বায়‘আত করি।
হাদীস নং- ১৩২০। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফী‘ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করবে, (কিয়ামত দিবসে) সে উট দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করতে আসবে এবং যে ব্যাক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করবে ও শিং দিয়ে আঘাত করবে। উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট (জনসমাগম স্হলে) ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক অনাদাজনিত কারণে শাস্তিস্বরূপ)কাঁধের উপর চিৎকাররত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলে, হে মুহাম্মদ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলবঃ তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমিতো (শেষ পরিণতির কথা) পৌঁছে দিয়েছি।
হাদীস নং- ১৩২১। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ্ব কমড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেনঃ “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথছ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে। ” (৩:১৮০)১৩২২ আহমদ ইবনু শাবীব ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) খালিদ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সাথে বের হলাম। এক মরূবাসী তাঁকে বলল, আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা সোনা-ও রূপা জমা করে রাখে-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করূন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, যে ব্যাক্তি সম্পদ জমা করে রাখে আর এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য রয়েছে শাস্তি- এ তো ছিল যাকাত বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগের কথা।
হাদীস নং- ১৩২২। আহমদ ইবনু শাবীব ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) খালিদ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সাথে বের হলাম। এক মরূবাসী তাঁকে বলল, আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা সোনা-ও রূপা জমা করে রাখে-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করূন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, যে ব্যাক্তি সম্পদ জমা করে রাখে আর এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য রয়েছে শাস্তি- এ তো ছিল যাকাত বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগের কথা।
হাদীস নং- ১৩২৩। ইসহাক ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ উকিয়া (এক উকিয়া চল্লিশ দিরহাম পরিমাণ, ৫ উকিয়া x ৪০= ২০০ দিরহাম সমান) পরিমাণের কম সম্পদের উপর যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওসাক (এক ওসাক ৬০ সা-এর সমান, ৫ ওসাক x ৬০= ৩০০ সা। ১ সা প্রায় ৩ সের ১১ ছটাকের সমান) এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত।
হাদীস নং- ১৩২৪। ‘আলী ইবনু আবূ হাশিম হাশিম (রহঃ)ইয়াযীদ ইবনু ওহ্ব (রহঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাবাযা নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবূ যার (রাঃ)- এর সাথে আমার সাক্ষাত হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এখানে কি কারণে আসলেন? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ায় অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে মু’আবিয়া (রাঃ)-এর সাথে আমার মতানৈক্য হয়ঃ … “ যারা সোনা-ও রূপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না…। ” মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মু’আবিয়া (রাঃ) ‘উসমান (রাঃ) এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদিনায় ডেকে পাঠান। মদিনায় পৌছলে আমাকে দেখতে লোকেরা এত ভিড় করলো যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখেনি। ‘উসমান (রাঃ) এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বললেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদিনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশ লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন তবুও আমি তাঁর কথা শুনবো এবং আনুগত্য করব।
হাদীস নং- ১৩২৫। ‘আয়্যাশ ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ)আহনাফ ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রূক্ষ চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বলল, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধেঁর পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্থনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসলো। আমিও তাঁর অনুগমন করলাম ও তাঁর কাছে বসলাম। এবং আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বললেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলল, তিনি হলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । [ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন] হে আবূ যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেনঃ তিনটি দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণস্তূপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। [ আবূ যার (রাঃ)বলেন ] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করবো না।
হাদীস নং- ১৩২৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)…থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কেবল মাত্র দু’ধরনের ব্যাক্তির ঈর্ষা রাখা যেতে পারে, একজন এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায়পথে তা ব্যয় করার মত ক্ষমতাবান বানিয়েছেন। অপরজন এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা দেন ও অন্যান্যকে তা শিক্ষা দেন।
হাদীস নং- ১৩২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সা’দকা করবে, (আল্লাহ তা কবূল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবূল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যানারথে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সা’দকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। সুলায়মান (রহঃ) ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ‘ আবদুর রহমান (রহঃ)- এর অনুসরণ করেছেন এবং ওয়ারকা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এবং মুসলিম ইবনু আবূ মারয়াম, যায়দ ইবনু আসলাম ও সুহায়ল (রহঃ) আবূ সালিহ (রহঃ)-এর মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
হাদীস নং- ১৩২৮। আদম (রহঃ) হারিসা ইবনু ওহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেত শুনেছি, তোমরা সা’দকা কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সা’দকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহন করার মত কাউকে পাবে না। (যাকে দাতা দেওয়ার ইচ্ছা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহন করতাম। আজ আমার আর কোন প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং- ১৩২৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তার সা’দকা কে গ্রহণ করবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়বে। যাকেই দান করতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই।
হাদীস নং- ১৩৩০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, এমন সময় দু’জন সাহাবী আসলেন, তাদের একজন দারিদ্র্যের অভিযোগ করছিলেন আর অপরজন রাহাজানির অভিযোগ করছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাহাজানির অবস্থা এই যে, কিছু দিন পর এমন সময় আসবে যখন কাফেলা মক্কা পর্যন্ত বিনা পাহারায় পৌছে যাবে। আর দারিদ্র্যের অবস্থা এই যে, তোমাদের কেউ সা’দকা নিয়ে ঘোরাফিরা করবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। এমন সময় না আসা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। তারপর (বিচার দিবসে) আল্লাহর নিকট তোমাদের কেউ এমন ভাবে খাড়া হবে যে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকবে না বা কোন ব্যাখ্যাকারী দোভাষীও থাকে না। এরপর তিনি বলবেন, আমি কি তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরণ করিনি? সে অবশ্যই বলবে হাঁ, তখন সে ব্যাক্তি ডান দিকে তাকিয়ে শুধু আগুন দেখতে পাবে, তেমনিভাবে বাম দিকে তাকিয়েও আগুন দেখতে পাবে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের উচিত এক টুকরা খেজুর (সা’দকা) দিয়ে হলেও যেন আগুন থেকে আত্মরক্ষা করে। যদি কেউ তা না পায় তবে যেন উত্তম কথা দিয়ে হলেও।
হাদীস নং- ১৩৩১। মুহাম্মদ ইবনু ‘আলা (রাঃ)… আবূ মূসা (আশ’আরী) (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের উপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা সা’দকার সোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একজন গ্রহীতাও পাবে না। পুরূষের সংখ্যা হরাস পাওয়ায় এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরূষের অনুগমন করবে এবং তার আশ্রয়ে আশ্রিতা হবে।
হাদীস নং- ১৩৩২। আবূ কুদামা উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) আবূ মাস’ঊদ (রাঃ)… থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সা’দকার আয়াত অবতীর্ণ হল তখন আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। এক ব্যাক্তি এসে প্রচুর মাল সা’দকা করলো। তারা (মুনাফিকরা) বলতে লাগল, এ ব্যাক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে, আর এক ব্যাক্তি এসে সা’ পরিমাণ দান করলে তারা বললো, আল্লাহ তো এ ব্যাক্তির এক সা’ থেকে অমুখাপেক্ষী। এ প্রসংগে অবতীর্ণ হয়ঃ মু’মিনগণের মধ্যে যারা নিজ ইচ্ছায় সা’দকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না তাদেরকে যারা দোষারোপ করে (৯:৭৯)
হাদীস নং- ১৩৩৩। সা’ঈদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সা’দকা করতে আদেশ করলেন তখন আমাদের কেউ বাজারে গিয়ে পারিশ্রমকের বিনিময়ে বোঝা বহন করে মুদ পরিমাণ অর্জন করত (এবং তা থেকেই সা’দকা করত) অথচ আজ তাদের কেউ লাখপতি।
হাদীস নং- ১৩৩৪। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) … ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সা’দকা করে হলেও।
হাদীস নং- ১৩৩৫। বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু’টি শিশু কন্যা সংগে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিলনা। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেনঃ যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় তবে সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে।
হাদীস নং- ১৩৩৬। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ -এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন সা’দকার সাওয়াব বেশী পাওয়া যায়? তিনি বললেনঃ কৃপণ অবস্হায় তোমার সা’দকা করা যখন তুমি দারিদ্রের আশংকা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখিবে। সা’দকা করতে দেরী করবে না। অবশেষে যখন প্রণবায়ু কন্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে যাচ্ছে।
হাদীস নং- ১৩৩৭। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন নাবী -সহধর্মিণী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, আমাদের মধ্য থেকে সবার আগে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হবে? তিনি বললেনঃ যার হাত দীর্ঘতর। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির সাহায্যে হাত মেপে দেখতে লাগলেন। সাওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে দীর্ঘতর বলে প্রমাণিত হল। পরে আমরা অনুধাবন করতে পারলাম যে, সা’দকার আধিক্য তাঁর হাত দীর্ঘ করে দিয়েছিল। আমাদের মাঝে তিনি সবার আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হন। তিনি সা’দকা করা ভালোবাসতেন। (নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের দৃষ্টিতে . যায়নব (রাঃ) সবার আগে ইন্তেকাল করেন)।
হাদীস নং- ১৩৩৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে) এক ব্যাক্তি বলল, আমি কিছু সা’দকা করব। সা’দকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, চোরকে সা’দকা দেওয়া হয়েছে। এতে সে বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সা’দকা করব। সা’দকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, রাতে এক ব্যভিচারিণীকে সা’দকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সা’দকা) ব্যভিচারিণীর হাতে পৌঁছল। আমি অবশ্যই সা’দকা করব। এরপর সে সা’দকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যাক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, ধনী ব্যাক্তিকে সা’দকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমর সা’দকা) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যাক্তির হাতে গিয়ে পড়লো! পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হল, তোমার সা’দকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে, তোমার সা’দকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে সম্ভবত এজন্য যে, সে তার ব্যভিচার থেকে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যাক্তি তোমার সা’দকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সা’দকা করবে।
হাদীস নং- ১৩৩৯। মূহাম্মদ ইবনু ইউসুপ (রহঃ) মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়‘আত করলাম। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচার প্রার্থী হই। তা হল, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণমুদ্রা সা’দকা করার নিয়্যাতে মসজিদে এক ব্যাক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যাক্তির নিকট থেকে তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলনা। বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেনঃ হে ইয়াযীদ! তুমি যে নিয়্যাত করেছ, তা তুমি পাবে আর হে মা‘ন! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই।
হাদীস নং- ১৩৪০। মূসা দ্দাত (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবেনা সে দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১। ন্যায়পরায়ণ শাসক। ২। যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থেকে যৌবনে উপনীত হয়েছে। ৩। যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে। ৪। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দু‘ব্যাক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। ৫। এমন ব্যাক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬। যে ব্যাক্তি গোপনে এমনভাবে সা’দকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জনতে পারেনা। ৭। যে ব্যাক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।
হাদীস নং- ১৩৪১। ‘আলী ইবনু জা’দ (রহঃ) … হারিসা ইবনু ওহাব খুযা’য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা সা’দকা কর। কেননা অচিরেই তোমাদের উপর এমন সময় আসবে, যখন মানুষ সা’দকার মাল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন গ্রহীতা বলবে, গতকাল নিয়ে এলে অব্শ্যই গ্রহণ করতাম কিন্তু আজ এর কোন প্রয়োজন আমার নেই।
হাদীস নং- ১৩৪২। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্ত্রী যদি তার ঘর থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে খাদ্যদ্রব্য সা’দকা করে তবে এ জন্য সে সাওয়াব পাবে। আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সাওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সাওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের সাওয়াবের কোন কম হবেনা।
হাদীস নং- ১৩৪৩। ‘আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সা’দকা করা উত্তম। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে, প্রথমে তাদেরকে দিবে।
হাদীস নং- ১৩৪৪। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উপরের হাত (দাতার হাত) নীচের হাত (গ্রহীতার হাত) অপেক্ষা উত্তম। প্রথমে তাদেরকে দিবে যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সা’দকা করা উত্তম। যে ব্যাক্তি (পাপ ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। ওহায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
হাদীস নং- ১৩৪৫। আবূ নু‘মাম (রহঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বরের উপর থাকা অবস্হায় সা’দকা করা ও ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেনঃ উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত ভিক্ষুকের।
হাদীস নং- ১৩৪৬। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উকবা ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দেরী না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাঁকে বলা হল, তখন তিনি বললেনঃ ঘরে সা’দকার একখন্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
হাদীস নং- ১৩৪৭। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন বের হলেন এবং দু’রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এর আগে ও পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। এরপর তিনি বিলাল (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন। তাদের উপদেশ দিলেন এবং সা’দকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও হাতের কংকন ছুঁড়ে মারতে লাগলেন।
হাদীস নং- ১৩৪৮। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেনঃ তোমরা সুপারিশ কর সাওয়াব পাবে, আল্লাহ যেন তাঁর ইচ্ছা তাঁর রাসূল) -এর মুখে চূড়ান্ত করেন।
হাদীস নং- ১৩৪৯। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি এরূপ করলে তোমার জন্য (আল্লাহর দান) (সম্পদ কমে যাওয়ার আশংকায় সা’দকা দেওয়া বন্ধ করবে না) বন্ধ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং- ১৩৫০। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ‘আবদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, [পূর্বোক্ত সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন] তুমি (সম্পদ) জমা করে রেখো না, (এরূপ করলে) আল্লাহ তোমার রিযক বন্ধ করে দিবেন।
হাদীস নং- ১৩৫১। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রাহীম (রহঃ) আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপস্হিত হলে তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি সম্পদ জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহ তোমা থেকে তা আটকে রাখবেন। কাজেই সাধ্যানুসারে দান করতে থাক।
হাদীস নং- ১৩৫২। কুতায়বা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা সম্পর্কিত হাদীস স্মরণ রেখেছ? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি আরয করলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সে ভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তুমি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে ] বড় দুঃসাহসী ছিলে, তিনি কিভাবে বলেছেন (বলত)? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদীসটি হলঃ) মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী নিয়ে ফিতনায় পতিত হবে আর সালাত (নামায/নামাজ), সা’দকা ও নেক কাজ সেই ফিতনা মিটিয়ে দেবে। সুলায়মান [ অর্থাৎ ‘আমাশ (রহঃ)] বলেন, আবূ ওয়াইল কোন কোন সময় (সালাত (নামায/নামাজ) (সা’দকা) এরপর (সৎকাজ শব্দের স্হলে)(সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) বলতেন। ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি এধরনের ফিতনার কথা জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সাগরের ঢেউয়ের ন্যায় প্রবল বেগে ছুটে আসবে। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার জীবনকালে ঐ ফিতনার কোন আশংকা নেই। সেই ফিতনা ও আপনার মাঝে বদ্ধ দরজা রয়েছে। ‘উমর (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, দরজা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে না কি খুলে দেওয়া হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, না, বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, দরজা ভেঙ্গে দেওয়া হলে কোন দিন তা আর বন্ধ করা সম্ভব হবেনা। তিনি বলেন, আমি বললাম, সত্যই বলেছেন। আবূ ওয়াইল (রাঃ) বলেন, দরজা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? এ কথা হুযায়ফা (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করে জানতে আমরা কেউ সাহসী হলামনা। তাই প্রশ্ন করতে মাশরূককে অনুরোধ করলাম। মাশরূক (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) কে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেনঃ দরজা হলেন ‘উমর (রাঃ)। আমরা বললাম আপনি দরজা বলে যাকে উদ্দেশ্য করেছেন, ‘উমর (রাঃ) কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, আগামীকালের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত (তেমনি নিঃসন্দেহে তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন )। এর কারণ হল, আমি তাঁকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছি, যাতে কোন ভূল ছিলনা।
হাদীস নং- ১৩৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হাকীম ইবনু হাযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ঈমান আনয়নের পূর্বে (সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে) আমি সা’দকা প্রদান, দাসমুক্ত করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ন্যায় যত কাজ করেছি সে গুলোতে সওয়াব হবে কি? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যে সব ভালো কাজ করেছ তা নিয়েই ইসলাম গ্রহন করেছ (তুমি সেসব কাজের সওয়াব পাবে)।
হাদীস নং- ১৩৫৪। কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্ত্রী তার স্বামীর খাদ্য সামগ্রী থেকে বিপর্যয়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত সা’দকা করলে সে সা’দকা করার সওয়াব পাবে, উপার্জন করার কারণে স্বামীও এর সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে।
হাদীস নং- ১৩৫৫। মুহাম্মদ ইবনু ‘আলা’ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কতৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সা’দকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি (বাস্তবায়িত করে) শব্দের স্হলে (আদায় করে) শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সা’দকা দানকারী হিসাবে গণ্য।
হাদীস নং- ১৩৫৬। আদম ও ‘উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফাসা’দর উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীর ঘর থেকে কাউকে কিছু সা’দকা করলে বা আহার করালে স্ত্রী এর সওয়াব পাবে, স্বামীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। স্বামী উপার্জন করার কারণে আর স্ত্রী দান করার কারণে সওয়াব পাবে।
হাদীস নং- ১৩৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সূত্রে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ফাসা’দর উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে সা’দকা করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
হাদীস নং- ১৩৫৮। ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধংস করে দিন।
হাদীস নং- ১৩৫৯। মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কৃপণ ও সা’দকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু’ব্যাক্তির মত যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। অপর সনদে আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কৃপণ ও সা’দকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু’ব্যাক্তির মত, যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে যা তাদের বুক থেকে কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাতা ব্যাক্তি যখন দান করে তখন বর্মটি তার সম্পূর্ণ দেহ পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যায়। এমনকি হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে ও (পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলন্ত বর্ম) পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যাক্তি যখন যৎসামান্যও দান করতে চায়, তখন যেন বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্হানে সেটে যায়, সে তা প্রশস্ত করতে চেষ্টা করলেও তা প্রশস্ত হয়না। হসান ইবনু মুসলিম (রহঃ) তাউস (রহঃ) থেকে ইবনু তাউস (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। আর হানযালা (রহঃ) তাউস (রহঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন। লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (ঢাল) শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
হাদীস নং- ১৩৬০। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের সা’দকা করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়াল্লাহ! কেউ যদি সা’দকা দেওয়ার মত কিছু না পায়? (তিনি উত্তরে) বললেনঃ সে ব্যাক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সা’দকাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন যদি এরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেনঃ কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। তারা বললেনঃ যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেনঃ এ অবস্হায় সে যেন নেক আমল করে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সা’দকা বলে গণ্য হবে।
হাদীস নং- ১৩৬১। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … ঊম্মে ‘আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নুসায়বা নাম্নী আনসারী মহিলার জন্য একটি বকরী (সা’দকা স্বরূপ) পাঠানো হল। তিনি বকরীর কিছু অংশ ‘আয়িশা (রাঃ)-কে (হাদিয়া স্বরূপ) পাঠিয়ে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কাছে (আহার্য)কিছু আছে কি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, নুসায়বা কতৃক প্রেরিত সেই বকরীর গোসত ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেনঃ তাই নিয়ে এসো, কেননা বকরী (সা’দকা) যথাস্হানে পৌঁছে গেছে (সা’দকা গ্রহীতার নিকট)।
হাদীস নং- ১৩৬২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ যাওদ (পাঁচটি)উটের কম সংখ্যকের উপর যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়া এর কম পরিমাণ রূপার উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসক এর কম পরিমাণ উৎপন্ন দ্রব্যের ঊপর সা’দকা (উশর/ নিসফে উশর) নেই।
হাদীস নং- ১৩৬৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি শুনেছি। ** হাদিস ১৩৬২ দেখুন।
হাদীস নং- ১৩৬৪। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর (রাঃ) আনাস (রাঃ) এর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসুল -কে যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন সে সম্পর্কে লিখে জানালেন , যে ব্যাক্তির উপর যাকাত হিসাবে বিনত্ মাখায (যে উটের বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে) ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে তা নেই বরং বিনত্ লাবূন (যে উটের বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়েছে) রয়েছে, তা হলে তা-ই গ্রহন করা হবে। এমতাবস্হায় আদায়কারীর যাকাত দাতাকে কিছু দিতে হবেনা।
হাদীস নং- ১৩৬৫। মুআম্মাল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুত্বা প্রদানের পূর্বেই (ঈদের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, এরপর বুঝতে পারলেন যে, (সকলের পিছনে থাকা বিধায়) মহিলাগণকে খুত্বার আওয়াজ পৌঁছাতে পারেননি। তাই তিনি মহিলাগণের নিকট আসলেন, তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ) ছিলেন। তিনি একখন্ড বস্ত্র প্রসারিত করে ধরলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উপদেশ দিলেন ও সা’দকা করতে আদেশ করলেন। তখন মহিলাগণ তাদের (অলংকারাদি) ছুঁড়ে মারতে লাগলেন। (রাবী) আইয়ূব (রহঃ) তার কান ও গলার দিকে ইংগিত করে (মহিলাগণের অলংকারাদি দান করার বিষয়) দেখালেন।
হাদীস নং- ১৩৬৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট লিখে পাঠান, যাকাত-এর (পরিমাণ কম-বেশী হওয়ার) আশংকায় পৃথক (প্রাণী)- গুলোকে একত্রিত করা যাবেনা এবং একত্রিতগুলো পৃথক করা যাবেনা।
হাদীস নং- ১৩৬৭। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা আবূ বকর (রাঃ) তা তাকে লিখে জানালেন এক অংশীদার অপর অংশীদারের নিকট থেকে তার প্রাপ্য আদায় করে নিবে।
হাদীস নং- ১৩৬৮। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুঈন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমার তো বড় সাহস! হিজরতের ব্যপারটি কঠিন, বরং যাকাত দেওয়ার মত তোমার কোন উট আছে কি? সে বলল, জী হ্যাঁ, আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাগরের ওপারে হলেও (যেখানে থাক) তুমি আমল করবে। তোমার সামান্যতম আমলও আল্লাহ নষ্ট করবেন না।
হাদীস নং- ১৩৬৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল) কে যে বিধান দিয়েছেন তা লিখে পাঠানঃ যে ব্যাক্তির উপর উটের যাকাত হিসাবে জাযা‘আ (যে উটের বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে) ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে জাযা‘আ নেই বরং তার নিকট হিককা (যে উটের বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়েছে) তখন হিককা গ্রহন করা হবে। এর সাথে সম্ভব হলে (পরিপুরকরূপে) দু’টি বকরী দিবে, অথবা বিশটি দিরহাম দিবে। আর যার উপর যাকাত হিসাবে হিককা ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে হিককা নেই বরং জাযা‘আ রয়েছে, তখন তার থেকে জাযা‘আ গ্রহণ করা হবে। আর যাকাত উসূলকারী (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) মালিককে বিশটি দিরহাম বা দু’টি বকরী দিবে। যার উপর হিককা ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট বিনতে লাবূন রয়েছে, তখন বিনতে লাবূনই গ্রহণ করা হবে। তবে মালিক দু’টি বকরী বা বিশটি দিরহাম দিবে। আর যার উপর বিনতে লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে হিককা রয়েছে, তখন তার থেকে হিককা গ্রহণ করা হবে এবং আদয়কারী মালিককে বিশটি দিরহাম বা দু’টি বকরী দিবে। আর যার উপর বিনতে লাবূন (যে উটের বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়েছে) ফরয হয়েছে, কিন্তু তার নিকট তা নেই বরং বিনতে মাখায (যে উটের বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে) রয়েছে, তবে তাই গ্রহন করা হবে, অবশ্য মালিক বিশটি দিরহাম বা দু’টি বকরী দিবে।
হাদীস নং- ১৩৭০। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মূসান্না আনসারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে বাহরাইন পাঠানোর সময় এই বিধানটি তাঁর জন্য লিখে দেনঃ বিসমিল্লাহীর রাহমানির রাহীম। এটাই যাকাতের নিসাব যা নির্ধারণ করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রতি এবং যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল) কে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের মধ্যে যার কাছ থেকে নিয়মানুযায়ী চাওয়া হয়, সে যেন তা আদায় করে দেয় আর তার চেয়ে বেশী চাওয়া হলে তা যেন আদায় না করে। চব্বিশ ও তার চাইতে কম সংখ্যক উটের যাকাত বকরী দ্বারা আদায় করা হবে। প্রতি পাঁচটি উটে একটি বকরী এবং উটের সংখ্যা পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত হলে একটি মাদী বিনতে মাখায (যে উটের বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে)। ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি মাদী বিনতে লাবূন (যে উটের বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়েছে)। ছয়চল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত ষাঁড়ের পেলযোগ্য একটি হিককা (যে উটের বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়েছে) একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জাযা‘আ (যে উটের বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে) ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত দু’টি বিনতে লাবূন, একানব্বইটি থেকে একশ’ বিশ পর্যন্ত ষাঁড়ের পেলযোগ্য দু’টি হিককা। সংখ্যায় একশ’ বিশের অধিক হলে (অতিরিক্ত) প্রতি চল্লিশটিতে একটি করে বিনতে লাবূন এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটিতে একটি করে হিককা। যার চারটির বেশী উট নেই, সেগুলোর উপর কোন যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু যখন পাঁচে পৌঁছে তখন একটি বকরী ওয়াজিব। আর বকরীর যাকাত সম্পর্কেঃ সায়েমা বকরী চল্লিশটি থেকে একশ’ বিশটি পর্যন্ত একটি বকরী। এর বেশী হলে দু’শটি পর্যন্ত দু’টি বকরী। দু’শর অধিক হলে তিনশ’ পর্যন্ত তিনটি বকরী। তিনশ’র অধিক হলে প্রতি একশ’ তে একটি করে বকরী। কারো সায়েমা বকরীর সংখ্যা চল্লিশ থেকে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। তবে স্বেচ্ছায় দান করলে তা করতে পারে। রূপার যকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। একশ নব্বই দিরহাম হলে তার যাকাত নেই, তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দান করলে করতে পারে।
হাদীস নং- ১৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূল) এর প্রতি যাকাতের যে বিধান দিয়েছেন তা আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট লিখে পাঠান তাতে রয়েছেঃ অধিক বয়সে দাঁত পড়া বৃদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ বকরী এবং পাঁঠা যাকাত হিসাবে গ্রহণ করা যাবেনা, তবে উসূলকারী যা ইচ্ছা করেন।
হাদীস নং- ১৩৭২। আবূল ইয়ামান ও লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন আল্লাহর কসম! তারা যদি যাকাতের ঐ রূপ একটি ছাগল ছানাও দিতে অস্বীকার করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দিত, তবুও তাদের বিরুদ্ধে যাকাত না দেওয়ার কারণে আমি লড়াই করব। উমর (রাঃ) বলেন, আমি স্পষ্ট বুঝেছি যে, যুদ্ধের ব্যপারে আল্লাহ আবূ বকরের হৃদয় খুলে দিয়েছেন, তাই বুঝলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
হাদীস নং- ১৩৭৩। উমাইয়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয ইবনু জাবাল) (রাঃ) কা ইয়ামনের শাসনকর্তা হিসাবে পাঠান, তখন বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাব লোকদের কাছে যাচ্ছ। কাজেই প্রথমে তাদের আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদেরকে তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-এরাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিয়েছেন। যখন তারা তা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের স ম্পদ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।
হাদীস নং- ১৩৭৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত নেই। পাঁচ ওকিয়ার কম পরিমাণ রূপার যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই।
হাদীস নং- ১৩৭৫। ‘উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তিনি বললেনঃ কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ (বা তিনি বললেন) কসম সেই সত্তার, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, অথবা অন্য কোন শব্দে শপথ করলেন, উট, গরু বা বকরী থাকা সত্তেও যে ব্যাক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামতের দিন উপস্হিত করা হবে এবং তাকে পদপিষ্ট করবে এবং শিং দিয়ে গুঁতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকবে। হাদীসটি বুকায়র (রহঃ) আবূ সালেহ (রহঃ)-এর মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং- ১৩৭৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সব চাইতে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পূণ্য লাভ করবেনা (৩:৯২) তখন আবূ তালহা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ বলছেনঃ তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পূণ্য লাভ করবেনা। আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সা’দকা করা হল, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার কাছে সঞ্চয়রূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে ধন্যবাদ এ হচ্ছে লাভজমক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজমক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বন্টন করে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তাই করব। তারপর তানা তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বন্টন করে দিলেন। রাবী রাওহ (রহঃ) --- শব্দে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। আর রাবী ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ও ইসমা‘ঈল (রহঃ) মালিক (রহঃ) থেকে --- শব্দ বলেছেন।
হাদীস নং- ১৩৭৭। ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সা’দকা দেওয়ার নির্দশ দিলেন আর বললেনঃ লোক সকল! তোমরা সা’দকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেনঃ মহিলাগণ তোমরা সা’দকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এর কারণ কি? তিনি বললেনঃ তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপূর্ণ হওয়া সত্তেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনু মাস’উদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব? বলা হল, ইবনু মাস’উদের স্ত্রী। তিনি বললেনঃ হাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেওয়া হল। তিনি বললেন, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়াল্লাহ আজ আপনি সা’দকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সা’দকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাস’উদ (রাঃ) মনে করেন, আমার এ সা’দকায় তাঁর এবং তাঁ সন্তানদেরই হক বেশী। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সা’দকায় অধিক হক্দার।
হাদীস নং- ১৩৭৮। আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই।
হাদীস নং- ১৩৭৯। মূসা দ্দাত ও সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার গোলাম ও ঘোড়ার কোন যাকাত নেই।
হাদীস নং- ১৩৮০। মু‘আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেন আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশংকা করছি তা হল এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেওয়া হবে। এক সাহাবী বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কল্যাণ কি কখনও অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরব রইলেন। প্রশ্নকারীকে বলা হল, তোমার কি হয়েছে? তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলছ, কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাঁর ঘাম মুছলেন এবং বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনও অকল্যাণ বয়ে আনেনা। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত (ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে এবং পুনরায় চরে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হল আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এ সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মূসা ফিরকে দান করে অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যাক্তি এই সম্পদ অন্যায় ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। কিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।
হাদীস নং- ১৩৮১। ‘উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ) (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (রাবী আ‘মাশ (রহঃ) বলেন,)আমি ইবরাহীম (রহঃ) এর সাথে এ হাদীসের আলোচনা করলে তিনি আবূ ‘উবায়দা সূত্রে ‘আমর ইবনু হারিস (রহঃ) এর মাধ্যমে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) থেকে হুবহু বর্ণনা করেন। তিনি [যায়নাব (রাঃ)] বলেন, আমি মসজিদে ছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম তিনি বলছেনঃ তোমরা সা’দকা দাও যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়। যায়নাব (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও তাঁর পোষ্য ইয়াতীমের প্রতি খরচ করতেন। তখন তিনি আবদুল্লাহকে বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জেনে এসো যে, তোমার প্রতি এবং আমার পোষ্য ইয়াতীমদের প্রতি খরচ করলে আমার পক্ষ থেকে সা’দকা আদায় হবে কি? তিনি [ইবনু মাস‘উদ (রাঃ)] বললেন, বরং তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জেনে এসো। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তাঁর দরজায় আরো একজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। তখন বিলাল (রাঃ) কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞাসা করুন, স্বামী ও আপন (পোষ্য) ইয়াতীমের প্রতি সা’দকা করলে কি আমার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে? এবং এ কথাও বলেছিলাম যে, আমাদের কথা জানাবেননা। তিনি প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কে? বিলাল (রাঃ) বললেন যায়নাব। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন যায়নাব? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আবদুল্লাহর স্ত্রী। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দু’টি সাওয়াব রয়েছে, আত্মীয়কে দেওয়ার সাওয়াব আর সা’দকা দেওয়ার সাওয়াব।
হাদীস নং- ১৩৮২। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আমার স্বামী) আবূ সালমার সন্তান, যারা আমারও সন্তান, তাদের প্রতি ব্যয় করলে আমার সাওয়াব হবে কি? তিনি বললেন, তাদের প্রতি ব্যয় কর। তাদের প্রতি ব্যয় করার সাওয়াব তুমি অবশ্যই পাবে।
হাদীস নং- ১৩৮৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিলে বলা হল, ইবনু জামীল, খালিদ ইবনু ওয়ালিদ ও ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তলিব (রাঃ) যাকাত প্রদানে অস্বীকার করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবনু জামীলের যাকাত না দেওয়ার কারণ এ ছাড়া কিছু নয় যে, সে দরিদ্র ছিল, পরে আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রাসূল) -এর বরকতে সম্পদশালী হয়েছে। আর খালিদের ব্যাপার হল তোমরা খালিদের উপর অন্যায় করেছ, কারণ সে তার বর্ম ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে আবদ্ধ রেখেছে। আর ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তলিব (রাঃ) তো আল্লাহর রাসূল -এর চাচা। তাঁর যাকাত তাঁর জন্য সা’দকা এবং সমপরিমাণও তাঁর জন্য সা’দকা। ইবনু আবূয্ যিনাদ (রহঃ) থেকে হাদীসের শেষাংশে ‘সা’দকা’ শব্দের উল্লেখ করেননি। ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আ‘রাজ (রহঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদীস নং- ১৩৮৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কিছুসংখ্যক আনসারী সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে, যে যাঞ্ছা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যাক্তি ধৈর্য ধারন করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চাইতে উত্তম ও ব্যাপক কোন নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।
হাদীস নং- ১৩৮৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে যাঞ্ছা করার চাইতে অনেক ভাল, চাই সে দিক বা না দিক।
হাদীস নং- ১৩৮৬। মূসা (রহঃ), যুবাইর ইবনু ‘আওয়াম (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ রশি নিয়ে তার পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রি করা, ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাঞ্ছা করার অপমান থেকে) রক্ষা করেন। তা মানুষের কাছে সাওয়াল করার চাইতে উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক।
হাদীস নং- ১৩৮৭। ‘আবদান (রহঃ) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেনঃ হে হাকীম, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যাক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যাক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয়না। যেন সে এমন ব্যাক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুদা মেটেনা। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সাওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্হ করব না। এরপর আবূ বকর (রাঃ) হাকীম (রাঃ)-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ থেকে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর ‘উমর (রাঃ) (তাঁর যুগে) তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাঁর কাছ থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, মুমিনগণ! হাকীম (রাঃ) এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাঁর কাছে এই গনীমত থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। (সত্য সত্যই) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর হাকীম (রাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্হ করেন নি।
হাদীস নং- ১৩৮৮। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চাইতে বেশী অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরের লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি যাঞ্ছাকারীও নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করবে। এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করবেনা।
হাদীস নং- ১৩৮৯। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সবসময় মানুষের কাছে চাইতে থাকে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্হিত হবে যে, তার চেহারায় কোন গোশত থাকবেনা। তিনি আরো বলেনঃ কায়ামতের দিন সূর্য তাদের অতি কাছে আসবে, এমনকি ঘাম কানের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছবে। যখন তারা এই অবস্হায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে আদম (‘আ)-এর কাছে, তারপর মূসা (‘আ)-এর কাছে, তারপর মুহাম্মদ এর কাছে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) লায়স (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু আবূ জা‘ফর (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি যেতে যেতে জান্নাতের ফটকের কড়া ধরবেন। সেদিন আল্লাহ তাঁকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছে দিবেন। হাসরের ময়দানে সমবেত সকলেই তাঁর প্রশংসা করবে। রাবী মু‘আল্লা (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যাঞ্ছা করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং- ১৩৯০। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যাক্তি প্রকৃত মিসকীন নয়, যাকে এক দু’লোকমা ফিরিয়ে দেয় (যথেষ্ট হয়) বরং সে-ই প্রকৃত মিসকীন যার কোন সম্পদ নেই, অথচ সে (চাইতে) লজ্জাবোধ করে অথবা লোকদেরকে আঁকড়ে ধরে সাওয়াল করেনা।
হাদীস নং- ১৩৯১। ইয়া‘কূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শা‘বি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুগীরা ইবনু শু‘বা (রহঃ)-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) মুগীরা ইবনু ইবনু শু‘বা (রাঃ)-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানোান। তিনি তাঁর কাছে লিখলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন, (১) অনর্থক কথাবার্তা, (২) সম্পদ নষ্ট করা এবং (৩) অত্যধিক সাওয়াল করা।
হাদীস নং- ১৩৯২। মুহাম্মদ ইবনু গুরাইর যুহরী (রহঃ) সা‘দ ইবনু আবূ ওক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তিকে কিছুই দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাদের মধ্যে সব চাইতে উত্তম। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল? আমিতো তাকে অবশ্যই মু’মিন বলে মনে করা। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম (বল)। সা’দ (রহঃ) বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারনা প্রবল হয়ে উঠল আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল? আল্লাহর কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারনা প্রবল হয়ে উঠল আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কি হল? কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলে মনে করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অথবা মুসলিম! এভাবে তিনবার বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি একজনকে দিয়ে থাকি অথচ অন্য ব্যাক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় এই আশংকায় যে, তাকে উপুড করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অপর সনদে ইসমা‘ঈল ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এভাবে বলতে শুনেছি, তিনি হাদীসটি বর্ণনা প্রসংগে বলেছেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে হাত রাখলেন, এরপর বললেন, হে সা‘দ অগ্রলর হও। আমিতো এক ব্যাক্তিকে দিয়ে থাকি…। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, --- অর্থ উল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে। --- আরবী বাগধারা অনুসারে --- থেকে গৃহীত হয়েছে অর্থাৎ কর্তার কর্ম যখন কারো প্রতি না বর্তায় তখনই এরূপ বলা হয়ে থাকে। আর যদি কর্ম কারোর উপর বর্তায়, তখন বলা হয় -- আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, সালিহ ইবনু ফায়সাল (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বয়সে বড় ছিলেন আর তিনি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সাক্ষাত পেয়েছেন।
হাদীস নং- ১৩৯৩। ইসমা‘ঈল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয়, যে মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু’লোকমা অথবা এক-দু’টি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যাক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটতে পারে এবং তার অবস্হা সেরূপ বোঝা যায়না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাঞ্ছা করে বেড়ায়না।
হাদীস নং- ১৩৯৪। ‘উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা বের হয়, (রাবী বলেন) আমার ধারনা যে, তিনি বলেছেন, পাহাড়ের দিকে তারপর লাকড়ী সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে তা তার পক্ষে লোকের কাছে যাঞ্ছা করার চাইতে উত্তম।
হাদীস নং- ১৩৯৫। সাহল ইবনু বাক্কার (রহঃ) আবূ হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে তাবূকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিল কুরা নামক স্হানে পৌঁছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্হিত ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দশ ওসাক পরিমাণ আন্দাজ করলেন। তারপর মহিলাকে বললেনঃ ঊৎপন্ন ফলের হিসাব রেখো। আমরা তাবূক পৌঁছলে, তিনি বললেনঃ সাবধান! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার ঊট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ ঊট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হতে লাগল। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে তায় নামক পর্বতে নিক্ষেপ করল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি সাদা খচ্চর ও চাঁদর হাদিয়া দিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। (ফেরার পথে) ওয়াদিল কুরা পৌঁছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে? মহিলা বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুমিত পরিমাণ, দশ ওসাকই হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি দ্রুত মদিনায় পৌঁছতে ইচ্ছুক। তোমাদের কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে জলদি কর। সাহল ইবনু বাক্কার (রহঃ) এমন একটি বাক্য বললেন, যার অর্থ, যখন তিনি মদিনা দেখতে পেলেন তখন বললেনঃ ইয়া ত্বাবা (মদিনার অপর নাম)। এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখতে পেলেন তখন বললেনঃ এই পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি? তারা বললেন, হাঁ। তিনি বললেনঃ বনূ নাজ্জার গোত্র তারপর বনূ ‘আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনূ সা‘য়ীদা গোত্র অথবা বনূ হারিস ইবনু খায়রাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রেই কল্যাণ রয়েছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, যে বাগান দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত তাকে বলা হয় --- এবং যা দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত নয় তাকে --- বলা হয় না। সাহল ইবনু বাক্কার (রহঃ) সুলায়মান ইবনু বিলাল সূত্রে ‘আমর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ এরপর বনূ হারিস ইবনু খায়রাজ গোত্র, এরপর বনূ সায়িদা গোত্র। এবং সুলায়মান (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।
হাদীস নং- ১৩৯৬। সা‘ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ছাড়া উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘উশর ওয়াজিব নয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ ‘উশর। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি প্রথম হাদীসের ব্যাখ্যাস্বরূপ। কেননা প্রথম হাদীস অর্থাৎ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে ‘উশর বা অর্ধ ‘উশর-এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্টরূপে বর্ণিত হয়নি। আর এই হাদীসে তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। রাবী নির্ভযোগ্য হলে তাঁর বর্ণনায় অন্য সূত্রের বর্ণনা অপেক্ষায় বর্ধিত অংশ থাকলে গ্রহণযোগ্য হয় এবং এ ধরনের বিস্তারিত বর্ণনা অস্পষ্ট বর্ণনার ফয়সালাকারী হয়। যেমন, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফাযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবাগৃহে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। বিলাল (রাঃ) বলেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এক্ষেত্রে বিলাল (রাঃ)-এর বর্ণনা গৃহীত হয়েছে আর ফাযল (রাঃ) )-এর বর্ণনা গৃহীত হয়নি।
হাদীস নং- ১৩৯৭। মূসা দ্দাত (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওসাক-এর কম ঊৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। এমনিভাবে পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যেরও যাকাত নেই।
হাদীস নং- ১৩৯৮। ‘উমর ইবনু মুহাম্মদ ইবনু হাসান আসা’দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খেজুর কাটার মৌসুমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে (সা’দকার) খেজুর আনা হত। অমুকে তার খেজুর নিয়ে আসতো, অমুকে এর খেজুর নিয়ে আসতো। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে খেজুর স্তূপ হয়ে গেল। হাসান ও হুসাইন (রাঃ) সে খেজুর নিয়ে খেলতে লাগলেন, তাদের একজন একটি খেজুর নিয়ে তা মুখে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং তার মুখ থেকে খেজুর বের করে বললেন, তুমি কি জানো না যে, মুহাম্মদের বংশধর (বনূ হাসিম) সা’দকা খায়না।
হাদীস নং- ১৩৯৯। হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। যখন তাঁকে ব্যবহারযোগ্যতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন তিনি বললেনঃ ফল নষ্ট হওয়া থেকে নিরাপদ হওয়া।
হাদীস নং- ১৪০০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফল ব্যবহারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং- ১৪০১। কুতায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রং ধরার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর অর্থ হচ্ছে লালচে হওয়া।
হাদীস নং- ১৪০২। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করতেন যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রাস্তায় তাঁর একটি ঘোড়া সা’দকা করেছিলেন। পরে তা বিক্রয় করা হচ্ছে জেনে তিনি নিজেই তা ক্রয় করার ইচ্ছায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর কাছে এসে তাঁর মত জানতে চাইলেন। তিনি বললেনঃ তোমার সা’দকা ফিরিয়ে নিবে না। সে নির্দেশের কারণে ইবনু উমর (রাঃ)- এর অভ্যাস ছিল নিজের দেওয়া সাদাকার বস্তু কিনে ফেললে সেটি সা’দকা না করে ছাড়তেন না।
হাদীস নং- ১৪০৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় (ব্যবহারের জন্য) দান করলাম। জার কাছে ঘোড়াটি ছিল সে এর হক আদায় করতে পারল না। তখন আমি তা ক্রয় করতে চাইলাম এবং আমার ধারনা ছিল যে, সে সেটি কম মূল্যে বিক্রি করবে। এ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি ক্রয় করবে না এবং তোমার সা’দকা ফিরিয়ে নিবে না, সে তা এক দিরহামের বিনিময়ে দিলেও। কেননা, যে ব্যাক্তি নিজের সা’দকা ফিরিয়ে নেয় সে যেন আপন বমি পুনঃ গলাধঃকরণ করে।
হাদীস নং- ১৪০৪। আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সা’দকার একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফেলে দেওয়ার জন্য কাখ্ কাখ্ (ওয়াক ওয়াক) বললেন। তারপর বললেনঃ তুমি কি জানো না যে, আমরা সা’দকা খাই না!
হাদীস নং- ১৪০৫। সা’দ ইবনু ‘উফাইর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মায়মূনা (রাঃ) কর্তৃক আযাদকৃত জনৈক দাসীকে সা’দকা স্বরুপ প্রদত্ত একটি বকরীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন? তারা বললেনঃ এটা তো মৃত। তিনি বললেন, এটা কেবল খাওয়া হারাম করা হয়েছে।
হাদীস নং- ১৪০৬। আদম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বারীরা নাম্নী দাসীকে আযাদ করার উদ্দেশ্যে কিনতে চাইলেন, তার মালিকরা বারীরার “ওয়ালা” (অভিভাবকত্বের অধিকার)- এর শর্ত আরোপ করতে চাইল। আয়িশা (রাঃ) (বিষয়টি সম্পর্কে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উল্লেখ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় কর। কারণ যে (তাকে) আযাদ করবে “ওয়ালা” তারই। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটু গোশত হাযির করা হল। আমি বললামঃ এ বারীরার সা’দকা স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বারীরার জন্য সা’দ্কা, আর আমাদের জন্য হাদিয়া।
হাদীস নং- ১৪০৭। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) উম্মে ‘আতিয়্যা আনসারীয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশা (রাঃ)- এর নিকট গিয়ে বললেনঃ তোমাদের কাছে (খাওয়ার) কিছ আছে কি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ না, তবে আপনি সা’দকা স্বরূপ নুসায়বাকে বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছিলেন, সে তার কিছ পাঠিয়ে দিয়েছিল (তা ছাড়া কিছ নেই)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সা’দকা তার যথাস্থানে পৌঁছেছে।
হাদীস নং- ১৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বারীরা (রাঃ)-কে সা’দ্কাকৃ্ত গোশতের কিছ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেওয়া হল। তিনি বললেন, তা বারীরার জন্য সা’দ্কা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন যে, শু’বা (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) সূত্ত্রে আনাস (রাঃ)- এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং- ১৪০৯। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সা’দ্কা (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহন করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং মযলূমের বদদু’আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু’আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।
হাদীস নং- ১৪১০। হাফ্স ইবনু ‘উমর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিজেদের সা’দকা নিয়ে উপস্থিত হতো তখন বলতেনঃ আল্লাহ! অমুকের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। একবার আমার পিতা সা’দকা নিয়ে হাযির হলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আবূ আওফা’র বংশধরের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
হাদীস নং- ১৪১১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চতুস্পদ জন্তুর আঘাত দায়মুক্ত, কূপ (খননে শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিক) দায়মুক্ত, খনি (খননে কেউ মারা গেলে মালিক) দায়মুক্ত। রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।
হাদীস নং- ১৪১২। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুমাইদ সা’য়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আস্দ গোত্রের ইবনু লুত্বিয়া নামক জনৈক ব্যাক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ সুলাইম গোত্রের যাকাত উসূল করার কাজে নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে আসলে তার নিকট থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাব নিলেন।
হাদীস নং- ১৪১৩। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উরাইনা গোত্রের কতিপয় লোকের মদিনার আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে যাকাতের উটের কাছে গিয়ে উটের দুধ পান করার ও পেশাব (ব্যবহার করার) অনুমতি প্রদান করেন। তারা রাখালকে (নির্মমভাবে) হত্যা করে এবং উট হাঁকিয়ে নিয়ে (পেলিয়ে) যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পশ্চাঁদাবনে লোক প্রেরণ করেন, তাদেরকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের হাত পা কেটে দেন এবং তাদের চোখে তপ্ত শলাকা বিদ্ধ করেন আর তাদেরকে হাররা নামক উত্তপ্ত স্থানে ফেলে রাখেন। তারা (যন্ত্রণায়) পাথর কামড়ে ধরে ছিল। আবূ কিলাবা, সাবিত ও হুমাইদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা (রহঃ)- এর অনুসরণ করেন।
হাদীস নং- ১৪১৪। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহাকে সাথে নিয়ে আমি একদিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তাঁকে তাহ্নীক ** করানোর উদ্দেশ্যে গেলাম। তখন আমি তাঁকে নিজ হাতে একটি শলাকা দিয়ে যাকাতের উটের গায়ে চিহ্ন লাগাতে দেখলাম। ** খেজুর বা মধু জাতীয় কিছু চিবিয়ে বরকতের জন্য সদ্যজাত শিশুর মুখে প্রদান করা।
হাদীস নং- ১৪১৫। ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সাকান (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ্কাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে (নামাযে) বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীস নং- ১৪১৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ থেকে সা’দকাতুল ফিত্র হিসাবে খেজুর অথবা যব-এর এক সা’ পরিমাণ আদায় করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয করেছেন।
হাদীস নং- ১৪১৭। কাসীবা ইবনু ‘উকবা (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ যব দ্বারা সা’দকাতুল ফিত্র আদায় করতাম।
হাদীস নং- ১৪১৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমান যব অথবা এক সা পরিমান খেজুর অথবা এক সা পরিমান পনির অথবা এক সা পরিমান কিসমিস দিয়ে সা’দকাতুল ফিত্র আদায় করতাম।
হাদীস নং- ১৪১৯। আহ্মদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা’ পরিমাণ খেজুর বা এক সা’ পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করতে নির্দেশ দেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু’ মুদ (অর্থ সা’) গম আদায় করতে থাকে।
হাদীস নং- ১৪২০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে এক সা’ খাদ্যদ্রব্য বা এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব বা এক সা’ কিসমিস দিয়ে সা’দকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর যুগে যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, এক মুদ গম (পূর্বোক্তগুলোর) দু’ মুদ-এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়।
হাদীস নং- ১৪২১। আদম (রহঃ) (আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সা’দকাতুল ফিত্র আদায় করার নির্দেশ দেন।
হাদীস নং- ১৪২২। মু’আয ইবনু ফাযালা (রাঃ) আবূ সা’ঈদ খূদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য সা’দকাতুল ফিত্র হিসাবে আদায় করতাম। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
হাদীস নং- ১৪২৩। আবূ নু’মান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক পুরুষ, মহিলা, আযাদ ও গোলামের পক্ষ থেকে সা’দকাতুল ফিতর অথবা (বলেছেন) সা’দকা-ই-এরামাযান হিসাবে এক সা’ খেজুর বা এক এক সা’ যব আদায় করা ফরয করেছেন। তারপর লোকেরা অর্ধ সা’ গমকে এক সা’ খেজুরের সম মান দিতে লাগল। (রাবী নাফি’ বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ) খেজুর (সা’দকাতুল ফিতর হিসাবে) দিতেন। এক সময় মদিনায় খেজুর দুর্লভ হলে যব দিয়ে তা আদায় করেন। ইবনু উমর (রাঃ) প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের পক্ষ থেকেই সা’দকাতুল ফিত্র আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকেও সা’দকার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক-দু’ দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমার সন্তান অর্থাৎ নাফি’ (রহঃ)-এর সন্তান। তিনি আরও বলেন, সা’দকার মাল একত্রিত করার জন্য দিতেন, ফকীরদের দেওয়ার জন্য নয়।
হাদীস নং- ১৪২৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, আযাদ ও গোলাম প্রত্যেকের পক্ষ থেকে এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর সা’দকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করা ফরয করে দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment