Jan 28, 2020

সহীহ বুখারী,৫ম খন্ড, অধ্যায়-৪৫, বিষয়ঃ-সন্ধি ।

হাদীস নং-২৫১১। সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবনু আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের একটি জামায়াত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেল। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে এসে পৌছেন নি। বিলাল (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিলেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও এসে পৌঁছেন নি। পরে বিলাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাত (নামায/নামাজ) লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।'
তারপর বিলাল (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত বললেন, আর আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে গেলেন। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় আগের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেকে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামির হলেন।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! সালাত (নামায/নামাজ) অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া মহিলাদের কাজ। সালাত (নামায/নামাজ) অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন সুবাহান্নাল্লাহ বলে। কেননা এটা শুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারতো না। ‘হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবূ কূহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ইমামত করা।
হাদীস নং-২৫১২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল, আপনি যদি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইয়ের কাছে একটু যেতেন (তবে ভালো হতো)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যওয়ার জন্য গাধায় আরোহণ করলেন এবং মুসলিমগণ তাঁর সঙ্গে হেটে চললো। আর সে পথ ছিল কংকরময়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এসে পৌছলে সে বলল, ‘সরো আমার সম্মুখ থেকে। তোমার গাধার দুগন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।’
তাঁদের মধ্যে থেকে একজন আনসারী বললঃ আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গাধা সুগন্ধে তোমার চাইতে উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর গোত্রে এক ব্যাক্তি রেগে উঠল এবং উভয়ে একে অপরকে গালাগালি করলো। এভাবে উভয়ের পক্ষের সঙ্গীরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল এবং উভয় দলের সাথে লাঠালাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি হল। আমাদের জানোান হয়েছে যে, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হলঃ মুমিনদের দু’দল দ্বন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দিবে। (৪৯ঃ ৯)
আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, ‘মুসাদ্দাদ (রহঃ) বসার এবং হাদীস বর্ণনার পূর্বে আমি তার থেকে এ হাদীস হাসিল করেছি।
হাদীস নং-২৫১৩। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যাক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য (নিজের থেকে) ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।
হাদীস নং-২৫১৪। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুবা-এর অধিবাসীরা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এমনকি তারা পাথর ছুঁড়োছুঁড়ি শুরু করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে সংবাদ দেয়া হলে তিনি বললেন, ‘চল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেই।’
হাদীস নং-২৫১৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে’ (৪ঃ ১২৮) এই আয়াতটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়াতের লক্ষ্য হল, ‘সে ব্যাক্তি যে তার স্ত্রীর মধ্যে বার্ধক্য বা অন্য ধরনের অপছন্দনীয় কিছু দেখতে পেয়ে তাকে ত্যাগ করতে মনস্থ করে আর স্ত্রী এ বলে অনুরোধ করে যে, তুমি আমাকে তোমার কাছে রাখ এবং যতটুক ইচ্ছা আমার প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ কর।’ ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, ‘উভয়ে সম্মত হলে এতে দোষ নেই।’
হাদীস নং-২৫১৬। আদম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলল, ‘ইয়া রাসূলআল্লাহ! আল্লাহর কিতাব মোতাবেক আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিন।’ তখন তাঁর প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলল, ‘সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেক ফয়সালা করুন।’ পরে বেদুঈন বলল, ‘আমার ছেলে এ লোকের বাড়ীতে মজুর ছিল। তারপর তার স্ত্রীর সাথে সে যিনা করে।’ লোকেরা আমাকে বলল, ‘তোমার ছেলের উপর রাজম (পাথর মেরে হত্যা) ওয়াজিব হয়েছে।’ তখন আমি আমার ছেলেকে একশ’বকরী এবং একটি বাদীর বিনিময়ে এর কাছ থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, ‘তোমার ছেলের উপর একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে।’
সব শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেকই ফয়সালা করব। বাদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশ’ বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হবে। ’আর অপরজনকে বললেন, ‘হে উনাইস, তুমি আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর কাছে যাবে (এবং সে স্ত্রী যদি স্বীকার করে) তাকে রাজম করবে।’ উনাইস তার কাছে গেলেন এবং তাকে রাজম করলেন।
হাদীস নং-২৫১৭। ইয়াকুব ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এই শরীয়াতে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করো হবে। ’আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফর মাখরামী (রহঃ) ও আব্দুল ওয়াহিদ ইবনু আবূ ‘আউন সা‘দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে তা বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-২৫১৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াতে (মক্কাবাসীদের সাথে) সন্ধি করার সময় আলী (রাঃ) উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, 'মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ'। মুশরিকরা বলল, 'মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ' লেখা চলবে না। আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলে আপনার সঙ্গে লড়াই কিসের?’ তখন তিনি আলীকে বললেন, ‘ওটা মুছে দাও। ’আলী (রাঃ) বললেন, ‘আমি তা মুছব না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজ হাতে মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাদের সাথে সন্ধি করলেন যে, তিনি এবং তাঁর সাহাবা তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং জুলুব্বান جُلُبَّانِ السِّلاَحِ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞাসা করল, جُلُبَّانِ السِّلاَحِ মানে কি? তিনি বললেন, ‘জুলুব্বান’ অর্থ ভিতরে তরবারীসহ খাপ।’
হাদীস নং-২৫১৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সাথে ফয়সালা করলেন যে, তিন দিন সেখাসে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি এ কথাই মনে করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ।’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ।’
তারপর তিনি আলীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে (রাসূলুল্লাহ শব্দটি) কখনো মুছবো না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন-খাপবদ্ধ অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাকে বাধা দিবেন না।’ (সন্ধির শর্ত মুতাবেক) তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলীকে বলল, ‘তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান থেকে বের হতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।’
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন। তখন হামযার মেয়ে হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেচনে পেছনে চলল। আলী (রাঃ) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাকে বললেন, ‘এই নাও তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি।’ আলী, যায়দ ও জা‘ফর তাকে নেওয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ‘আমি তার বেশী হকদার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর (রাঃ) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা অমার স্ত্রী।’ যায়দ (রাঃ) বললেন, ‘সে আমার ভাইয়ের মেয়ে।’
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালার অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থলবর্তিনী।’ আর আলীকে বললেন, ‘আমি তোমার এবং তুমি আমার।’ জাফরকে বললেন, ‘তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বললেন, ‘তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।’
হাদীস নং-২৫২০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি‘ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করতে রওয়ানা হলেন। কিন্তু কুরাইশ কাফিররা তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। তখন তিনি হুদায়বিয়াতে তাঁর হাদী কুরবানী করলেন, আর মাথা মুড়ালেন এবং তাদের সাথে সন্ধি করলেন এই শর্তে যে, আগামী বছর তিনি উমরা করবেন আর (কোষবদ্ধ) তরবারী ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে তাদের কাছে আসবেন না। আর তারা যতদিন পছন্দ করবেন তিনি ততদিন সেখানে থাকবেন। পরের বছর তিনি উমরা করলেন এবং যেমনি সন্ধি করেছিলেন তেমনিভাবে মক্কায় অবস্থা করলেন। তারা তাঁকে বেরিয়ে যেতে বললে, তিনি বেরিয়ে গেলেন।
হাদীস নং-২৫২১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার সন্ধিবদ্ধ থাকাকালে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ও মুহাইয়াসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়দ (রাঃ) খায়বার গিয়েছিলেন।
হাদীস নং-২৫২২। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রুবাইয়্যি বিনতে নাযর (রাঃ) এক কিশোরীর সামনে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করল আর অপর পক্ষ ক্ষমা চাইল। তারা অস্বীকার করল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। তিনি কিসাসের নির্দেশ দিলেন। আনাস ইবনু নাযর (রাঃ) তখন বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! রুবাইয়্যি এর দাঁত ভাঙ্গা হবে? না, যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তিনি বললেন, হে আনাস, আল্লাহর বিধান হল কিসাস।’ তারপর বাদীপক্ষ রাজি হয় এবং ক্ষমা করে দেয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও রয়েছেন যে, আল্লাহর নামে কোন কসম করলে তা পূরণ করেন। ফাযারী (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে রিওয়ায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তখন লোকেরা সম্মত হল এবং ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করল।
হাদীস নং-২৫২৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... হাসান (বসরী) (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) পর্বত সদৃশ সেনাদল নিয়ে মু‘আবিয়া (রাঃ) এর মুখোমুখি হলেন। আমার ইবনু আস (রাঃ) বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফির যাবে না। মু‘আবিয়া (রাঃ) তখন বললেন, আল্লাহর কসম! (আর মু‘আবিয়া ও আমর ইবনুল ‘আস) (রাঃ) উভয়ের মধ্যে মু‘আবিয়া (রাঃ) ছিলেন উত্তম ব্যাক্তি। ‘হে ‘আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্ববধান করবে? তাদের দূর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তারপর তিনি কুরায়শের বানূ আবদে শামস শাখার দু’জন আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) কে হাসান (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা উভয়ে এই লোকটির কাছে যাও এবং তার কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তার বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর।’
তারা তার কাছে গেলেন এবং তার সঙ্গে কখা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তার বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) তাদের বললেন, ‘আমরা আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি। আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে।’ তারা উভয়ে বললেন, (মু‘আবিয়া (রাঃ) আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, ‘এ দায়িত্ব কে নেবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’ এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা (তার জওয়াবে) বললেন, ‘আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি।’ তারপর তিনি তার সাথে সন্ধি করলেন।
হাসান (বসরী) (রহঃ) বলেন, আমি আবূ বাকরা (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান (রাঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আর একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানের দু’টি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন।’ আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আলী ইবনু আবদুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
হাদীস নং-২৫২৪। ইসমাঈল ইবনু আবী ওয়াইস (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দরজায় বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন; দুজন তাদের আওয়াজ উচ্চ করছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু মাফ করে দেওয়ার এবং সহানুভূতি দেখানোর (কিছু সময় দেওয়ার) অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যাক্তি বলছিল, ‘না আল্লাহর কসম! আমি তা করব না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হযে তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎ কাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে কসম করেছে, সে লোকটি কোথায়? সে বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি। সে যা চাইবে তার জন্য তা-ই হবে।
হাদীস নং-২৫২৫। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... কাব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ হাদরাদ আল-আসলামীর কাছে তার কিছু মাল পাওনা ছিল। রাবী বলেন, একবার সাক্ষাত পেয়ে তিনি তাকে ধরলেন, এমনকি তাদের আওয়াজ চড়ে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি যেন হাতের ইশারায় বলছিলেন, অর্ধেক (নাও)। তারপর তিনি তার পাওনার অর্ধেক নিলেন আর অর্ধেক ছেড়ে (মাফ করে) দিলেন।
হাদীস নং-২৫২৬। ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের হাতের প্রতিটি জোড়ার জন্য তার উপর সাদকা রয়েছে। সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিদিন (অর্থাৎ প্রত্যহ) মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সাদকা।’
হাদীস নং-২৫২৭। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক আনসারীর সাথে বিবাদ করছিলেন, যিনি বদরে শরীক ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে পাথরী যমীনের একটি নালা সম্পর্কে অভিযোগ করলেন। তারা উভয়ে সে নালা থেকে পানি সেচ করতেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইরকে বললেন, ‘হে যুবাইর! তুমি প্রথমে পানি সেচবে। তারপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়েদিবে।’ আনসারী তখন রেগে গেল এবং বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আপনার ফুফুর ছেলে বলে (এ বিচার)?’ এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার রঙ্গ বদলে গেল। তারপর তিনি বললেন, ‘তুমি সেচ কর, তারপর পানি আটকে রাখ, বেষ্টনীর বরাবর পৌঁছা পর্যন্ত।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর (রাঃ) কে তার পূর্ণ হক দিলেন। এর আগে যুবাইর (রাঃ) কে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যা আনসারীর জন্য সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু আনসারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাগান্বিত করলে সুষ্পষ্ট নির্দেশের মাধ্যমে যুবাইর (রাঃ)-কে তিনি তাঁর পূর্ণ হক দান করলেন। উরওয়া (রাঃ) বলেন, যুবাইর (রাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার নিশ্চিত ধারণা যে (আল্লাহর বাণী): কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে। (৪: ৬৫) আয়াতটি সে ব্যাপারেই নাযিল হয়েছিল।
হাদীস নং-২৫২৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতার মৃত্যু হল, আর তার কিছু ঋণ ছিল। আমি তার ঋণের বিনিময়ে পাওনাদারদের খেজুর নেওয়ার প্রস্তাব দিলাম। তাতে ঋণ পরিশোধ হবে না বলে তারা তা নিতে অস্বীকার করল। আমি তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ বিষয়ে তাঁর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, খেজুর পেড়ে মাছায় রেখে রাসূলুল্লাহকে খবর দিও।
(যথা সময়ে) তিনি এলেন এবং তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি কেজুর স্তুপের পার্শ্বে বসলেন এবং বরকতের দু‘আ করলেন। পরে বললেন, তোমার পাওনাদারদের ডাক এবং তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করে দাও। তারপর আমার পিতার পাওণাদারদের কেউ এমন ছিল না যার ঋণ পরিশোধ করিনি। এরপরও (আমার কাছে) তের ওয়াসক খেজুর উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। সাত ওয়াসক (عَجْوَةٌ) মিশ্র খেজুর আর ছয় ওয়াছক (لَوْنٌ) নিম্নমানের খেজুর কিংবা ছয় ওয়াসক মিশ্র ও সাত ওয়াসক নিম্নমানের খেজুর।
তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম এবং তাঁকে তা বললাম। তিনি হাসলেন এবং বললেন, আবূ বকর ও উমরের কাছে গিয়ে তা বল।’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আগেই জানতাম যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করার তা করেছেন, তখন অবশ্য এরূপই হবে।’
হিশাম (রহঃ) ওয়াহাব (রহঃ)-এর মাধ্যমে জাবির (রাঃ) থেকে (বর্ণনায়) আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি আবূ বকর (রাঃ) এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাসার কথা উল্লেখ করেন নি। তিনি বর্ণনা করেছেন, (জাবির (রাঃ) বলেছেন) আমার পিতা তার যিম্মায় ত্রিশ ওয়াসক ঋণ রেখে মার গিয়েছেন। ইবনু ইসহাক (রহঃ) ওয়াহাব (রহঃ)-এর মাধ্যমে জাবির (রাঃ) থেকে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
হাদীস নং-২৫২৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যমানায় একবার তিনি ইবনু আবূ হাদরাদের কাছে মসজিদে পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন্ এতে উভয়ের আওয়াজ চড়ে গেল। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকেই আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে এলেন আর কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) কে ডাকলেন এবং বললেন, হে কা‘ব! কা‘ব (রাঃ) বললেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাবী বলেন, তিনি হাতে ইশারা করলেন, অর্ধৈক মওকুপ করে দাও। কা‘ব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইবনু আবূ হাদরাদকে) বললেন, ‘যাও, তার ঋণ পরিশোধ করে দাও।’

No comments:

Post a Comment