২৫৫১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যাক্তির উচিত নয় যে, তার অসীয়াতযোগ্য কিছু (সম্পদ) রয়েছে সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসীয়াত লিখিত থাকবে না। মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) এ বর্ণনায় মালিক (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। এ সনদে আমর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
২৫৫২। ইবরাহীম ইবনু হারিস (রহঃ) ... রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্যালক অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া বিনত হারিসের ভাই আমর ইবনুুর হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইনিতকালের সময় তাঁর সাদা খচ্চরটি, তাঁর হাতিয়ার এবং সে জমি যা তিনি সাদকা করেছিলেন, তাছাড়া কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা, কোন দাস-দাসী কিংবা কোন জিনিস রেখে যাননি।’
২৫৫৩। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... তালহা ইবনু মুসাররিফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আদিফা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অসীয়াত করেছিলেন? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কিভাবে লোকদের উপর অসীয়াত ফরয করা হল কিংবা ওয়াসীয়াতের নির্দেশ দেওয়া হল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের (অনুযায়ী আমল করার) অসীয়াত করেছেন।
২৫৫৪। আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) ... আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ আয়িশা (রাঃ) এর কাছে আলোচনা করলেন যে, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়াসী ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন ‘তিনি কখন তাঁর প্রতি অসীয়াত করলেন? অথচ আমি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার বুকে অথবা বলেছেন আমার কোলে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। তখন তিনি পানির তস্তুরি চাইলেন, তারপর আমার কোলে ঝুকে পড়লেন। আমি বুঝতেই পারিনি যে, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। অতএব তাঁর প্রতি কখন অসীয়াত করলেন?
২৫৫৫। আবূ নু‘আইম (রহঃ) ... সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখতে আসেন। সে সময় আমি মক্কায় ছিলাম। কোন ব্যাক্তি যে স্থান থেকে হিযরত করে, সেখানে মৃত্যু বরণ করাকে তিনি অপছন্দ করতেন। এজন্য তিনি বলতেন, আল্লাহ রহম করুক ইবনু আফরা-এর উপর। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সমুদয় মালের ব্যবহারের অসীয়াত করে যাব? তিনি বললেন, না। আমি আরজ করলাম, তবে অর্ধেক? তিনি ইরশাদ করলেন, না। আমি আরজ করলাম, তবে এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও অনেক। ওয়ারিসগণকে দরিদ্র পরমুখাপেক্ষী করে রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া শ্রেয়। তুমি যখনই কোন খরচ করবে, তা সাদকারূপে গন্য হবে। এমনকি সে লোকমাও যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে। হয়ত আল্লাহ পাক তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং লোকেরা তোমার দ্বারা উপকৃত হবেন, আবার কিছু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে সময় তার একটি মাত্র কন্যা ছাড়া কেউ ছিল না।
২৫৫৬। কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা যদি এক চতুর্থাংশে নেমে আসত (তবে ভাল হতো) কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক তৃতীয়াংশ এবং তৃতীয়াংশই বিরাট অথবা তিনি বলেছেন বেশ।
২৫৫৭। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) ... আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) এর পিতা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) অসুস্থ হয়ে পড়লে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেন।’ তিনি বললেন, ‘আশা করি আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার দ্বারা লোকদের উপকৃত করবেন।’ আমি বললাম, আমি অসীয়াত করতে চাই। আমার তো একটি মাত্র কন্যা রয়েছে।’ আমি আরো বললাম, আমি অর্ধেক অসীয়াত করতে চাই।’ তিনি বললেন, অর্ধেক অনেক বেশী। আমি বললাম, এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আচ্ছা এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশ বেশী বা তিনি বলেছেন বিরাট। সা‘দ (রাঃ) বলেন, এরপর লোকেরা এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করতে লাগল। আর তা-ই বৈধ হল।
২৫৫৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তাঁর ভাই সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) কে এই বলে অসীয়াত করেন যে, যামআর দাসীর ছেলেটি আমার ঔরসজাত। তাকে তুমি তোমার অধিকারে আনবে। মক্কা বিজয়ের বছর সা‘দ (রাঃ) তাকে নিয়ে নেন এবং বলেন, সে আমার ভাতিজা (আমার ভাই) আমাকে এর ব্যাপারে অসীয়াত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। আমার পিতার বিছানায় তার জন্ম হয়েছে। তারা উভয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসেন।
সা‘দ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমার ভাইয়ের পুত্র এবং তিনি আমাকে তার সম্পর্কে অসীয়াত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআ (রাঃ) বললেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদ ইবনু যামআ, সে তোমারই প্রাপ্য। কেননা যার বিছানায় সন্তান জন্মেছে, সে-ই সন্তানের অধিকারী। ব্যাভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। তারপর তিনি সাওদা বিনতে যামআ (রাঃ) কে বললেন, ‘তুমি এই ছেলেটি থেকে পর্দা কর।’ কেননা তিনি ছেলেটির সঙ্গে উতবা’র সা’দৃশ্য দেখতে পান। ছেলেটির আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত সে কখনো সাওদা (রাঃ) কে দেখেনি।
২৫৫৯। হাসসান ইবনু আবূ আববাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী একটি মেয়ের মাথা দুইটি পাথরের মাঝে রেখে তা থেতলে ফেলে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে তোমাকে এমন করেছে? কি অমুক না অমুক ব্যাক্তি? অবশেষে যখন সেই ইয়াহুদীর নাম নেওয়া হল তখন মেয়েটি মাথা দিয়ে ইশারা করল, হ্যাঁ। তারপর সেই ইয়াহুদীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে সে স্বীকার করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। সে মতে পাথর দিয়ে তার মাথা থেঁতলিয়ে দেওয়া হল।
২৫৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সেকালে) উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ মোতাবেক এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুন, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠামাংশ, স্ত্রীর জন্য (যদি সন্তান থাকে) এক অষ্টমাংশ, (না থাকলে) এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক, (থাকলে) এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।
২৫৬১। মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উত্তম সাদকা কোনটি? তিনি বলেন, সুস্থ এবং সম্পদের প্রতি অনুরাগ অবস্থায় দান খায়রাত করা, যখন তোমার ধনী হওয়ার আকাঙখা থাকে এবং তুমি দারিদ্রের আশংকা রাখ, আর তুমি এভাবে অপেক্ষা থাকবে না যে, যখন তোমার প্রাণ কন্ঠাগত হয়ে আসে, তখন তুমি বলবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু অথচ তা অমুকের জন্য হয়েই গেছে।
২৫৬২। সুলাইমান ইবনু দাউদ আবূ রাবী‘ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি-যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে তা খিয়ানত করে এবং প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে।
২৫৬৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমি সাওয়াল করলাম, তিনি আমাকে দান করলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে হাকীম! এই ধন-সম্পদ, সবুজ-শ্যামল, মধুর। যে ব্যাক্তি দানশীলতার মনোভাব নিয়ে তা গ্রহণ করবে, তাতে তার বরকত হবে। আর যে ব্যাক্তি প্রতিক্ষা কাতর অন্তরে তা গ্রহণ করবে, তাতে তার বরকত হবে না। সে ঐ ব্যাক্তির মত যে খায়; কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের (দাতার) হাত নীচের (গ্রহীতার) হাতের চাইতে উত্তম।’ হাকীম (রাঃ) বলেন, তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলআল্লাহ! সে স্বত্বার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আপনার পরে আমি দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে আর কারো কিছু চাইব না। (কোন কিছু নেব না)
এরপর আবূ বকর (রাঃ) কিছু দান করার জন্য হাকীমকে আহবান করেন, কিন্তু হাকীম (রাঃ) তাঁর কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তারপর উমর (রাঃ)-ও হাকীম (রাঃ) কে কিছু দান করার জন্য ডেকে পাঠান, কিন্তু তাঁর কাছ থেকেও কিছু গ্রহণ করতে তিনি অস্বীকার করেন। তখন উমর (রাঃ) বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি আল্লাহ প্রদত্ত গনীমতের মাল থেকে প্রাপ্য তার অংশ তাঁর সামনে পেশ করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকার করেছেন; হাকীম (রাঃ) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে আর কারো নিকট কিছু চাননি।
২৫৬৪। বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই শাসক হলেন দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্ববান এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের সম্পদের দায়িত্ববান, তার সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্ববান, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এও বলেছেন যে, পুত্র তার পিতার সম্পদের দায়িত্ববান।
২৫৬৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) কে বলেন আমার মত হল, তোমার বাগানটি তোমার আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বলেন, আমি তা-ই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাই আবূ তালহা (রাঃ) তার বাগানটি তার আত্মীয়-স্বজন ও চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যখন এই আয়াতটি নাযিল হলঃ (হে মুহামমদ) আপনার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দেন। (২৬ঃ ১৪)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রদের ডেকে বললেন, হে বানু ফিহর, হে বানূ আদী, তোমরা সতর্ক হও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, যখন কুরআনের এই আয়াত নাযিল হলঃ (হে মুহাম্মদ) আপনি আপনার নিকটবর্গকে সতর্ক করে দিন (২৬ঃ ২১৪)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে কুরায়শ সম্প্রদায়।
২৫৬৬। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তায়ালা কুরানের এই আয়াতটি নাযিল করলেন, (হে মুহাম্মদ) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দিন (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘হে কুরায়শ সম্প্রদায়! কিংবা অনুরূপ শব্দ বললেন, তোমরা (আল্লাহর আযাব থেকে) আত্মরক্ষা কর। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে বানূ আবাদ মানাফ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে সাফিয়্যা! রাসূলুল্লাহর ফুফু, আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না।
আসবাগ (রহঃ) ইবনু ওয়াহব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবূল ইয়ামান (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
২৫৬৭। কুতাইবা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন দেখতে পেলেন যে, এক ব্যাক্তি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন, এর উপর সওয়ার হও। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটি তো কুরবানীর উট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার বা চতুর্থবার তাকে বললেন, তার উপর সওয়ার হয়ে যাও, দুর্ভোগ তোমার জন্য কিংবা বললেন, তোমার প্রতি আফসোস।
২৫৬৮। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে একটি কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন, এর উপর সওয়ার হও। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটি তো কুরবানীর উট। তিনি দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার বললেন, এর উপর সওয়ার হও, দুর্ভোগ তোমার জন্য।
২৫৬৯। মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা‘দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে সা‘দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা যান। আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সাদকা করি, তা হলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিকরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদকা করলাম।
২৫৭০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার তাওবা (কবুলের শুকরিয়া) হিসাবে আমি আমার যাবতীয় মাল আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলুল্লাহ এর উদ্দেশ্যে সাদকা করে মুক্ত হতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছু মাল নিজের জন্য রেখে দাও, তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তা হলে আমি আমার খায়বারের অংশটি নিজের জন্য রেখে দিলাম।
২৫৭১। আবূ নুমান মুহাম্মদ ইবনু ফাযল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের ধাররা, উক্ত আয়াতটি মানসুখ হয়ে গেছে; কিন্তু আল্লাহর কসম। আয়াতটি মানসূখ হয়নি; বরং লোকেরা এর উপর আমল করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আত্মীয় দু’ ধরনের-এক, আত্মীয় যারা ওয়ারিস হয়, এবং তারা উপস্থিতদের কিছু দিবে। দুই, এমন আত্মীয় যারা ওয়ারিস নয়, তারা উপস্থিতদের সঙ্গে সদালাপ করবে এবং বলবে, আমাদের অধিকার কিছু নেই, যা তোমাদের দিতে পারি।
২৫৭২। ইসমাঈল (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, আমার মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারনা যে, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সাদক করতেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে সাদকা করে দিতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে সাদকা কর।
২৫৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানতে চাইলেন যে, আমার মা মারা গেছেন এবং তার উপর মান্নত ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে তা আদায় কর।
২৫৭৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বানূ সাইদার নেতা সা‘দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর মা মারা গেলেন। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকা করি, তবে তা কি তার কোন উপকারে আসবে? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। সা‘দ (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আপনাকে সাক্ষী করে আমি আমার মিখরাফের বাগানটি তাঁর উদ্দেশ্যে সাদকা করলাম।
২৫৭৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেনঃ وَإِنْ خِفْتُمْ أَنْ لاَ تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে, যাকে তোমাদের ভাল লাগে (৪ঃ ৩)। আয়াতটির অর্থ কি? আয়িশা (রাঃ) বললেন, এখানে সেই ইয়াতীম মেয়েদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যে তার অভিভাবকের লালন-পালনে থাকে। এরপর সে অভিভাবক তার রূপ-লাবন্য ও ধন-সম্পদের আকৃষ্ট হয়ে, তার সমমানে মেয়েদের প্রচলিত মাহর থেকে কম দিয়ে তাকে বিয়ে করতে চায়। অতএব যদি মাহর পূর্ণ করার ব্যাপারে এদের প্রতি ইনসাফ করতে না পারে তবে ঐ অভিভাবকদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এদের বিবাহ করতে এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের ছাড়া তোমরা অন্য মেয়েদের বিবাহ করতে।
আয়িশা (রা বলেন, এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ এবং লোকে আপনার কাছে মহিলাদের বিষয়ে জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদের তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জানোাচ্ছেন (৪ঃ ১২৭)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেন যে, ইয়াতীম মেয়েরা সুন্দর ও সম্পদশালী হলে অভিভাবকেরা তাদের বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, কিন্তু পূর্ণ মাহর প্রদান করে না। আবার ইয়াতীম মেয়েরা গরীব হলে এবং সুশ্রী না হলে তাদের বিয়ে করতে চায় না বরং অন্য মেয়ে তালাশ করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, আকর্ষনীয় না হলে তারা যেমন ইয়াতীম মেযেদের পরিত্যাগ করে, তেমনি আকর্ষনীয় মেয়েদেরও তারা বিয়ে করতে পারবে না, যদি তাদের ইনসাফ মাফিক পূর্ণ মাহর প্রদান এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় না করে।
২৫৭৬। হারূন (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে উমর (রাঃ) নিজের কিছু সম্পত্তি সাদকা করেছিলেন, তা ছিল, ছামাগ নামে একটি খেজুর বাগান। উমর (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি সেটি সাদকা করতে চাই।’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মূল সম্পদটি এ শর্তে সাদকা কর, যে, তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না এবং কেউ ওয়ারিস হবে না, বরং তার ফল (আল্লাহর পথে) দান করা হবে। তারপর উমর (রাঃ) সেটি এভাবেই সাদকা করলেন। তার এ সাদকা ব্যয় হবে আল্লাহর রাস্তায়, দাস মুক্তির ব্যাপারে, মিসকীন, মেহমান, মূসাফির ও আত্মীয়দের জন্য। এর যে মুতাওল্লালী হবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ আহার করলে কিংবা বন্ধু বান্ধবকে খাওয়ালে কোন দোষ নেই। তবে তা সঞ্চয় করতে পারেব না।
২৫৭৭। উবাইদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আল্লাহ তাআলার বাণীঃ) যে বিত্তবান সে যেন বিরত থাকে আর যে বিত্তহীন সে যেন সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করে (৪: ৬)। আয়াতটি ইয়াতীমের অভিভাবক সম্বন্ধে নায়িল হয়েছে। অভিভাবক যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ইয়াতীমের সম্পত্তি থেকে প্রয়োজন পরিমাণ খেতে পারবে।
২৫৭৮। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। (২) যাদু (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত ব্যতীরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।
২৫৭৯। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন, তখন তাঁর কোন খাদিম ছিল না। আবূ তালহা (রাঃ) আমার হাত ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমাকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আনাস একজন বুদ্ধিমান ছেলে। সে আপনার খেদমত করবে।’ এরপর প্রবাসে ও আবাসে আমি তাঁর খেদমত করেছি। আমার কৃত কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো বলেন নি, তুমি এরূপ কেন করলে? কোন কাজ না করলে তিনি বলেন নি, তুমি এটি এরূপ কেন করলে না।?
২৫৮০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মদিনায় আনসাদের মধ্যে তালহার খেজুর বাগান-সম্পদ সবচাইতে বেশী ছিল। আর সকল সম্পদের মধ্যে তার কাছে সবচাইতে প্রিয় সম্পদ ছিল মসজিদের (নববীর) সামনে অবস্থিত বায়রুহা বাগানটি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বাগানে যেতেন এবং এর সুস্বাদু পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন নাযিল হলঃ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা নেকী হাসিল করতে পারবে না। আবূ তালহা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা যা ভালবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো নেকী হাসিল করতে পারবে না। আমার কাছে সবচাইতে প্রিয় সম্পদ হল বায়রুহা। সেটি আল্লাহর নামে সাদকা। আমি আল্লাহর কাছে এর নামে সওয়াব ও কিয়ামতের সঞ্চয়ের আশা করি। আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী আপনি তা ব্যয় করুন।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বেশ, এটি লাভজনক সম্পদ অথবা (বললেন), অস্থায়ী সম্পদ।’ ইবনু মাসলামা সন্দেহ পোষণ করেন। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) তুমি যা বলেছ, আমি তা শুনেছি। আমার মতে তুমি তা তোমর আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তা-ই করব।’ তারপর তা তিনি তাঁর আত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। ইসমাঈল, আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রাঃ) মালিক (রহ) এর (সন্দেহ ছাড়াই) رَايِحٌ (অস্থায়ী) বর্ণনা করেছেন।
২৫৮১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন এবং তার মা মারা গেছেন। তার পক্ষ থেকে যদি আমি সাদকা করি তাহলে তা কি তার উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাহাবী বললেন, আমার একটি বাগান আছে, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি তার পক্ষ থেকে সাদকা করলাম।
২৫৮২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ তৈরীর নির্দেশ দিলেন। তারপর বললেন, হে বানূ নাজ্জার, তোমরা এই বাগানটির মূল্য নির্ধারণ করে আমার কাছে বিক্রি কর। তারা বলল, এরূপ নয়। আল্লাহর কসম! আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই এর মূল্যের আশা রাখি।
২৫৮৩। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আমি এমন ভাল একটি জমি পেয়েছি, যা ইতিপূর্বে কখনো পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে আসল জমিটি ওয়াকফ করে তার উৎপন্ন সাদকা করতে পার। উমর (রাঃ) এটি গরীব, আত্মীয়-স্বজন, গোলাম আযাদ, আল্লাহর পথে, মেহমান ও মূসাফিরদের জন্য এ শর্তে সাদকা করলেন যে, আসল জমি বিক্রি করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না, কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না। তবে যে এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ খেতে বা বন্ধু বান্ধবকে খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। তবে এ থেকে সঞ্চয় করবে না।
২৫৮৪। আবূ আসিম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ) খায়বারে কিছু সম্পদ লাভ করেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে সেটি সাদকা করতে পার। তারপর সেটি তিনি অভাবগ্রস্ত, মিসকীন, আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানদের মধ্যে সাদকা করে দেন।
২৫৮৫। ইসহাক (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন মসজিদ নির্মানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি বললেন, ‘হে বানূ নাজ্জার! মূল্য নির্ধারিত করে তোমাদের এই বাগানটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও।’ তারা বলল, ‘এরূপ নয়, আল্লাহর কসম! একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা এর মূল্যের আশা রাখি।
২৫৮৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর (রাঃ) এক ব্যাক্তিকে তাঁর একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেন, যেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আরোহণ করার জন্য দিয়েছিলেন, তিনি এক ব্যাক্তিকে আরোহণ করার জন্য দিলেন। উমর (রাঃ) কে জানোান হল যে, ঘোড়াটি সে ব্যাক্তি বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ক্রয় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, ‘তুমি তা ক্রয় করবে না এবং যা সাদকা করে দিয়েছে তা আর ফিরিয়ে নিবে না।
২৫৮৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উত্তরাধিকারীরা কোন স্বর্ণ মুদ্রা এবং রোপ্য মুদ্রা ভাগাভাগি করবে না, বরং আমি যা কিছু রেখে গেলাম তা থেকে আমার সহধর্মিনীদের খরচ এবং কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সাদকা।
২৫৮৮। কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ) তাঁর ওয়াকফে এই শর্তারোপ করেন যে, মুতাওয়াল্লী তা থেকে নিজে খেতে পারবে এবং বন্ধু বান্ধবকেও খাওয়াতে পারবে, তবে সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না।
২৫৮৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বানূ নাজ্জার! তোমাদের বাগানটি মূল্য নির্ধারণ করে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তারা বলল, আমরা এর মূল্য একমাত্র আল্লাহর কাছে আশা রাখি।
২৫৯০। মুহাম্মদ ইবনু সাবিক (রহঃ) কিংবা ফযল ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু সাবিক (রহঃ) এর মাধ্যমে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়। তিনি ছ’টি কন্যা সন্তান রেখে যান আর তাঁর উপর ঋণও রেখে যান। খেজুর কাটার সময় হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার পিতাকে উহুদের যুদ্ধে শহীদ করা হয়েছে আর তিনি অনেক ঋন রেখে গেছেন। আমার মনে চায় যে, পাওনাদাররা আপনাকে দেখে নিক। (হয়ত এতে তারা কিছু ঋণ ছেড়ে দিতে পারে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি যাও। (খেজুর কেটে) এক এক রকম খেজুর এক এক স্থানে জমা কর। আমি তা-ই করলাম। এরপর তাঁকে অনুরোধ করে নিয়ে এলাম। লোকেরা (পাওনাদাররা) যখন দেখল, তখন তারা আমার কাছে জোর তাগাদা কারতে লাগল। তিনি তাদের এরুপ করতে দেখে খেজুরের বড় স্তুপটির চারদিকে তিনবার ঘুরলেন, এরপর তার উপর বসে পড়লেন।
তারপর বললেন, তোমার পাওনাদারদের ডাক। তিনি মেপে মেপে তাদের পাওনা আদায় করতে লাগলেন এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার পিতার সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলেন। আর আল্লাহর কসম, আমি এতেই সন্তুষ্ট যে, আমার পিতার ঋণ আল্লাহ পরিশোধ করে দেন এবং আমি আমার বোনদের কাছে একটি খেজুরও নিয়ে না ফিরি। কিন্তু আল্লাহর কসম! সমস্ত স্তুপই যেমন ছিল তেমন রয়ে গেল। আমি সেই স্তুপটির দিকে বিশেষ ভাবে তাকিয়ে ছিলাম, যার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে ছিলেন। মনে হল যে, তা থেকে একটি খেজুরও কমেনি।
আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, أُغْرُوا بِي এর অর্থ হল هِيجُوا بِي অর্থাৎ আমার কাছে জোর তাগাদা করতে লাগল। মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আমি তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্ধেষ জাগরুক রেখেছি। ’’ (৫: ১৪)
No comments:
Post a Comment