হাদীস নং-১৪২৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ’আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকেন এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকেন। মহিলাটি বললো, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর বান্দার উপর ফরযকৃ্ত হাজ্জ (হজ্জ) আমার বয়োবৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ (আদায় কর)। ঘটনাটি হাজ্জ হজ্জাতুল বিদা‘র সময়ের।
হাদীস নং-১৪২৬। আহমদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফা নামক স্থানে তাঁর বাহনের উপর আরোহণ করেন, বাহনটি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তিনি তালবিয়া উচ্চারণ করতে থাকেন।
হাদীস নং-১৪২৭। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তাল্বিয়া পাঠ যুল-হুলাইফা থেকে শুরু হত যখন তাঁর বাহন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতো। হাদীসটি আনাস ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদিসটি।
হাদীস নং-১৪২৮। আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনারা ‘উমরা করলেন, আর আমি ‘উমরা করতে পারলাম না! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ‘আবদুর রাহমান! তোমার বোন (আয়িশা)-কে সাথে করে নিয়ে তান’ঈম থেকে গিয়ে ‘উমরা করিয়ে নিয়ে এসো। তিনি ‘আয়িশাকে উটের পিঠে ছোট একটি হাওদার পশ্চাৎ ভাগে বসিয়ে দেন এবং তিনি ‘উমরা সমাপন করেন।
হাদীস নং-১৪২৯। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোন্টি? তিনি বলেনঃ হাজ্জ (হজ্জ)-ই-মাবরূর (মাকবূল হাজ্জ (হজ্জ)।
হাদীস নং-১৪৩০। আবদুর রাহমান ইবনু মুবারক (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আমল হল, হাজ্জে (হজ্জ) মাবরূর।
হাদীস নং-১৪৩১। আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাজ্জ (হজ্জ) করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তাঁর মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায়নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।
হাদীস নং-১৪৩২। মলিক ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) যায়দ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর কাছে তাঁর অবস্থান স্থলে যান, তখন তাঁর জন্য তাঁবু ও চাঁদওয়া টানানো হয়েছিল। [যায়দ (রাঃ) বলেন] আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন্ স্থান থেকে ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধা জায়িয হবে? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদ্বাসীদের জন্য কারন, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা ও সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা (ইহরামের মীকাত) নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৪৩৩। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বিশ্র (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানের অধিবাসীগণ হাজ্জে (হজ্জ) গমনকালে পাথেয় সংগে নিয়ে যেত না এবং তারা বলছিল, আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। কিন্তু মক্কায় উপনীত হয়ে তারা মানুষের দ্বারে যাঞ্ছা করে বেড়াতো। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ অবর্তীণ করেনঃ তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হাদিসটি ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) ‘আমর (রহঃ) সূত্রে ‘ইক্রিমা (রহঃ) থেকে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৪৩৪। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্রাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নজ্দবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ মক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হাজ্জের (হজ্জ) নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে)। এমন কি মক্কাবাসী মক্কা থেকেই (হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৪৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মদিনাবাসীগণ যুল-হুলাইফা থেকে, সিরিয়াবাসীগণ জুহ্ফা থেকে ও নজদবাসীগণ কারন থেকে ইহরাম বাঁধবে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি (অন্যের মাধ্যমে) জানতে পেরেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহ্রাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৪৩৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্রাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নজ্দবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। উল্লেখিত স্থানসমূহ হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান এবং মীকাতের ভিতরে স্থানের লোকেরা নিজ বাড়ি থেকে ইহ্রাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহ্রাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৪৩৭। ‘আলী ও আহমদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাতের সীমা নির্ধারিত করেছেন। তিনি বলেন, মদিনাবাসীদের মিকাত হল যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের মীকাত মাহয়া’আ যার অপর নাম জুহফা এবং নাজদবাসীদের মীকাত হল কারন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি শুনিনি, তবে লোকেরা বলে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীর মীকাত হল ইয়ালামলাম।
হাদীস নং-১৪৩৮। কুতায়বা (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য মিকাত নির্ধারণ করেন যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম ও নাজদবাসীদের জন্য কারন। উল্লেখিত স্থানসমূহ হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার নিয়্যাতকারী সে স্থানের অধিবাসী এবং সে সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য এলাকার অধিবাসীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান। আর যে মীকাতের ভিতরের অধিবাসী সে নিজ বাড়ি থেকে ইহ্রাম বাঁধবে। এমন কি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহ্রাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৪৩৯। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল ও ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম মীকাত নির্ধারণ করেছেন। উক্ত মীকাতসমূহ হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার উদ্দেশ্যে আগমনকারী সে স্থানের অধিবাসীদের জন্য এবং অন্য যে কোন অঞ্চলের লোক ঐ সীমা দিয়ে অতিক্রম করবে তাদের জন্যও। এ ছাড়াও যারা মীকাতের ভিতরের অধিবাসী তারা যেখান থেকে সফর শুরু করবে সেখান থেকেই (ইহরাম আরম্ভ করবে) এমন কি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই (ইহ্রাম বাঁধবে)।
হাদীস নং-১৪৪০। ‘আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ শহর দু’টি (কূফা ও বস্রা) বিজিত হল, তখন সে স্থানের লোকগন ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে নিবেদন করল, হে আমীরুল মু’মিনীন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসীগণের জন্য (মীকাত হিসাবে) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন কারন, কিন্তু তা আমাদের পথ থেকে দূরে। কাজেই আমরা কারন-সীমায় অতিক্রম করতে চাইলে তা হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তা’ হলে তোমরা লক্ষ্য কর তোমাদের পথে কারন-এর সম দূরত্ব-এরেখা কোন্ স্থানটি? তারপর তিনি যাতু’ইরক মীকাতরূপে নির্ধারণ করেছেন।
হাদীস নং-১৪৪১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফার বাত্হা নামক উপত্যকায় উট বসিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। (রাবী নাফি, বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।
হাদীস নং-১৪৪২। ইবরাহীম ইবনু মুন্যির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাজ্জের (হজ্জ) সফরে) শাজারা নামক পথ দিয়ে গমন করতেন এবং মু’আররাস নামক পথ দিয়ে (মদিনায়) প্রবেশ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে সফর করতেন, মসজিদুশ-শাজারায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন ও ফিরার পথে যুল-হুলাইফা’র বাত্নুল-ওয়াদীতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং সেখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
হাদীস নং-১৪৪৩। হুমায়দী (রহঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আকীক উপত্যকায় অবস্থানকালে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আজ রাতে আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক আমার নিকট এসে বললেন, আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করুন এবং বলুন, (আমার এ ইহরাম) হাজ্জের (হজ্জ) সাথে ‘উমরাও।
হাদীস নং-১৪৪৪। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, যুল-হুলাইফার (‘আকীক) উপত্যকায় রাত যাপনকালে তাঁকে স্বপ্নযোগে বলা হয়, আপনি বরকতময় উপত্যকায় অবস্থান করছেন। [রাবী মূসা ইবনু ‘উকবা (রহঃ) বলেন] সালিম (রহঃ) আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে উট বসিয়ে ঐ উট বসাবার স্থানটির সন্ধান চালান, যেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) উট বসিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাত যাপনের স্থানটি সন্ধান করতেন। সে স্থানটি উপত্যকায় মসজিদের নীচু জায়গায় অবতরণকারীদের ও রাস্তার একেবারে মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
হাদীস নং-১৪৪৫। মুহাম্মদ সাফ্ওয়ান ইবনু ই‘য়ালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ই‘য়ালা (রাঃ) ‘উমর (রাঃ)-কে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর ওহী অবতরণ মুহূর্তটি আমাকে দেখাবেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “জি‘রানা” নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তাঁর সঙ্গে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন ব্যাক্তি সুগন্ধিযুক্ত পোশাক পরে ‘উমরার ইহরাম বাঁধলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। এরপর তাঁর নিকট ওহী আসল। ‘উমর (রাঃ) ই‘য়ালা (রাঃ)-কে ইংগিত করায় তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন একখণ্ড কাপড় দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর ছায়া করা হয়েছিল, ই‘য়ালা (রাঃ) মাথা প্রবেশ করিয়ে দেখতে পেলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমণ্ডল লাল বর্ণ, তিনি সজোরে শ্বাস গ্রহণ করছেন। এরপর সে অবস্থা দূর হল। তিনি বললেনঃ ‘উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? প্রশ্নকারীকে উপস্থিত করা হলে তিনি বললেনঃ তোমার শরীরের সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল ও জুব্বাটি খুলে ফেল এবং হাজ্জে (হজ্জ) যা করে থাক ‘উমরাতেও তাই কর। (রাবী ইবনু জুরাইজ বলেন) আমি ‘আতা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি কি উত্তমরূপে পরিষ্কার করা বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ, তাই।
হাদীস নং-১৪৪৬। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) (ইহ্রাম বাঁধা অবস্থায়) যায়তুন তেল ব্যবহার করতেন। (রাবী মানসূর বলেন) এ বিষয় আমি ইব্রাহীম (রহঃ)-এর নিকট পেশ করলে তিনি বললেন, তাঁর কথায় তোমার কি দরকার! আমাকে তো আস্ওয়াদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ইহ্রাম বাঁধা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিথিতে যে সুগন্ধি তেল চকচক করছিল তা যেন আজও আমি দেখতে পাচ্ছি।
হাদীস নং-১৪৪৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহ্রাম বাঁধার সময় আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে ইহরাম খোলার সময়ও।
হাদীস নং-১৪৪৮। আস্বাগ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চুলে আঠালো দ্রব্য লাগিয়ে ইহ্রাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি।
হাদীস নং-১৪৪৯। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূল-হুলাইফার মসজিদের নিকট থেকে ইহ্রাম বেঁধেছেন।
হাদীস নং-১৪৫০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মুহরিম ব্যাক্তি কি প্রকারের কাপড় পরবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করবে না। তবে কারো জুতা না থাকলে সে টাখ্নুর নিচ পর্যন্ত মোজা কেটে (জুতার ন্যায়) পরবে। তোমরা জাফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার খুশবু) রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, মুহরিম ব্যাক্তি মাথা ধুতে পারবে। চুল আঁচড়াবে না, শরীর চুলকাবে না। মাথা ও শরীর থেকে উকুন যমীনে ফেলে দিবে।
হাদীস নং-১৪৫১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আরাফা থেকে মুয্দালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা থেকে মিনা পর্যন্ত ফযল [ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)]-কে তাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাঁরা উভয়েই বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং-১৪৫২। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়িয়ে, তেল মেখে, লুঙ্গি ও চাঁদর পরে (হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে) মদিনা থেকে রওয়ানা হন। তিনি কোন প্রকার চাঁদর বা লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেন নি, তবে শরীরের চামড়া রঞ্জিত হয়ে যেতে পারে এরূপ জাফরানী রঙের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। যুল-হুলাইফা থেকে সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি ও তাঁর সাহাবীগন তালবিয়া পাঠ করেন এবং কুরবানীর উটের গলায় মালা ঝুলিয়ে দেন, তখন যুলকা‘দা মাসের পাঁচদিন অবশিষ্ট ছিল। যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ দিনে মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম কাবাঘরের তাওয়াফ করে সাফা মারওয়ার মাঝে সা‘য়ী করেন। তাঁর কুরবানীর উটের গলায় মালা পরিয়েছেন বলে তিনি ইহরাম খুলেন নি। তারপর মক্কার উঁচু ভূমিতে হাজূন নামক স্থানের নিকটে অবস্থান করেন, তখন তিনি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামের অবস্থায় ছিলেন। (প্রথমবার) তাওয়াফ করার পর ‘আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পূর্বে আর কাবার নিকটবর্তী হন নি। অবশ্য তিনি সাহাবাগণকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা‘য়ী সম্পাদনা করে মাথার চুল ছেটে হালাল হতে নির্দেশ দেন। কেননা যাদের সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই, এ বিধানটি কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রয্যেজ্য। আর যার সাথে তার স্ত্রী রয়েছে তার জন্য স্ত্রী-সহবাস, সুগন্ধি ব্যবহার ও যে কোন ধরনের কাপড় পরা বৈধ।
হাদীস নং-১৪৫৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় চার রাক‘আত ও যুল-হুলাইফায় পৌঁছে দু’ রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তারপর ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন। এর পর যখন তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করেন এবং তা তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং-১৪৫৪। কুতাইবা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) চার রাক‘আত আদায় করেন এবং যুল-হুলাইফায় পৌঁছে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) দু’ রাক‘আত আদায় করেন। রাবী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন।
হাদীস নং-১৪৫৫। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) মদিনায় চার রাক‘আত আদায় করলেন এবং ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) যুল-হুলাইফায় দু’ রাক‘আত আদায় করেন। আমি শুনতে পেলাম তাঁরা সকলে উচ্চস্বরে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার তালবিয়া পাঠ করছেন।
হাদীস নং-১৪৫৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তালবিয়া নিম্নরূপঃ আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির, আমি হাযির; আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও সকল নিয়ামত আপনার এবং কর্তৃত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই।
হাদীস নং-১৪৫৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তালবিয়া পাঠ করতেন তা আমি ভালরূপে অবগত (তাঁর তালবিয়া ছিলঃ) আমি হাযির হে আল্লাহ! আমি হাযির, আমি হাযির, আপনার কোন অংশীদার নেই, আমি হাযির, সকল প্রশংসা ও সকল নিয়ামত আপনারই। আবূ মু‘আবিয়া (রহঃ) আ‘মাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সফিয়া (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। শু‘বা (রহঃ) আবূ ‘আতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেছি।
হাদীস নং-১৪৫৮। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে মদিনায় যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন চার রাক‘আত এবং যুল-হুলাইফায় (পৌঁছে) ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন দু’ রাক‘আত। এরপর সেখানেই ভোর পর্যন্ত রাত কাটালেন। সকালে সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে উপনীত হলেন। তখন তিনি আল্লাহর হামদ, তাসবীহ ও তাকবীর পাঠ করছিলেন। এরপর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার তালবিয়া পাঠ করলেন। সাহাবীগণও উভয়ের তালবিয়া পাঠ করলেন। যখন আমরা (মক্কার উপকণ্ঠে) পৌঁছলাম তখন তিনি সাহাবীগণকে (‘উমরা শেষ করে) হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। অবশেষে যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখে তাঁরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কিছুসংখ্যক দাঁড়ানো উট নহর (যবেহ্) করলেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় সাদা কাল মিশ্রিত রং-এর দু’টি মেষ যবেহ্ করেছিলেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, কোন কোন রাবী হাদীসটি আইয়ূ্ব (রহঃ) সূত্রে জনৈক রাবীর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস নং-১৪৫৯। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে তাঁর সাওয়ারী সোজা দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং-১৪৬০। সুলায়মান ইবনু দাঊদ আবূ রবী‘ (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মক্কা গমনের ইচ্ছা করলে দেহে সুগন্ধিহীন তেল লাগাতেন। তারপর যুল-হুলাইফা’র মসজিদে পৌঁছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সওয়ারীতে আরোহণ করতেন। তাঁকে নিয়ে সাওয়ারী সোজা দাঁড়িয়ে গেলে তিনি ইহ্রাম বাঁধতেন। এরপর তিনি ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৪৬১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম, লোকেরা দাজ্জালের আলোচনা করে বলল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাঁর দু’ চোখের মাঝে (কপালে) কা-ফি-র লেখা থাকবে। রাবী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনিনি। অবশ্য তিনি বলেছেনঃ আমি যেন দেখছি মূসা (আঃ) নীচু ভূমিতে অবতরণকালে তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং-১৪৬২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্লামা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বের হয়ে ‘উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে সে যেন ‘উমরার সাথে হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বেঁধে নেয়। তারপর সে ‘উমরা ও হাজ্জ (হজ্জ) উভয়টি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল হতে পারবে না। [‘আয়িশা (রাঃ) বলেন] এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা‘য়ী কোনটই আদায় করতে সমর্থ হলাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেনঃ মাতাহ চুল খুলে নাও এবং তা আঁচড়িয়ে নাও এবং হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বহাল রাখ এবং ‘উমরা ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম, হাজ্জ (হজ্জ) সম্পন্ন করার পর আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে তান‘ঈম-এ প্রেরণ করেন। সেখান থেকে আমি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ তোমরা (ছেড়ে দেওয়া) ‘উমরার স্থলবর্তী। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, যাঁরা ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা‘য়ী সমাপ্ত করে হালাল হয়ে যান এবং মিনা থেকে ফিরে আসার পর দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন আর যাঁরা হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা একবার তাওয়াফ করেন।
হাদীস নং-১৪৬৩। মক্কী ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে ইহ্রাম বহাল রাখার আদেশ দিলেন, এর পর জাবির (রাঃ) সুরাকা (রাঃ)-এর উক্তি বর্ণনা করেন। মুহাম্মদ ইবনু বকর (রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কোন্ প্রকার ইহ্রাম বেঁধেছ? ‘আলী (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহ্রামের অনুরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে কুরবানীর পশু প্রেরণ কর এবং ইহরাম অবস্থায় যেভাবে আছ সে ভাবেই থাক।
হাদীস নং-১৪৬৪। হাসান ইবনু ‘আলী খাল্লাল হুযালী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কী প্রকার ইহ্রাম বেঁধেছ? ‘আলী (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সংগে কুরবানীর পশু না হলে আমি হালাল হয়ে যেতাম।
হাদীস নং-১৪৬৫। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে আমার গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন; তিনি (হাজ্জ (হজ্জ)-এর সফরে) বাত্হা নামক স্থানে অবস্থানকালে আমি (ফিরে আসি) তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কোন্ প্রকার ইহ্রাম বেঁধেছ? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহ্রামের অনুরূপ আমি ইহরাম বেঁধেছি। তিনি বললেনঃ তোমার সংগে কুরবানীর পশু আছে কি? আমি বললাম, নেই। তিনি আমাকে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করতে আদেশ করলেন। আমি বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সা‘য়ী করলাম। পরে তিনি আদেশ করলে আমি হালাল হয়ে গেলাম। তারপর আমি আমার গোত্রীয় এক মহিলার নিকট আসলাম। সে আমার মাথা আঁচড়িয়ে দিল অথবা বলেছেন, আমার মাথা ধুয়ে দিল। এরপর ‘উমর (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে এক উপলক্ষে আসলেন। (আমরা তাঁকে বিষয়টি জানালে) তিনি বললেনঃ কুরানের নির্দেশ পালন কর। কুরআন তো আমাদেরকে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা পৃথক পৃথকভাবে যথাসময়ে পূর্ণরূপে আদায় করার নির্দেশ দান করে। আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে পূর্ণ কর” (২ ঃ ১৯৬)। আর যদি আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে অনুসরণ করি, তিনি তো কুরবানীর পশু যবেহ্ করার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং-১৪৬৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জ (হজ্জ)-এর মাসে, হাজ্জ (হজ্জ)-এর দিনগুলোতে, হাজ্জ (হজ্জ)-এর মৌসুমে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে (হাজ্জে (হজ্জ) বের হয়ে সারিফ নামক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণের কাছে বেরিয়ে ঘোষণা করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং যে এ ইহ্রাম ‘উমরার ইহ্রামে পরিণত করতে আগ্রহী, সে তা করতে পারবে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে তা পারবে না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, কয়েকজন সাহাবী ‘উমরা করলেন, আর কয়েকজন তা করলেন না। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সাহাবী (দীর্ঘ ইহ্রাম রাখতে) সক্ষম ছিলেন এবং তাঁদের সাথে কুরবানীর পশুও ছিল। তাই তাঁরা (শুধু) ‘উমরা করতে (ও পরে হালাল হয়ে যেতে) সক্ষম হলেন না। তিনি আরো বলেন, আমি কাঁদছিলাম, এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ওহে কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি সাহাবাদের যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি, কিন্তু আমার পক্ষে ‘উমরা করা সম্ভব নয়। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারছি না (আমি ঋতুবর্তী)। তিনি বললেনঃ এতে তোমার কন ক্ষতি নেই, তুমি আদম-সন্তানের এক মহিলা। সকল নারীর জন্য আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যও তাই নির্ধারণ করেছেন। কাজেই তুমি হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহ্রাম অবস্থায় থাক। আল্লাহ তোমাকে ‘উমরা করার সুযোগও দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জ (হজ্জ)-এর জন্য বের হয়ে মিনায় পৌঁছলাম। সে সময় আমি পবিত্র হলাম। পরে মিনা থেকে ফিরে (বায়তুল্লাহ পৌঁছে) তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সর্বশেষ দলে বের হলাম। তিনি মুহাস্সাব নামক স্থানে অবতরণ করেন, আমি তাঁর সাথে অবতরণ করলাম। এখানে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ তোমার বোন (‘আয়িশা)-কে নিয়ে হরম সীমারেখা হতে বেরিয়ে যাও। সেখান থেকে সে উমরার ইহ্রাম বেঁধে মক্কা থেকে ‘উমরা সমাধা করলে তাঁকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা বের হয়ে গেলাম এবং আমি ও আমার ভাই তাওয়াফ সমাধা করে ফিরে এসে প্রভাত হওয়ার আগেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছে গেলাম। ইয়িনি বললেনঃ কাজ সমাধা করেছ কি? আমি বললাম জী-হাঁ। তখন তিনি রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সকলেই মদিনার দিকে রওয়ানা করলেন।
হাদীস নং-১৪৬৭। ‘উসমান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম এবং একে হাজ্জের (হজ্জ) সফর বলেই জানতাম। আমরা যখন (মক্কায়) পৌঁছে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেনঃ যারা কুরবানীর পশু সংগে নিয়ে আসেনি তারা যেন ইহরাম ছেড়ে দেয়। তাই যিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনেননি তিনি ইহরাম ছেড়ে দেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীগণ তাঁরা ইহরাম ছেড়ে দিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি ঋতুবতী হয়েছিলাম বিধায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারিনি। (ফিরতি পথে) মুহাসসাব নামক স্থানে রাত যাপনকালে আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সকলেই ‘উমরা ও হাজ্জ (হজ্জ) উভয়টি সমাধা করে ফিরছে আর আমি কেবল হাজ্জ (হজ্জ) করে ফিরছি। তিনি বললেনঃ আমরা মক্কা পৌঁছলে তুমি কি সে দিনগুলোতে তওয়াফ করনি? আমি বললাম, জী-না। তিনি বললেন, তোমার ভাই-এর সাথে তান্‘ঈম চলে যাও, সেখান থেকে ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধবে। তারপর অমুক স্থানে তোমার সাথে সাক্ষাত ঘটবে। সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, আমার মনে হয় আমি আপনাদেরকে আটকে রাখার কারণ হয়ে যাচ্ছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কি বললে! তুমি কি কুরবানীর দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি! আমি বললাম, হাঁ করেছি। তিনি বললেনঃ তবে কোন আসুবিধা নেই, তুমি চল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এমতাবস্থায় আমার সাক্ষাত হল যখন তিনি মক্কা ছেড়ে উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি মক্কার দিকে অবতরণ করছি। অথবা ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি উঠছি ও তিনি অবতরণ করছেন।
হাদীস নং-১৪৬৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জ হজ্জাতুল বিদার বছর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ কেবল ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন, আর কেউ হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়টির ইহ্রাম বাঁধলেন। আর কেউ শুধু হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহ্রাম বাঁধলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহ্রাম বাঁধলেন। যারা কেবল হাজ্জ (হজ্জ) বা এক সংগে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধেছিলেন তাদের একজনও কুরবানী দিনের পূর্বে ইহ্রাম খোলেন নি।
হাদীস নং-১৪৬৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-কে (উসফান নামক স্থানে) দেখেছি, ‘উসমান (রাঃ) তামাত্তু ও হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা একত্রে আদায় করতে নিষেধ করতেন। ‘আলী (রাঃ) এ অবস্থা দেখে হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার ইহরাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেন- (হে আল্লাহ! আমি ‘উমরা ও হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বললেন, কারো কথায় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত বর্জন করতে পারব না।
হাদীস নং-১৪৭০। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা হাজ্জ (হজ্জ)-এর মাসগুলোতে ‘উমরা করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপের কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের স্থলে সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মনে করত। তারা বলত, উটের পিঠের যখম ভাল হলে, রাস্তার মুসাফিরের পদচিহ্ন মুছে গেল এবং সফর মাস অতিক্রান্ত হলে ‘উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যাক্তি ‘উমরা করতে পারবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহ্রাম বেঁধে (যিলহাজ্জ মাসের) চার তারিখ সকালে (মক্কায়) উপনীত হন। তখন তিনি তাঁদের এই ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। তাঁরা এ কাজকে কঠিন মনে করলেন (‘উমরা শেষ করে) তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের জন্য কি কি জিনিস হালাল? তিনি বললেনঃ সবকিছু হালাল (ইহরামের পূর্বে যা হালাল ছিল তাঁর সব কিছু এখন হালাল)।
হাদীস নং-১৪৭১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি আমাকে (ইহরাম ভঙ্গ করে) হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন।
হাদীস নং-১৪৭২। ইস্মা‘ঈল ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! লোকদের কি হল, তারা ‘উমরা শেষ করে হালাল হয়ে গেল, অথচ আপনি আপনার ‘উমরা থেকে হালাল হচ্ছেন না? তিনি বললেনঃ আমি মাথায় আঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং কুরবানীর জানোয়ারের গলায় মালা ঝুলিয়েছি। কাজেই কুরবানী করার পূর্বে হালাল হতে পারি না।
হাদীস নং-১৪৭৩। আদম (রহঃ) আবূ জামরা নাসর ইবনু ‘ইমরান যুবা‘য়ী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তামাত্তু‘ হাজ্জ (হজ্জ) করতে ইচ্ছা করলে কিছু লোক আমাকে নিষেধ করল। আমি তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা আমাকে করতে নির্দেশ দেন। এরপর আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন এক ব্যাক্তি আমাকে বলছে, উত্তম হাজ্জ (হজ্জ) ও মাকবূল ‘উমরা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট স্বপ্নটি বললাম। তিনি বললেন, তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত। এরপর আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে থাক, তোমাকে আমার মালের কিছু অংশ দিব। রাবী শু‘বা (রহঃ) বলেন, আমি (আবূ জামরাকে) বললাম, তা কেন? তিনি বললেন, আমি যে স্বপ্নে দেখেছি সে জন্য।
হাদীস নং-১৪৭৪। আবূ নু‘আইম (রহঃ) আবূ শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধে হাজ্জে (হজ্জ) তামাত্তু‘র নিয়্যতে তারবিয়্যা দিবস (আট তারিখ)-এর তিন দিন পূর্বে মক্কায় প্রবেশ করলাম, মক্কাবাসী কিছু লোক আমাকে বললেন, এখন তোমার হাজ্জের (হজ্জ) কাজ মক্কা থেকে শুরু হবে। আমি বিষয়টি জানার জন্য ‘আতা (রহঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর উট সংগে নিয়ে হাজ্জে (হজ্জ) আসেন তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সাহাবীগণ ইফরাদ হাজ্জ (হজ্জ)-এর নিয়্যাতে শুধু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায় পৌঁছে) তাদেরকে বললেনঃ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা‘য়ী সমাধা করে তোমরা ইহ্রাম ভঙ্গ করে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট কর। এরপর হালাল অবস্থায় থাক। যখন যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখ হবে তখন তোমরা হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহ্রাম বেঁধে নিবে, আর যে ইহ্রাম বেঁধে এসেছ তা তামাত্তু‘ হাজ্জের (হজ্জ) ‘উমরা বানিয়ে নিবে। সাহাবীগণ বললেন, এই ইহরামকে আমরা কিরূপে ‘উমরার ইহরাম বানাব? আমরা হাজ্জ (হজ্জ)-এর নাম নিয়ে ইহ্রাম বেঁধেছি। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে যা আদেশ করেছি তাই কর। কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে না আসলে তোমাদেরকে যা করতে বলছি, আমিও সেরূপ করতাম। কিন্তু কুরবানী করার পূর্বে (ইহরামের কারণে) নিষিদ্ধ কাজ (আমার জন্য) হালাল নয়। সাহাবীগণ সেরূপ পশু যবেহ করলেন। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, আবূ শিহাব (রহঃ) থেকে মারফূ‘ বর্ণনা মাত্র এই একটই পাওয়া যায়।
হাদীস নং-১৪৭৫। কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উসফান নামক স্থানে অবস্থানকালে ‘আলী ও ‘উস্মান (রাঃ)-এর মধ্যে হাজ্জে (হজ্জ) তামাত্তু‘ করা সম্পর্কে পরস্পরে দ্বিমত সৃষ্টি হয়। ‘আলী (রাঃ) ‘উসমান (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন, আপনি কি তা থেকে বারণ করতে চান? ‘উসমান (রাঃ) বললেন, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দিন। ‘আলী (রাঃ) এ অবস্থা দেখে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের ইহ্রাম বাঁধেন।
হাদীস নং-১৪৭৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আমরা হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করতে করতে (মক্কায়) উপনীত হলাম। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন, আমরা হাজ্জ (হজ্জ)কে ‘উমরায় পরিণত করলাম।
হাদীস নং-১৪৭৭। মূসা ইবনু ইস্মা‘ঈল (রহঃ) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে হাজ্জে (হজ্জ) তামাত্তু‘ করেছি, কুরআনেও তার বিধান নাযিল হয়েছে অথচ এক ব্যাক্তি তার ইচ্ছামত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
হাদীস নং-১৪৭৮। ইয়া‘কূব ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) হারামের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতেন। তারপর যী-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর সেখানে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন ও গোসল করতেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।
হাদীস নং-১৪৭৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোর পর্যন্ত যী-তুয়ায় রাত যাপন করেন, তারপর মক্কায় প্রবেশ করেন। (রাবী নাফি‘ বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ)-ও এরূপ করতেন।
হাদীস নং-১৪৮০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সানিয়্যা ‘উলয়া (হরমের উত্তর-পূর্বদিকে কাদা নামক স্থান দিয়ে) মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং সানিয়্যা সুফলা (হরমের দক্ষিন-পশ্চিমদিকে কুদা নামক স্থান) দিয়ে বের হতেন।
হাদীস নং-১৪৮১। মূসা’দ্দাদ ইবনু মূসা রহাদ বাসরী (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাত্হায় অবস্থিত সানিয়্যা ‘উলয়ার কাদা নামক স্থান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং সানিয়্যা সুফ্লার দিক দিয়ে বের হন।
হাদীস নং-১৪৮২। হুমাইদী (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসেন তখন এর উচ্চ স্থান দিয়ে প্রবেশ করেন এবং নীচু স্থান দিয়ে ফিরার পথে বের হন।
হাদীস নং-১৪৮৩। মাহমূদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা-এর পথে (মক্কায়) প্রবেশ করেন এবং বের হন কুদা-এর পথে যা মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থিত।
হাদীস নং-১৪৮৪। আহমদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা নামক স্থান দিয়ে মক্কার উঁচু ভূমির দিক থেকে মক্কায় প্রবেশ করেন। রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন, (আমার পিতা) ‘উরওয়া (রহঃ) কাদা ও কুদা উভয় স্থান দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করতেন। তবে অধিকাংশ সময় কুদা দিয়ে প্রবেশ করতেন, কেননা তাঁর বাড়ি এ পথে অধিক নিকটবর্তী ছিল।
হাদীস নং-১৪৮৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ওহ্হাব (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার উঁচু ভূমি কাদা দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করেন। [রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন] ‘উরওয়া (রহঃ) অধিকাংশ সময় কুদা-এর পথে প্রবেশ করতেন, কেননা তাঁর বাড়ি এ পথের অধিক নিকটবর্তী ছিল।
হাদীস নং-১৪৮৬। মূসা (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর কাদা-এর পথে মক্কায় প্রবেশ করেন। [রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন] ‘উরওয়া উভয় পথেই প্রবেশ করতেন, তবে কুদা-এর পথে তাঁর বাড়ি নিকটবর্তী হওয়ায় কারণে সে পথেই অধিকাংশ সময় প্রবেশ করতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, কাদা ও কুদা দু’টি স্থানের নাম।
হাদীস নং-১৪৮৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কাবা ঘর পুনঃনির্মাণের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আব্বাস (রাঃ) পাথর বহন করছিলেন। ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের ওপর দিয়ে নাও। তিনি তা করলে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং তাঁর উভয় চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। তখন তিনি বললেনঃ আমার লুঙ্গি দাও এবং তা বেঁধে নিলেন।
হাদীস নং-১৪৮৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ তুমি কি জানো না! তোমার সম্প্রদায় যখন কাবা ঘরের পুনঃনির্মাণ করেছিল তখন ইব্রাহীম (‘আ) কর্তৃক কাবাঘরের মূল ভিত্তি থেকে তা সংকুচিত করেছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি একে ইবরাহীমী ভিত্তির উপর পুনঃস্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায়ের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্য আমি তা করতাম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর) (রাঃ) বলেন, যদি ‘আয়িশা (রাঃ) নিশ্চিতরূপে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহিমী ভিত্তির উপর নির্মিত না হওয়ার কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দু‘টি কোণ স্পর্শ করতেন না।
হাদীস নং-১৪৮৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলাম, (হাতীমের) দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত, তিনি বললেনঃ হাঁ। আমি বললাম, তা‘হলে তারা বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করল না কেন? তিনি বললেনঃ তোমার গোত্রের (অর্থাৎ কুরাইশের কাবা নির্মাণের) সময় অর্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি বললাম, কাবার দরজা এত উঁচু হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেনঃ তোমার কওম তা এ জন্য করেছে যে, তারা যাকে ইচ্ছা তাকে ঢুকতে দিবে এবং যাকে ইচ্ছা নিষেধ করবে। যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়্যাতের নিকটবর্তী না হত এবং আশঙ্কা না হত যে, তারা একে ভাল মনে করবে না, তা হলে আমি দেয়ালকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর করে দিতাম।
হাদীস নং-১৪৯০। ‘উবাইদ ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ যদি তোমার গোত্রের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্যই কাবাঘর ভেঙ্গে ইব্রাহীম (‘আ)-এর ভিত্তির উপর তা পুনঃনির্মাণ করতাম। কেননা কুরায়শগন এর ভিত্তি সংকুচিত করে দিয়েছে। আর আমি আরও একটা দরজা করে দিতাম।
হাদীস নং-১৪৯১। বায়ান ইবনু ‘আম্র ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেনঃ হে ‘আয়িশা! যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হত তা হলে আমি কাবা ঘর সম্পর্কে নির্দেশ দিতাম এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হত। তারপর বাদ দেওয়া অংশটুকু আমি ঘরের অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তা ভূমি বরাবর করে দিতাম ও পূর্ব-পশ্চিমে এর দু‘টি দরজা করে দিতাম। এভাবে কাবাকে ইব্রাহীম (‘আ) নির্মিত ভিত্তিতে সম্পন্ন করতাম। (বর্ণনাকারী বলেন), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ উক্তি কাবাঘর ভাঙ্গতে (‘আবদুল্লাহ) ইবনু যুবাইর (রহঃ)-কে অনুপ্রানিত করেছে। (রাবী) ইয়াযীদ বলেন, আমি ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি তিনি যখন কাবা ঘর ভেঙ্গে তা পুনঃনির্মান করেন এবং বাদ দেওয়া অংশটুকু (হাতীম) তার সাথে সংযোজিত করেন এবং ইবরাহীম (‘আ)-এর নির্মিত ভিত্তির পাথরগুলো উটের কুঁজোর ন্যায় আমি দেখতে পেয়েছি। (রাবী) জরীর (রহঃ) বলেন, আমি তাকে (ইয়াযীদকে) বললাম, কোথায় সেই ভিত্তিমূলের স্থান? তিনি বললেন, এখনই আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব। আমি তাঁর সাথে বাদ দেওয়া দেয়াল বেষ্টনীতে (হাতীমে) প্রবেশ করলাম। তখন তিনি একটি স্থানের দিকে ইংগিত করে বললেন, এইখানে। জরীর (রহঃ) বলেন, দেওয়াল বেষ্টিত স্থানটুকু পরিমাপ করে দেখলাম ছয় হাত বা তার কাছাকাছি।
হাদীস নং-১৪৯২। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ (মক্কা) শহরকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন, এর একটি কাঁটাও কর্তন করা যাবে না, এতে বিচরণকারী শিকারকে তাড়া করা যাবে না, এখানে মু‘আরিফ (১) ব্যতীত পড়ে থাকা কোন বস্তু কেউ তুলে নিবে না। ১ মু‘আরিফঃ পড়ে থাকা বস্তু সংগ্রহ করে মালিকদের নিকট তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যে ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়।
হাদীস নং-১৪৯৩। আসবাগ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি মক্কায় অবস্থিত আপনার বাড়ির কোন্ স্থানে অবস্থান করবেন? তিনি বললেনঃ ‘আকীল কি কোনো সম্পত্তি বা ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে? ‘আকীল এবং তালিব আবূ তালিবের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন, জাফর ও ‘আলী (রাঃ) হন নি। কেননা তাঁরা দু’জন ছিলেন মুসলমান। ‘আকীল ও তালিব ছিল কাফির। এ জন্যই ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলতেন, মু’মিন কাফির-এর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। ইবনু শিহাব (যুহরী) (রহঃ) বলেন, (পূর্ববর্তিগণ নিম্ন উদ্ধৃত আয়াতে উক্ত বিলায়াতকে উত্তরাধিকার বলে) এই তাফসীর করতেন। আল্লাহ বলেনঃ যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের জানোমাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে, তাঁরা একে অপরের ওলী (উত্তরাধিকার) হবে (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। (৮:৭২)।
হাদীস নং-১৪৯৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মিনা থেকে ফিরে) যখন মক্কা প্রবেশের ইচ্ছা করলেন তখন বললেনঃ আগামীকাল খায়ফ বনী কেনানায় (মুহাসসাবে) ইনশাআল্লাহ আমাদের অবস্থানস্থল হবে যেখানে তারা (বনূ খায়ফ ও কুরায়শগণ) কুফরীর উপর শপথ নিয়েছিল।
হাদীস নং-১৪৯৫। হুমাইদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিনে মিনায় অবস্থানকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা আগামীকাল (ইনশাআল্লাহ) খায়ফ বনী কিনানায় অবতরণ করব, যেখানে তারা কুফরীর উপরে শপথ নিয়েছিল। (রাবী বলেন) খায়ফ বনী কিনানাই হল মুহাসসাব। কুরায়শ ও কিনানা গোত্র বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিব-এর বিরুদ্ধে এই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, যে পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের হাতে সমর্পণ করবে না সে পর্যন্ত তাদের সাথে বিয়ে-শাদী ও বেচা-কেনা বন্ধ থাকবে। সালামা (রহঃ) ‘উকাইল (রহঃ) সূত্রে এবং ইয়াহ্ইয়া ইবনু যাহ্হাক (রহঃ) আওযায়ী (রহঃ) সূত্রে ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত এবং তাঁরা উভয়ে [সালামা ও ইয়াহইয়া (রহঃ)] বনূ হাশিম ও বনুল মুত্তালিব বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, বনী মুত্তালিব হওয়াই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হাদীস নং-১৪৯৬। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাঘর ধ্বংস করবে।
হাদীস নং-১৪৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর এবং মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয হওয়ার পূর্বে মুসলিমগণ ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। সে দিনই কাবাঘর (গিলাফে) আবৃত করা হতো। তারপর আল্লাহ যখন রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয করলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে।
হাদীস নং-১৪৯৮। আহমদ ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজূজ ও মাজূজ বের হওয়ার পরও বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা পেলিত হবে। আবান ও ‘ইমরান (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় হাজ্জাজ ইবনু হাজ্জাজের অনুসরণ করেছেন। ‘আবদুর রাহমান (রহঃ) শু‘বা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। প্রথম রিওয়ায়াতটি অধিক গ্রহনযোগ্য। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, কাতাদা (রহঃ) রিওয়ায়াতটি ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে এবং ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে শুনেছেন।
হাদীস নং-১৪৯৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ওয়াহ্হাব এবং কাবীসা (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কাবার সামনে আমি শায়বার সাথে কুরসীতে বসলাম। তখন তিনি বললেন, ‘উমর (রাঃ) এখানে বসেই বলেছিলেন, আমি কাবা ঘরে রক্ষিত সোনা ও রূপা বণ্টন করে দেওয়ার ইচ্ছা করেছি। (শায়বা বলেন) আমি বললাম, আপনার উভয় সঙ্গী [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাক্র (রাঃ)] তো এরূপ করেন নি। তিনি বললেন, তাঁরা এমন দু’ ব্যাক্তিত্ব যাঁদের অনুসরণ আমি করব।
হাদীস নং-১৫০০। ‘আম্র ইবনু ‘আলী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি যেন দেখতে পাচ্ছি কাল বর্ণের বাঁকা পা বিশিষ্ট লোকেরা (কাবাঘরের) একটি একটি করে পাথর খুলে এর মূল উৎপাটন করে দিচ্ছে।
হাদীস নং-১৫০১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কা’বাঘর ধ্বংস করবে।
হাদীস নং-১৫০২। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। পরিচ্ছেদঃ কা’বা ঘরের দরজা বন্ধ করা এবং কা’বাঘরের ভিতর যে কোণে ইচ্ছা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা।
হাদীস নং-১৫০৩। কুতাইবা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উসামা ইবনু যায়দ, বিলাল ও ‘উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) বায়াতুল্লাহর ভিতর প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। যখন খুলে দিলেন তখন প্রথম আমিই প্রবেশ করলাম এবং বিলালের সাক্ষাত পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাবার ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়ামানের দিকের দু’টি স্তম্ভের মাঝখানে।
হাদীস নং-১৫০৪। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি কা’বা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতেন, তখন দরজা পিছনে রেখে সোজা সম্মুখের দিকে চলে যেতেন, এতদূর অগ্রসর হতেন যে, সম্মুখের দেয়ালটি মাত্র তিন হাত দূরে থাকতো এবং বিলাল (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অবশ্য কাবার ভিতরে যে কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করাতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৫০৫। মুহাদ্দাদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করতে গিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে ঐ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাকে লোকদের থেকে আড়াল করে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ভিতর প্রবেশ করেছিলেন কি না- - জনৈক ব্যাক্তি আবূ আওফা (রাঃ)- এর নিকট তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, না।
হাদীস নং-১৫০৬। আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (মক্কা) এলেন, তখন কা’বা ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানোান। কেননা কা’বাঘরের ভিতর মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলেন এবং মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হল। (এক পর্যায়ে) ইবরাহীম ও ইসমা’ইল (‘আ)- এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়- তাদের উভয়ের হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ! (মুশরিকদের) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তারা জানে যে, [ ইব্রাহীম ও ইসমা’ঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম ] তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেন নি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা ঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবীর বলেন। কিন্তু ঘরের ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি।
হাদীস নং-১৫০৭। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগনকে নিয়ে মক্কা আগমন করলে মুশরিকরা মন্তব্য করল, এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ইয়াসরিব- এর (মদিনার) জ্বর দুর্বল করে দিয়েছে (এ কথা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম সাহাবাগনকে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করতে (উভয় কাঁধ হেলেদুলে জোর কদমে চলতে) এবং উভয় রুকনের মধ্যবর্তী স্থানটুকু স্বাভাবিক গতিতে চলতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবাদের প্রতি দয়াবশত সব কয়টি চক্করে রমল করতে আদেশ করেন নি।
হাদীস নং-১৫০৮। আসবাগ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কায় উপনীত হয়ে তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (চম্বুন , স্পর্শ) করতে এবং সাত চক্করের মধ্যে প্রথম তিন চক্করে রমল করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৫০৯। মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা তাওয়াফে (প্রথম) তিন চক্করে রমল করেছেন, অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে চলেছেন। লাইস (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় সুরাইজ ইবনু নু’মান (রহঃ)- এর অনুসরণ করে বলেন, কাসীর ইবনু ফারকাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৫১০। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে! আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিতরুপে জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি চুম্বন করলেন। পরে বললেন, আমাদের রমল করার উদ্দেশ্য কি ছিল? আমরা তো রমল করে মুশরিকদেরকে আমাদের শক্তি প্রদর্শন করেছিলাম। আল্লাহ এখন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরপর বললেন, যেহেতু এই (রমল) কাজটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, তাই তা পরিত্যাগ করা পছন্দ করি না।
হাদীস নং-১৫১১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (তাওয়াফ করার সময়) এ দু’টি রুকুন ইসতিলাম করতে দেখেছি, তখন থেকে ভীড় থাকুক বা নাই থাকুক কোন অবস্থাতেই এ দু’- এর ইসতিলাম করা বাদ দেইনি। [রাবী ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন] আমি নাফি’কে (রহঃ) জিজ্ঞাসা করলাম, ইবনু ‘উমর (রাঃ) কি ঐ দু’রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিক গতিতে চলতেন? তিনি বললেন, সহজে ইস্তিলাম করার উদ্দেশ্যে তিনি (এতদুভয়ের মাঝে) স্বাভাবিকভাবে চলতেন।
হাদীস নং-১৫১২। আহমদ ইবনু সালিদ ও ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহণ করে তাওয়াফ করার সময় ছড়ির মাধ্যমে হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করেন। দ্বারাওয়ার্দী (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় ইউনুস (রহঃ)- এর অনুসরণ করে ইবনু আবিয-যূহরী (রহঃ) সূত্রে তার চাচা (যুহরী) (রহঃ) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদীস নং-১৫১৩। আবূল ওলীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম -কে কেবল ইয়ামানী দু’ রুকনকে ইস্তিলাম করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৫১৪। আহমদ ইবনু সিনান (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে দখেছি। আর তিনি বললেন, যদি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমিও তোমায় চুম্বন করতাম না।
হাদীস নং-১৫১৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) যুবাইর ইবনু ‘আরাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি হজরে আসওয়াদ সম্পর্কে ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি। সে ব্যাক্তি বলল, যদি ভীড়ে আটকে যাই বা অপারগ হই তাহলে (চুম্বন করা, না করা সম্পর্কে) আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, আপনার অভিমত কি? এ কথাটি ইয়ামনে রেখে দাও। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ ফেরেবরী (রহঃ) বলেন, আমি আবূ জা’ফর (রহঃ)-এর কিতাবে পেয়েছি তিনি বললেন, আবূ ‘আবদুল্লাহ যুবাইর ইবনু ‘আদী (রহঃ) তিনি হলেন কূফী আর যুবাইর ইবনু ‘আরাবী (রহঃ) তিনি হলেন বসরী।
হাদীস নং-১৫১৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে (আরোহণ করে) বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছু দিয়ে তার প্রতি ইশারা করতেন।
হাদীস নং-১৫১৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনি তিনি হজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছুর দ্বারা তার দিকে ইশারা করতেন এবং তাকবীর বলতেন। ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) খালিদ হাযযা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় খালিদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর আনুসরন করেছেন।
হাদীস নং-১৫১৮। আসবাগ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। (রাবী) ‘উরওয়া (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এই তাওয়াফটি ‘উমরার তাওয়াফ ছিল না। (তিনি আরো বলেন) তারপর আবূ বকর ও ‘উমর (রাঃ) অনুরুপভাবে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন। এরপর আমার পিতা যুবাইর (রাঃ)-এর সাথে আমি হাজ্জ (হজ্জ) করেছি তাতেও দেখেছি যে, সর্বপ্রথম তিনি তাওয়াফ করেছেন। এরপর মুহাজির, আনসার সকল সাহাবা (রাঃ)-কে এরূপ করতে দেখেছি। আমার মা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি, তার বোন এবং যুবাইর ও অমুক অমুক ব্যাক্তি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছেন, যখন তারা তাওয়াফ সমাধা করেছেন, হালাল হয়ে গেছেন।
হাদীস নং-১৫১৯। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা উভয় অবস্থায় সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করতেন, তার প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলতেন। তাওয়াফ শেষে দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সাফা ও মারওয়ায় সা’য়ী করতেন।
হাদীস নং-১৫২০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ পৌছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন। সাফা ও মারওয়ায় সা’য়ী করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু দ্রুতগতিতে চলতেন।
হাদীস নং-১৫২১। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেনঃ বাহনে আরোহণ করে মানুষের পেছনে থেকে তাওয়াফ কর। আমি মানুষের পেছনে পেছনে থেকে তাওয়াফ করছিলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা ঘরের পাশ্বে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং তিনি --এই (সূরাটি) তিলাওয়াত করেছিলেন।
হাদীস নং-১৫২২। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় এক ব্যাক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, সে চামড়ার ফিতা বা সূতা অথবা অন্য কিছু দ্বারা আপন হাত অপর এক ব্যাক্তির সাথে বেঁধে দিয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তাঁর বাঁধন ছিন্ন করে বললেনঃ হাত ধরে টেনে নাও।
হাদীস নং-১৫২৩। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে দেখতে পেলেন এ অবস্থান যে, চাবুকের ফিতা বা অন্য কিছু দিয়ে (তাঁকে টেনে নেওয়া হচ্ছে)। তখন তিনি তা ছিন্ন করে দিলেন।
হাদীস নং-১৫২৪। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) পূর্বে যে হাজ্জে (হজ্জ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)- কে আমীর নিযুক্ত করেন, সে হাজ্জে (হজ্জ) কুরবানীর দিন [ আবূ বকর (রাঃ)] আমাকে একদল লোকের সঙ্গে পাঠালেন, যারা লোকদের কাছে ঘোষণা করবে যে, এ বছরের পর থেকে কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করবে না এবং বিবস্ত্র হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না।
হাদীস নং-১৫২৫। কূতায়বা (রহঃ) ‘আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘উমর (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘উমরাকারীর জন্য সাফা ও মারওয়া সা‘য়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে কি? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তারপর সাফা ও মারওয়া সা‘য়ী করেন। এরপর ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিলাওয়াত করেন, “তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। ” (রাবী) ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়।
হাদীস নং-১৫২৬। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে তাওয়াফ করে, সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করেন, এরপর (প্রথম) তাওয়াফের পর ‘আরাফা থেকে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হন নি (তাওয়াফ করেন নি)।
হাদীস নং-১৫২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -নিকট অসুস্থতার কথা জানালাম, অন্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু হারব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী উম্মু সালাkমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে প্রস্থান করার ইচ্ছা করলে উম্মু সালামা (রাঃ)-ও মক্কা ত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, অথচ তিনি (অসুস্থতার কারনে) তখনও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারেন নি। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁকে বললেনঃ যখন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেওয়া হবে আর লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকবে, তখন তোমর উটে আরোহণ করে তুমি তাওয়াফ আদায় করে নিবে। তিনি তাই করলেন। এরপর (তাওয়াফের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পূর্বেই মক্কা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
হাদীস নং-১৫২৮। আদম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সাত চক্করে (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর সাফার দিকে বেরিয়ে গেলেন। [ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন] মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। ”
হাদীস নং-১৫২৯। হাসান ইবনু ‘উমর বাসরী (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কিছু লোক ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করল। তারপর তারা নসীহতকারীর (নসীহত শোনার জন্য) বসে গেল। অবশেষে সূর্যোদয় হলে তারা দাঁড়িয়ে (তাওয়াফের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তারা বসে রইল আর যে সময়টিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা মাকরূহ তখন তারা সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে গেল!
হাদীস নং-১৫৩০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি সূর্যোদয়ের সময় এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং-১৫৩১। হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রূফায়’ই (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর তাওয়াফ করতে এবং দু’ রাক’আত (তাওয়াফের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) আরও বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরের) এই দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা ব্যতীত তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন না।
হাদীস নং-১৫৩২। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখন তাঁর হাতের বস্তু (লাঠি) দিয়ে ইশারা করতেন ও তাকবীর বলতেন।
হাদীস নং-১৫৩৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেনঃ তুমি সাওয়ার হয়ে লোকদের পিছন দিক দিয়ে তাওয়াফ করে নাও। তাই আমি তাওয়াফ করছিলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন ও সূরা তিলাওয়াত করছিলেন।
হাদীস নং-১৫৩৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাজীদের পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে মিনায় অবস্থানের রাতগুলো মক্কায় কাটানোর অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন।
হাদীস নং-১৫৩৫। ইসহাক ইবনু শাহীন (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার স্থানে এসে পানি চাইলেন, ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে ফাযল! তোমরা মার নিকট যাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য তাঁর নিকট থেকে পানীয় নিয়ে এস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এখান থেকেই পান করান। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! লোকেরা এই পানিতে হাত রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এখান থেকেই দিন এবং এই পানি থেকেই পান করলেন। এরপর যমযম কূপের নিকট এলেন। লোকরা পানি তুলে (হাজীদের) পান করাচ্ছিল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কাজ করে যাও। তোমরা নেক কাজে রত আছ। এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা পরাভুত হয়ে যাবে এ আশঙ্কা না থাকলে আমি নিজেই নেমে (বালতির) রজ্জু এখানে নিতাম; এ বলে তিনি আপন কাঁধের প্রতি ইশারা করেন।
হাদীস নং-১৫৩৬। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যমযমের পানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (রাবী’) ‘আসিম বলেন, ‘ইকরিমা (রহঃ) হলফ করে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উটের পিঠে আরোহী অবস্থায়ই ছিলেন।
হাদীস নং-১৫৩৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম এবং ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার সাথে হাদী-এর জানোয়ার আছে সে যেন হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধে নেয়। তারপর উভয় কাজ সমাপ্ত না করা পর্যন্ত সে হালাল হবে না। আমি মক্কায় উপনীত হয়ে ঋতুবর্তী হলাম। যখন আমরা হাজ্জ (হজ্জ) সমাপ্ত করলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকে তান’ঈম প্রেরণ করলেন। এরপর আমি ‘উমরা পালন করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ হল তোমার পূর্ববর্তী (অসমাপ্ত) ‘উমরার স্থলবর্তী। ঐ হাজ্জের (হজ্জ) সময় যারা (কেবল) ‘উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে এসেছিলেন, তাঁরা তাওয়াফ করে হালাল হয়ে গেলেন। এরপর তাঁরা মিনা হতে প্রত্যাবর্তন করে দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করেন। আর যারা একসাথে ‘উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) নিয়ত করেছিলেন, তাঁরা একবার তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং-১৫৩৮। ইয়া’কূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) তাঁর ছেলে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ-এর নিকট গেলেন, যখন তাঁর (হাজ্জ (হজ্জ) যাত্রার) বাহন প্রস্তুত, তখন তাঁর ছেলে বললেন, আমার আশঙ্কা হয়- এ বছর মানুষের মধ্যে লড়াই হবে, তাঁরা আপনাকে কা’বায় যেতে বাধা দিবে। কাজেই এবার নিবৃত্ত হওয়াটাই উত্তম। তখন ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার রওনা হয়েছিলেন, কুরায়শ কাফিররা তাঁকে বায়তুল্লাহয় যেতে বাধা দিয়েছিল। আমাকেও যদি বায়তুল্লাহয় বাধা দেওয়া হয়, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন, আমিও তাই করব। কেননা নিশ্চিয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল -এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। এরপর তিনি বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকেো, আমি ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)-এর সংকল্প করছি। (রাবী) নাফি (রহঃ) বলেন, তিনি মক্কায় উপনীত হয়ে উভয়টির জন্য মাত্র একটি তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং-১৫৩৯। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য মক্কায় আসেন, ঐ বছর ইবনু ‘উমর (রাঃ) হাজ্জের (হজ্জ) এরাদা করেন। তখন তাঁকে বলা হল, (বিবদমান দু’ দল) মানুষের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, আপনাকে তাঁরা বাধা দিবে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল -এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। কাজেই এমন কিছু হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন আমিও তাই করব। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি ‘উমরার সংকল্প করলাম। এরপর তিনি বের হলেন এবং বায়দার উঁচু অঞ্চলে পৌঁছার পর তিনি বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার বিধান একই, তোমরা সাক্ষী থেকেো, আমি ‘উমরার সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ)ও নিয়াত করলার এবং তিনি কুদায়দ থেকে ক্রয় করা একটি হাদী পাঠালেন, এর অতিরিক্ত কিছু করেন নি। এরপর তিনি কুরবানী করেন নি এবং ইহরামও ত্যাগ করেন নি এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটা কোনটাই করেন নি। অবশেষে কুরবানীর দিন এলে তিনি কুরবানী করলেন, মাথা মুণ্ডালেন। তাঁর অভিমত হল, প্রথম তাওয়াফ-এর মাধ্যমেই তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের তাওয়াফ সেরে নিয়েছেন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করেছেন।
হাদীস নং-১৫৪০। আহমদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রাহমান ইবনু নাওফাল কুরাশী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাজ্জ (হজ্জ) সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাজ্জ (হজ্জ)–এর বিষয়টি ‘আয়িশা (রাঃ) আমাকে এইরূপে বর্ণনা দিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন। তা ‘উমরার তাওয়াফ ছিল না। পরে আবূ বকর (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন, তিনিও হাজ্জের (হজ্জ) প্রথম কাজ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ দ্বারাই শুরু করতেন, তা ‘উমরার তাওয়াফ ছিল না। তারপর ‘উমর (রাঃ)-ও অনুরূপ করতেন। এরপর ‘উসমান (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করেন। আমি তাকেও (হাজ্জের (হজ্জ) কাজ) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ দ্বারাই শুরু করতে দেখেছি, তাঁর এই তাওয়াফও ‘উমরার তাওয়াফ ছিল না। মু’আবিয়া এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) (অনুরূপ করেন)। এরপর আমি আমার পিতা যুবাইর ইবনু ‘আওয়াম (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করলাম। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ থেকেই শুরু করেন, আর তাঁর এ তাওয়াফ ‘উমরার তাওয়াফ ছিল না। সবশেষে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)- কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। তিনিও সে তাওয়াফ ‘উমরার তাওয়াফ হিসাবে করেন নি। ইবনু ‘উমর (রাঃ) তো তাদের নিকটেই আছেন তাঁর কাছে জেনে নিন না কেন? সাহাবীগনের মধ্যে যারা অতীত হয়ে গেছেন তাদের কেউই মসজিদে হারামে প্রবেশ করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সমাধা করার পূর্বে অন্য কোন কাজ করতেন না এবং তাওয়াফ করে ইহরাম ভঙ্গ করতেন না। আমার মা (আসমা) ও খালা (আয়িশা) (রাঃ)-কে দেখেছি, তাঁরা উভয়ে মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম তাওয়াফ সমাধা করেন, কিন্তু তাওয়াফ করে ইহরাম ভঙ্গ করেন নি। আমার মা আমাকে বললেন যে, তিনি, তাঁর বোন [আয়িশা (রাঃ)] ও (আমার পিতা) যুবাইর (রাঃ) এবং অমুক অমুক ‘উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধেন। এরপর তাওয়াফ (ও সা’য়ী) শেষে হালাল হয়ে যান।
হাদীস নং-১৫৪১। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মহান আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? (অনুবাদ) সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কাজেই যে কেউ কা’বাঘরে হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা সম্পন্ন করে, এ দু’টির মাঝে যাতায়াত করলে তাঁর কোন দোষ নেই। (২ : ১৫৮) (আমার ধারনা যে,)সাফা-মারওয়ার মাঝে কেউ সা’য়ী না করলে তাঁর কোন দোষ নেই। তখন তিনি [‘আয়িশা (রাঃ)] বললেন, হে ভাতিজা! তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। কেননা, যা তুমি তাফসীর করলে, যদি আয়াতের মর্ম তাই হতো, তাহলে আয়াতের শব্দবিন্যাস এভাবে হতো _ দুটোর মাঝে সা’য়ী না করায় কোন দোষ নেই! কিত্তু আয়াতটি আনসারদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহনের পূর্বে মুশাল্লাল নামক স্থানে স্থাপিত মানাত নামের মূর্তির পূজা করত, তাঁর নামেই তাঁরা ইহরাম বাঁধত। সে মূর্তির নামে যারা ইহরাম বাঁধত তাঁরা সাফা-মারওয়া সা’য়ী করাকে দোষ মনে করত। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পূর্বে আমরা সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করাকে দূষণীয় মনে করতাম (এখান কি করবো?) এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ পাক --- অবতীর্ণ করেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, (সাফা ও মারওয়ার মাঝে) উভয় পাহাড়ের মাঝে সা’য়ী করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধান দিয়েছেন। কাজেই কারো পক্ষে এ দু’য়ের সা’য়ী পরিত্যাগ করা ঠিক নয়। (রাবী) এ বছর আবূ বকর ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-কে ঘটনাটি জানোলাম। তখন তিনি বললেন, আমি তো এ কথা শুনিনি, তবে ‘আয়িশা (রাঃ) ব্যতীত বহু ‘আলিমকে উল্লেখ করতে শুনেছি জে, মানাতের নামে যারা ইহরাম বাঁধত তাঁরা সকলেই সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করত, যখন আল্লাহ কুরআনে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা উল্লেখ করলেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার আলোচনা তাতে হল না, তখন সাহাবাগন বলতে লাগলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করতাম, এখন দেখি আল্লাহ কেবল বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা অবতীর্ণ করেছেন, সাফার উল্লেখ করেন নি। কাজেই সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা’য়ী করলে আমাদের দোষ হবে কি? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা অবতীর্ণ করেন -- আবূ বকর (রাঃ) আরো বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি, আয়াতটি দু’ প্রকার লোকদের উভয়ের প্রতি লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ যারা জাহেলী যুগে সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করা হতে বিরত থাকতেন, আর যারা তৎকালে সা’য়ী করত বটে, কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সা’য়ী করার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের দ্বিধার কারন ছিল আল্লাহ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার কথা উল্লেখ করেন নি? অবশেষে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের কথা আলোচনা করার পর আল্লাহ সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করার কথা উল্লেখ করেন।
হাদীস নং-১৫৪২। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু মায়মূন) (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ-ই-কুদূমের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন ও পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা’য়ীর সময় বাতনে মসীলে দ্রুত চলতেন। আমি (‘উবাঈদুল্লাহ) নাফি’কে বললাম, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কি রুকন ইয়ামানীতে পৌছে হেঁটে চলতেন? তিনি বললেন, না। তবে হাজরে আসওয়াদের নিকট ভীড় হলে (একটুখানি মন্থর গতিতে চলতেন), কারন তিনি তা চুম্বন না করে সরে যেতেন না।
হাদীস নং-১৫৪৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, কোন ব্যাক্তি যদি ‘উমরা করতে গিয়ে শুধু বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে, আর সাফা ও মারওয়া সা’য়ী না করে, তাঁর পক্ষে কি স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে? তখন তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) উপনীত হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সাত চক্করে সমাধা করে মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপরে সাত চক্করে সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করলেন। [এতটুকু বলে ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেন] তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, সাফা ও মারওয়ার সা’ফী করার পূর্বে কারো পক্ষে স্ত্রী সহবাস মোটেই বৈধ হবে না।
হাদীস নং-১৫৪৪। মক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উপনীত হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করলেন। এরপর দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করলেন। এরপর তিনি ইবনু ‘উমর) তিলাওয়াত করলেনঃ -- নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
হাদীস নং-১৫৪৫। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, আপনার কি সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করতে অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, হাঁ। কেননা তা ছিল জাহেলী যুগের নিদর্শন। অবশেষে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেনঃ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। কাজেই হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরাকারীদের জন্য এ দুইয়ের মধ্যে সা’য়ী করায় কোন দোষ নেই। (২ : ১৫৮)
হাদীস নং-১৫৪৬। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের নিজ শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ও সাফা ও মারওয়ার মধ্যকার সা’য়ীতে দ্রুত চলে ছিলেন।
হাদীস নং-১৫৪৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় আসার পর ঋতুবর্তী হওয়ার কারণে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ অসুবিধার কথা জানলে তিনি বললেনঃ পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত অন্য সকল কাজ অপর হাজীদের ন্যায় সম্পন্ন করে নাও।
হাদীস নং-১৫৪৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও খলীফা (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জ (হজ্জ)-এর ইহরাম বাঁধেন, তাঁদের মাঝে কেবল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল না, ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে আগমন করেন, তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ইহরাম বেধেছেন, আমিও সেরূপ ইহরাম বেঁধেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের মধ্যে যাদের নিকট কুরবানীর পশু ছিল না, তাঁদের ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন, তাঁরা যেন তাওয়াফ করে, চুল ছেটে অথবা মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল হয়ে যায়। তাঁরা বলাবলি করতে লাগবেন, (যদি হালাল হয়ে যাই তা হলে) স্ত্রীর সাথে মিলনের পরপরই আমাদের পক্ষে মিনায় যাওয়াটা কেমন হবে! তা অবগত হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি পরে যা জানতে পেরেছি তা যদি আগে জানতে পারতাম, তাহলে কুরবানীর পশু সাথে আনতাম না। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে অবশ্যই ইহরাম ভঙ্গ করতাম। (হাজ্জ (হজ্জ)-এর সফরে) ‘আয়িশা (রাঃ) ঋতুবর্তী হওয়ার কারনে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হাজ্জ (হজ্জ)- এর অন্য সকল কাজ সম্পন্ন করে নেন। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ আদায় করেন, (ফিরার পথে) ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সকলেই হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়টি আদায় করে ফিরেছে, আর আমি কেবল হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে ফিরেছি, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, যেন ‘আয়িশা (রাঃ)-কে নিয়ে তান’ঈমে চলে যান (যেখানে যেয়ে ‘উমরার ইহরাম বাঁধবেন) ‘আয়িশা (রাঃ) হাজ্জের (হজ্জ) পর ‘উমরা আদায় করে নিলেন।
হাদীস নং-১৫৪৯। মু’আম্মাল ইবনু হিশাম (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমাদের যুবতীদেরকে বের হতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা বনূ খালিফা-এর দুর্গে এলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, তাঁর বোন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক সাহাবীর সহধর্মিণী ছিলেন। যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, (সেগুলোর মধ্যে) ছয়টি যুদ্ধে আমার বোনও স্বামীর সঙ্গে ছিলেন। তাঁর বোন বলেন, আমরা আহত যোদ্ধা ও অসুস্থ সৈনিকদের সেবা করতাম। আমার বোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমাদের মধ্যে যার (শরীর উত্তমরূপে আবৃত করার মত) চাঁদর নেই, সে বের না হলে অন্যায় হবে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের একজন অপরজনকে তাঁর প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাঁদরটি দিয়ে দেওয়া উচিত এবং কল্যাণমূলক কাজে ও মু’মিনদের দু’আয় বের হওয়া উচিত। উম্মু ‘আতিয়্যা (রাঃ) আসলে এ বিষয়ে তাঁর নিকট আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা -(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি আমার পিতা উৎসর্গ হউন) ব্যতীত কখনও উচ্চারণ করতেন না। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, অবশ্যই। আমার পিতা উৎসর্গ হউন। তিনি বললেনঃ যুবতি ও পর্দানশীন মহিলাদেরও বের হওয়া উচিত। অথবা বললেনঃ পর্দানশীন যুবতী ও ঋতুবর্তীদেরও বের হওয়া উচিত। তাঁরা কল্যাণমূলক কাজে এবং মুসলমানদের দু’আয় যথাস্থানে উপস্থিত হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুবর্তী মহিলাও কি? তিনি বললেনঃ (কেন উপস্থিত হবে না?) তাঁরা কি ‘আরাফার ময়দানে এবং অমুক অমুক স্থানে উপস্থিত হবে না?
হাদীস নং-১৫৫০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফাইয়’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনি যা উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছেন তাঁর কিছুটা বলুন। বলুন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখ যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) তিনি কোথায় আদায় করতেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, মিনা থেকে ফিরার দিন ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) তিনি কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মুহাসসাবে। এরপর আনাস (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করবে, তোমরাও অনুরূপ কর।
হাদীস নং-১৫৫১। ‘আলী ও ইসমা’ঈল ইবনু আবান (রহঃ) ‘আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার দিকে বের হলাম, তখন আনাস (রাঃ)-এর সাক্ষাত লাভ করি, তিনি গাধার পিঠে আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন? তিনি বললেন, তুমি লক্ষ্য রাখবে যেখানে তোমার আমীরগণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তুমিও সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
হাদীস নং-১৫৫২। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন এবং আবূ বকর, ‘উমর (রাঃ)-ও। আর ‘উসমান (রাঃ) তাঁর খিলাফতের প্রথম ভাগেও দু’ রাক’আত আদায় করেছেন।
হাদীস নং-১৫৫৩। আদন (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহর খুযা’য় (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে মিনাতে দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এ সময় আমরা আগের তুলনায় সংখ্যায় বেশী ছিলাম এবং অতি নিরাপদ ছিলাম।
হাদীস নং-১৫৫৪। কাসীব ইবনু ‘উকবা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (মিনায়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। আবূ বকর-এর সাথে দু’ রাক’আত এবং ‘উমর-এর সাথেও দু’ রাক’আত আদায় করেছি। এরপর তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে [অর্থাৎ ‘উসমান (রাঃ)-এর সময় থেকে চার রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা শুরু হয়েছে] হায়! যদি চার রাক’আতের পরিবর্তে মকবূল দু’ রাক’আতেই আমর ভাগ্যে জুটত!
হাদীস নং-১৫৫৫। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) উম্মু ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আরাফার দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র ব্যাপারে লোকজন সন্দেহ করতে লাগলেন। তাই আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শরবত পাঠিয়ে দিলাম। তিনি তা পান করলেন।
হাদীস নং-১৫৫৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ আশ-শামী (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাঁরা উভয়ে সকাল বেলায় মিনা থেকে ‘আরাফার দিকে যাচ্ছিলেন, আপনারা এ দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে থেকে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে তালবিয়া পড়তে চাইত তাঁরা পড়ত, তাতে বাধা দেওয়া হতো না এবং যারা তাকবীর পড়তে চাইত তাঁরা তাকবীর পড়ত, এতেও বাধা দেয়া হতো না।
হাদীস নং-১৫৫৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ আশ-শামী (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খলীফা) আবদুল মালিক (মক্কার গভর্নর) হাজ্জ (হজ্জ)জের নিকট লিখে পাঠালেন যে, হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে ইবনু ‘উমরের বিরোধিতা করবে না। ‘আরাফার দিনে সূর্য ঢলে যাবার পর ইবনু ‘উমর (রাঃ) হাজ্জাজের তাঁবুর কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমি তখন তাঁর ইবনু ‘উমরের) সাথেই ছিলাম, হাজ্জাজ হলুদ রঙের চাঁদর পরিহিত অবস্থায় বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, কি ব্যাপার, হে আবূ ‘আবদুল রাহমান? ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, যদি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চাও তা হলে চল। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলেন, এ মুহূর্তেই? তিনি বললেন, হাঁ। হাজ্জাজ বললেন, সামান্য অবকাশ দিন, মাথায় পানি ঢেলে বের হয়ে আসি। তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। অবশেষে হাজ্জাজ বেরিয়ে এলেন। এরপর হাজ্জাজ চলতে লাগলেন, আমি ও আমার পিতার মাঝে তিনি চললেন, আমি তাঁকে বললাম, যদি আপনি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তা হলে খুতবা সংক্ষিপ্ত করবেন এবং উকূফে জলদি করবেন। হাজ্জাজ ‘আবদুল্লাহর দিকে তাকাতে লাগলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন তাঁকে দেখলেন তখন বললেন, সে ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং-১৫৫৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) উম্মু ফাযল বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকজন তাঁর সামনে ‘আরাফার দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে মতভেদ করছিলেন। কেউ বলছিলেন তিনি সায়িম আবার কেউ বলছিলেন তিনি সায়িম নন। তারপর আমি তাঁর কাছে এক পিয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলাম, তিনি তখন উটের উপর উপবিষ্ট ছিলেন, তিনি তা পান করে নিলেন।
হাদীস নং-১৫৫৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসালামা (রহঃ) সালিমা ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, (খলীফা) ‘আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান (মক্কার গভর্নর) হাজ্জাজকে লিখে পাঠালেন, তিনি যেন হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে অনুসরণ করেন। যখন ‘আরাফার দিন হল, তখন সূর্য হেলে যাওয়ার পর ইবনু ‘উমর (রহঃ) আসলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাঁর তাঁবুর কাছে এসে উচ্চস্বরে ডাকলেন, ও কোথায়? হাজ্জাজ বেরিয়ে আসলেন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, চল! হাজ্জাজ বললেন, এখনই? তিনি বললেন, হাঁ। হাজ্জাজ বললেন, আমাকে একটু অবকাশ দিন, আমি গায়ে একটু পানি ঢেলে নই। তখন ইবনু ‘উমর (রাঃ) তাঁর সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। অবশেষে হাজ্জাজ বেরিয়ে এলেন। এরপর তিনি আমার ও আমার পিতার মাঝে থেকে চলতে লাগলেন। আমি বললাম, আজ আপনি যদি সঠিকভাবে সুন্নত মুতাবিক কাজ করতে চান তাহলে খুতবা সংক্ষিপ্ত করবেন এবং ওকূফে জলদি করবেন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, সে (সালিম) ঠিকই বলেছে।
হাদীস নং-১৫৬০। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জুবাইর ইবনু মুত’য়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার একটি উট হারিয়ে ‘আরাফার দিনে তা তালাস করতে লাগলাম। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফায় ওকুফ করতে দেখলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! তিনি তো কুরায়শ বংশীয়। এখানে তিনি কি করছেন?
হাদীস নং-১৫৬১। ফারওয়ান ইবনু আবূ মাগরা (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে হুমস ব্যতীত অন্য লোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় (বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ করত। আর হুমস হল কুরায়শ এবং তাঁদের ঔরাসজাত সন্তান-সন্ততি। হুমসরা লোকদের সেবা করে সাওয়াবের আশায় পুরুষ পুরুশকে কাপড় দিত এবং সে তা পরে তাওয়াফ করত। আর স্ত্রীলোক স্ত্রীলোককে কাপড় দিত এবং সে তাওয়াফ করত। হুমসরা যাকে কাপড় না দিত সে উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করত। সব লোক ‘আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত আর হুমসরা প্রত্যাবর্তন করত মুযদালিফা থেকে। রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন, আমার পিতা আমার নিকট ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি হুমস সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ ---(এরপর যেখান থেকে অন্য লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে) রাবী বলেন, তাঁরা মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত, এতে তাঁদের ‘আরাফা পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।
হাদীস নং-১৫৬২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসামা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন আমিও সেখানে বসা ছিলাম, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আরাফা থেকে ফিরতেন তখন তাঁর চলার গতি কি ছিল? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুতগতিতে চলতেন এবং যখন পথ মুক্ত পেতেন তখন তাঁর চাইতেও দ্রুতগতিতে চলতেন। রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন, - থেকেও দ্রুতগতির ভ্রমণকে - বলা হয়। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, - অর্থ - খোলা পথ, এর বহুবচন হল -ও -- ও -- শব্দদ্বয়ও অনুরূপ। (কুরআনে বর্ণিত) --- এর অর্থ হল, পরিত্রাণের কোন উপায়-অবকাশ নেই। **আরবি শব্দ সমূহ টাইপ করা হয় নি।
হাদীস নং-১৫৬৩। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উসামা ইবনু যয়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তোমার আরো সামনে।
হাদীস নং-১৫৬৪। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুযদালিফার মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) এক সাথে আদায় করতেন। এ ছাড়া তিনি সেই গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করতেন যে দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়েছিলেন। আর সেখানে প্রবেশ করে তিনি ইসতিনজা করতেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন কিন্তু সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। অবশেষে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
হাদীস নং-১৫৬৫। কুতাইবা (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আরাফা থেকে সওয়ারীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে আরোহণ করলাম। মুজদালিফার নিকটবর্তী বামপার্শ্বের গিরিপথে পৌঁছলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটটি বসালেন। এরপর পেশাব করে আসলেন। আমি তাঁকে উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি ঢেলে দিলাম। আর তিনি হাল্কাভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সালাত (নামায/নামাজ)? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তোমার আরো সামনে। এ কথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীতে আরোহণ করে মুযদালিফা আসলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। মুযদালিফার ভোরে ফযল [ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করলেন। কুরাইব (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ফযল (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারায় পৌঁছা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকেন।
হাদীস নং-১৫৬৬। সা’ইদ ইবনু আবূ মারায়াম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ‘আরাফার দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফিরে আসছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে খুব হাঁকডাক ও উট পিটানোর শব্দ শুনতে পেয়ে তাঁদের চাবুক দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা ধীরস্থীরতা অবলম্বন কর। কেননা, উট দ্রুত হাঁকানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। [হাদীসে উল্লেখিত ---এর প্রসঙ্গ ইমাম বুখারী (রহঃ) কুরআনে উদ্ধৃত কয়েকটি শব্দের মর্মার্থ দেন] (কুরআনে উদ্ধৃত) তাঁরা দ্রুত চলত। --- তোমাদের ফাঁকে ঢুকে --উভয়টির মধ্যে প্রবাহিত করেছি।
হাদীস নং-১৫৬৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উসামা ইবনু যয়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফা থেকে ফেরার সময় গিরিপথে অবতরন করে পেশাব করলেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তবে পূর্নাঙ্গ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না। আমি তাঁকে বললাম, সালাত (নামায/নামাজ)? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তো তোমার সামনে। তারপর তিনি মুযদালিফায় এসে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং পূর্নাঙ্গ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হলে তিনি মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে নিজ নিজ উট দাড় করিয়ে রাখার পর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেওয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। ‘ইশা ও মাগরিবের মধ্যে তিনি আর কোন সালাত (নামায/নামাজ) পড়েননি।
হাদীস নং-১৫৬৮। আদম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইকামত দেওয়া হয়। তবে উভয়ের মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি।
হাদীস নং-১৫৬৯। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন।
হাদীস নং-১৫৭০। ‘আমর ইবনু খলিদ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলেন। তখন ‘ইশার আযানের সময় বা তার কাছাকাছি সময় আমরা মুযদালিফা পৌঁছালাম। তিনি এক ব্যাক্তিকে আদেশ দিলেন। সে আযান দিল এবং ইকামত বলল। তিনি মাগরিব আদায় কোড়লেণ এবং এরপর আরো দু’ রাক’আত আদায় করলেন। তারপর তিনি রাতের খাবার আনালেন এবং তা খেয়ে নিলেন। (রাবী বলেন) তারপর তিনি একজনকে আদেশ দিলেন। আমার মনে হয়, লোকটি আযান দিল এবং ইকামত বলল। ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমার বিশ্বাস এ সন্দেহ যুবাইর (রহঃ) থেকেই হয়েছে। তারপর তিনি দু’ রাক’আত ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। ফজর হওয়ামাত্রই তিনি বললেনঃ এ সময়, এ দিনে, এ স্থানে, এ সালাত (নামায/নামাজ) ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এ দু’টি সালাত (নামায/নামাজ) তাঁদের প্রচলিত ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই লোকেরা মুযদালিফা পৌঁছার পর মাগরিব আদায় করেন এবং ফজরের সময় হওয়ামাত্র ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এইরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৫৭১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদের আগেই পাঠিয়ে দিয়ে রাতে মুযদালিফাতে মাশ’আরে হারামের নিকট ওকূফ করতেন এবং সাধ্যমত আল্লাহর যিকির করতেন। তারপর ইমাম (মুযদালিফায়) ওকূফ করার ও রওয়ানা হওয়ার আগেই তাঁরা (মিনায়) ফিরে যেতেন। তাঁদের থেকে কেউ মিনাতে আগমন করতেন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আর কেউ এরপরে আসতেন, মিনাতে এসে তাঁরা কংকর মারতেন। ইবনু ‘ উমর (রাঃ) বলতেন, তাঁদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করে সহজ করে দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৫৭২। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রাতে মুযদালিফা থেকে পাঠিয়েছেন।
হাদীস নং-১৫৭৩। ‘আলী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে তাঁর পরিবারের যে সব লোককে এখানে পাঠিয়েছিলেন, আমি তাঁদের একজন।
হাদীস নং-১৫৭৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মুযদালিফার রাতে মুযদালিফার কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে সালাত (নামায/নামাজ) দাড়ালেন এবং কিছুক্ষণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বলেন, হে বৎস! চাঁদ কি অস্তমিত হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি আরও কিছুক্ষণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেন, হে বৎস! চাঁদ কি ডুবেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, চল। আমরা হলাম এবং চললাম। পরিশেষে তিনি জামরায় কংকর মারলেন এবং ফিরে এসে নিজের অবস্থানের জায়গায় ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর আমি তাঁকে বললাম, হে! আমার মনে হয়, আমরা বেশি অন্ধকার থাকতেই আদায় করে ফেলেছি। তিনি বললেন, বৎস! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের জন্য এর অনুমতি দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৫৭৫। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাওদা (রাঃ) মুযদালিফার রাতে (মিনা যাওয়ার জন্য) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চাইলেন, তিনি তাঁকে অনুমতি দেন। সাওদা (রাঃ) ছিলেন ভারী ও ধীরগতি মহিলা।
হাদীস নং-১৫৭৬। আবূ নু’আইম (রহঃ) । ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মুযদালিফায় অবতরন করলাম। মানুষের ভীড়ের আগেই রওয়ানা হওয়ার জন্য সাওদা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনুমতি চাইলেন। আর তিনি ছিলেন ধীরগতি মহিলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন। তাই তিনি লোকের ভিড়ের আগেই রওয়ানা হলেন। আর আমরা সকাল পর্যন্ত সেখানেই থেকে গেলাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। সাওদার মত আমিও যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চেয়ে নিতাম তাহলে তা আমার জন্য যে কোন খুশির কারন থেকে অধিক সন্তুষ্টির ব্যাপার হতো।
হাদীস নং-১৫৭৭। ‘আমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দু’টি সালাত (নামায/নামাজ) ছাড়া কোন সালাত (নামায/নামাজ) তার নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আদায় করতে দেখিনি। তিনি মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) তার (নিয়মিত) ওয়াক্তের আগে আদায় করেছেন।
হাদীস নং-১৫৭৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে মক্কা রওয়ানা হলাম। এরপর আমরা মুযদালিফায় পৌঁছালাম। তখন তিনি পৃথক পৃথক আযান ও ইকামতের সাথে উভয় সালাত (নামায/নামাজ) (মাগরিব ও ‘ইশা) আদায় করলেন এবং এই দু’ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর ফজর হতেই তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কেউ কেউ বলছিল যে, ফজরের সময় হয়ে গেছে, আবার কেউ বলছিল যে, এখনো ফজরের সময় আসেনি। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দু’ সালাত (নামায/নামাজ) অর্থাৎ মাগরিব ও ‘ইশা এ স্থানে তাদের নিজ সময় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ‘ইশার ওয়াক্তের আগে কেউ যেন মুযদালিফায় না আসে। আর ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) এই মুহূর্তে। এরপর তিনি ফর্সা হওয়া পর্যন্ত সেখানে উকূফ করেন। এরপর বললেন, আমীরুল মুমিনীন যদি এখন রওয়ানা হন তাহলে তিনি সুন্নাত মুতাবিক কাজ করলেন। (রাবী বলেন) আমার জানানেই, তাঁর কথা দ্রুত ছিল, না ‘উসমান (রাঃ)-এর রওয়ানা হওয়াটা। এরপর তিনি তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন, কুরবানীর দিন জামরায়ে ‘আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত।
হাদীস নং-১৫৭৯। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ‘আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি মুযদালিফাতে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে (মাশা’আরে হারামে) উকুফ করলেন এবং তিনি বললেন, মুশরিকরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত রওয়ানা হত না। তাঁরা বলত, হে সাবীর! আলোকিত হও! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের বিপরীত করলেন এবং তিনি সূর্য উঠার আগেই রওয়ানা হলেন।
হাদীস নং-১৫৮০। আবূ ‘আসিম যাহহাক ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ)-কে তাঁর সাওয়ারীর পেছনে বসিয়েছিলেন। সেই ফাযল (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পৌঁছে কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৫৮১। যুহাইর ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আরাফা থেকে মুযদালিফা আসার পথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওয়ারীর পেছনে উসমা (রাঃ) বসা ছিলেন। এরপর মুযদালিফা থেকে মিনার পথে তিনি ফাযলকে সাওয়ারীর পিছনে বসালেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায়ে ‘আকাবাতে কঙ্কর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
হাদীস নং-১৫৮২। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা আদায় করতে আদেশ দিলেন। এরপর আমি তাঁকে কুরবানী সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তামাত্তু’র কুরবানী হল একটি উট, গরু বা বকরী অথবা এক কুরবানীর পশুর মধ্যে শরীকানা এক অংশ। আবূ জামরা (রহঃ) বলেন, লোকেরা তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ)কে যেন অপছন্দ করত। একবার আমি ঘুমালাম তখন দেখলাম, একটি লোক যেন (আমাকে লক্ষ্য করে) ঘোষণা দিচ্ছে, উত্তম হাজ্জ (হজ্জ) এবং মাকবুল তামাত্তু। এরপর আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি আল্লাহু আকবার উচ্চারন করে বললেন, এটাই তো আবূল কাসিম -এর সুন্নাত। আদম, ওয়াহাব ইবনু জারীর এবং গুনদর (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে মাকবুল ‘উমরা এবং উত্তম হাজ্জ (হজ্জ) বলে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস নং-১৫৮৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, এ তো কুরবানীর উট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে সাওয়ার হয়ে চল। আবারও লোকটি বলল, এ-তো কুরবানীর উট। এরপরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার সর্বনাশ! এ কথাটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছেন।
হাদীস নং-১৫৮৪। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে কুরবানীর উট হাকিয় নিতে দেখে বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। সে বলল, এ তো কুরবানীর উট। তিনি বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। লোকটি বলল, এ তো করবানীর উট। তিনি বললেন, এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।
হাদীস নং-১৫৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা একসাথে পালন করেছেন। তিনি হাদী পাঠান অর্থাৎ যুল-হুলায়ফা থেকে কুরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে নেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ‘উমরার ইহরাম বাঁধেন, এরপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধেন। সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে ‘উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) নিয়াতে তামাত্তু করলেন। সাহাবীগনের কতেক হাদী সাথে নিয়ে চললেন, আর কেউ কেউ হাদী সাথে নেন নি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পৌঁছে সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছ, তাঁদের জন্য হাজ্জ (হজ্জ) সমাপ্ত করা পর্যন্ত কোন নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে আসনি, তাঁরা বায়তুল্লাহর এবং সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ করে চুল কেটে হালাল হয়ে যাবে। এরপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধবে। তবে যারা কুরবানী করতে পারবে না তাঁরা হাজ্জের (হজ্জ) সময় তিনদিন এবং বাড়িতে ফিরে গিয়ে সাতদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা পৌঁছেই তাওয়াফ করলেন। প্রথমে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং তিন চক্কর রমল করে আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন। বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করে তিনি মাকামে ইব্রাহিমের নিকট দু’ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, সালাম ফিরিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফায় আসলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর সা’য়ী করলেন। হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা করা পর্যন্ত তিনি যা হারাম ছিল তা থেকে হালাল হননি। তিনি কুরবানীর দিনে হাদী কুরবানী করলেন, সেখান থেকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। তারপর তাঁর উপর যা হারাম ছিল সে সবকিছু থেকে তিনি হালাল হয়ে গেলেন। সাহাবীগণের মধ্যে যারা হাদী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা সেরূপ করলেন, যেরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। ‘উরওয়া (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) সাথে ‘উমরা পালন করেন এবং তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও তামাত্তু করেন, যেমনি বর্ণনা করেছেন সালিম (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।
হাদীস নং-১৫৮৬। আবূ নু’মান (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর পুত্র ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতাকে বললেন, আপনি (এবার বাড়িতেই) অবস্থান করুন। কেননা, বায়তুল্লাহ থেকে আপনার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তাহলে আমি তাই করব যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। তিনি আরও বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল -এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ’ সুতরাং আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, (এবার) ‘উমরা আদায় করা আমি আমার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছি। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি রওয়না হলেন, যখন বায়দা নামক স্থানে পৌছালেন তখন তিনি হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা উভয়টির জন্য ইহরাম বেঁধে বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরার ব্যাপার তো একই। এরপর তিনি কুদাইদ নামক স্থান থেকে কুরবানীর জানোয়ার কিনলেন এবং মক্কা পৌঁছে (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা) উভয়টির জন্য একটি তাওয়াফ করলেন। উভয়ের সব কাজ শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইহরাম খুললেন না।
হাদীস নং-১৫৮৭। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও মারওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজারেরও অধিক সাহাবী নিয়ে মিদ্বীনা থেকে বের হয়ে যুল-হুলাইফা পৌঁছে কুরবানীর পশুটিকে কিলাদা পরালেন এবং ইশ’আর করলেন। এরপর তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন।
হাদীস নং-১৫৮৮। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি তাঁকে কিলাদা পরিয়ে ইশ’আর করার পর পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর জন্য যা হালাল ছিল এতে তা হারাম হয়নি।
হাদীস নং-১৫৮৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! লোকদের কি হল তাঁরা হালাল হয়ে গেল আর আপনি হলেন না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো আমার মাথার তালবিদ করেছি এবং আমার কুরবানীর জানোয়ারকে কিলাদা পরিয়ে দিয়েছি, তাই হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারি না।
হাদীস নং-১৫৯০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে কুরবানীর পশু পাঠাতেন, আমি তাঁর গলায় কিলাদার মালা পাকিয়ে দিতাম। এরপর মুহরিম যে কাজ বর্জন করে, তিনি তাঁর কিছু বর্জন করতেন না।
হাদীস নং-১৫৯১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তাঁর ইশ’আর করলেন এবং তাঁকে তিনি কিলাদা পরিয়ে দিলেন অথবা আমি একে কিলাদা পরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি তা বায়তুল্লাহর দিকে পাঠালেন এবং নিজে মদিনায় থাকলেন এবং তাঁর জন্য যা হালাল ছিল তা থেকে কিছুই তাঁর জন্য হারাম হয়নি।
হাদীস নং-১৫৯২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) যিয়াদ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি কুরবানীর পশু (মক্কা) পাঠায় তা যবেহ না করা পর্যন্ত তাঁর জন্য ঐ সমস্ত কাজ হারাম হয়ে যায়, যা হাজীদের জন্য হারাম। (বর্ণনাকারিণী), বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যেমন বলেছেন, ব্যাপার তেমন নয়। আমি নিজ হাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি আর তিনি নিজ হাতে তাঁকে কিলাদা পরিয়ে দেন। এরপর আমার পিতার সঙ্গে তা পাঠান। সে জানোয়ার যবেহ করা পর্যন্ত আল্লাহ কর্তৃক হালাল করা কোন বস্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি হারাম হয়নি।
হাদীস নং-১৫৯৩। আবূ নূ’আইম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জন্য বকরী পাঠালেন।
হাদীস নং-১৫৯৪। আবূ নু’মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (কুরবানীর পশুর)কিলাদাগুলো পাকিয়ে দিতাম আর তিনি তা বকরীর গলায় পরিয়ে দিতেন। এরপর তিনি নিজ পরিবারে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন।
হাদীস নং-১৫৯৫। আবূ নু’মান (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বকরীর কিলাদা পাকিয়ে দিতাম আর তিনি সেগুলো পাঠিয়ে দিয়ে হালাল অবস্থায় থেকে যেতেন।
হাদীস নং-১৫৯৬। আবূ নু’আইন (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি, তাঁর ইহরাম বাঁধার আগে।
হাদীস নং-১৫৯৭। ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন [‘আয়িশা (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে যে পশম ছিল আমি তা দিয়ে কিলাদা পাকিয়ে দিয়েছি।
হাদীস নং-১৫৯৮। মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিতে দেখে বললেনঃ এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। লোকটি বলল, এটি কুরবানীর উট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর উপর সাওয়ার হয়ে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি লোকটিকে দেখেছি যে, সে ঐ পশুটির পিঠে চড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সাথে চলছিল আর পশুটি গলায় জুতার মালা ঝুলান ছিল। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) এ বর্ণনার অনুসরণ করেছেন। ‘ উসমান ইবনু ‘উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৫৯৯। কাসীব (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যবেহকৃত কুরবানীর উটের পৃষ্টের আবরন এবং তাঁর চামড়া সা’দকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৬০০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু যুবাইরের খিলাফতকালে খারিজীদের হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ের বছর ইবনু ‘উমর (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) পালন করার ইচ্ছা করেন। তখন তাঁকে বলা হল, লোকদের মাঝে পরস্পর লড়াই সংঘটিত হতে যাচ্ছে, আর তাঁরা বাধা দিতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল -এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। ’ কাজেই আমি সেরূপ করব যেরূপ করেছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর ‘উমরা ওয়াজিব করে ফেলেছি। এরপর বায়দার উপকণ্ঠে পৌঁছে তিনি বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, ‘উমরার সাথে আমি হাজ্জ (হজ্জ)কেও একত্রিত করলাম। এরপর তিনি কিলাদা পরিহিত কুরবানীর জানোয়ার নিয়ে চললেন, যেটি তিনি আসার পথে কিনেছিলেন। তারপর তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করলেন। তাছাড়া অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং সে সব বিষয় থেকে হালাল হননি যেসব বিষয় তাঁর উপর হারাম ছিল- কুরবানীর দিন পর্যন্ত। তখন তিনি মাথা মুড়ালেন এবং কুরবানী করলেন। তাঁর মতে প্রথম তাওয়াফ দ্বারা হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার তাওয়াফ সম্পন্ন হয়েছে। এ সব করার পর তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করেছেন।
পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন ইচ্ছা ছিল না। যখন আমরা মক্কার কাছাকাছি পৌছলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে হালাল হয়ে যায়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশ্ত আনা হলে আমি বললাম, এ কি? তারা বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীসখানা কাসিমের নিকট আলোচনা করলে তিনি বললেন, সঠিকভাবেই তিনি হাদিসটি তোমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬০২। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কুরবানীর স্থানে কুরবানী করতেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, (অর্থাৎ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর স্থানে।
হাদীস নং-১৬০৩। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুযদালিফা থেকে শেষ রাতের দিকে হাজীদের সাথে, যাদের মধ্যে আযাদ ও ক্রীতদাস থাকত, নিজ কুরবানীর জানোয়ার পাঠিয়ে দিতেন, যাতে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কুরবানীর স্থানে পৌছে যায়।
হাদীস নং-১৬০৪। সাহ্ল ইবনু বাক্কার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদিনাতেও হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি দুম্বা তিনি কুরবানী করেছেন। এখানে হাদিসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস নং-১৬০৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি আসলেন এমন এক ব্যাক্তির নিকট, যে তার নিজের উটটিকে নহর করার জন্য বসিয়ে রেখেছিল। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, সেটি উঠিয়ে দাঁড়ান অবস্থায় বেঁধে নাও। (এ) মুহাম্মদ –রে সুন্নত। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন যে, শু’বা (রহঃ) ইউনুস সূত্রে যিয়াদ (রহঃ) থেকে হাদিসটি । শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬০৬। সাহ্ল ইবনু বাক্কার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে-বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে যোহর চার রাক’আতে এবং যুল হুলাইফাতে ‘আস্র দু’রাক’আত আদায় করলেন এবং এখানেই রাত যাপন করলেন। ভোর হলে তিনি সাওয়ারীতে আরোহণ করে তাহ্লীল ও তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। এরপর বায়াদায় যাওয়ার পর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন এবং মক্কায় প্রবেশ করে তিনি সাহাবাদের ইহ্রাম খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। আর (সে হাজ্জে (হজ্জ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নিজ হাতে কুরবনী করেন আর মদিনাতে হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি মেষ কুরবানী দেন।
হাদীস নং-১৬০৭। মুদাদ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে যোহর চার রাক’আত এবং যুল-হুলাইফাতে ‘আসর দু’রাক’আত আদায় করেন। আয়্যূব (রহঃ) এক ব্যাক্তির মাধ্যমে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এরপর তিনি সেখানে রাত যাপন করেন। ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর সাওয়ারীতে আরোহণ করেন। সাওয়ারী বায়াদায় পৌঁছে সোজা হয়ে দাঁড়ালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং-১৬০৮। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পাঠালেন, আমি কুরবানীর জানোয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, তারপর তিনি আমাকে আদেশ করলেন। আমি ওগুলোর গোশ্ত বন্টন করে দিলাম। এরপর তিনি আমাদের আদেশ করলেন। আমি এর পিঠের আবরণ এবং চামড়াগুলোও বিতরণ করে দিলাম। সুফিয়ান (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে এবং এর থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে কসাইকে কিছু না দিতে।
হাদীস নং-১৬০৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোস্ত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং এর থেকে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসাবে কিছুই না দেওয়া হয়।
হাদীস নং-১৬১০। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর একশ’ উট পাঠান এবং আমাকে গোশত সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। আমি তা বন্টন করে দিলাম। এরপর তিনি তার পিঠের আবরণ সম্বন্ধে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম। তারপর তিনি আমাকে চামড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম।
হাদীস নং-১৬১১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্ত মিনাত তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। রাবী বলেন, আমি ‘আতা (রহঃ)-কে বললাম, জাবির (রাঃ) কি বলেছেন আমরা মদিনায় আসা পর্যন্ত? তিনি বললেন, না।
হাদীস নং-১৬১২। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুল-কা’দার পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়া আমরা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি, অবশেষে আমরা যখন মক্কার নিকটে পৌছলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যায়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশত পাঠানো হল। আমি বললাম, এ কি? বলা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, আমি কাসিম (রহঃ)-এর নিকট হাদিসটি উল্লেখ করলে তিনি বললেন, ‘আমরা (রহঃ) হাদীসটি ঠিকভাবেই তোমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬১৩। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) হব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মাথা কামনোর আগে কুরবানী অথবা অনুরূপ কোন কাজ করেছে। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই, এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬১৪। আহ্মদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, আমি কংকর মারার আগেই আওয়াফে যিয়ারত করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী পুনরায় বললেন, আমি যবেহ করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী আবারও বললেন, আমি কংকর মারার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। ‘আব্দুর রহীম ইবনু সুলাইমান রাযী, কাসিম ইবনু ইয়াহইয়া ও ‘আফ্ফান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হাম্মাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কংকর মেরেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সে আবার বলল কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬১৬। ‘আবদান (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাতহা নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ কিসের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মত ইহরাম বেঁধে আমি তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভালই করেছ। যাও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী কর। এরপর আমি বনূ কায়স গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম। তিনি আমার মাথার উকুন বেছে দিলেন। তারপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। (তখন থেকে) ‘উমর (রাঃ)-এর খিলাফরকাল পর্যন্ত এ ভাবেই আমি লোকদের (হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা সম্পর্কে) ফতোয়া দিতাম। তারপর তাঁর সঙ্গে আমি এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাবকে অনিসরণ করি তহলে তা তো আময়াদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নতের অনুসরণ করি তাহলে তো (দেখি যে), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার যথাস্থানে পৌছার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং-১৬১৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কি হল যে, তারা ‘উমরা করে হালাল হয়ে গেল অথচ আপনি ‘উমরা থেকে হালাল হননি! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো আমার মাথায় আঁঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং পশুর গলায় কিলাদা ঝুলিয়েছি। তাই কুরবানী না করে আমি হালাল হতে পারি না।
হাদীস নং-১৬১৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) সময় তাঁর মাথা কামিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৬১৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুঙ্কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (রহঃ) রলেন, আমাদের নাফি’ (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ মাথামুন্ডুনকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার অথবা দু’বার বলেছেন। রাবী বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, চতুর্থবার বলেছেনঃ চুল যারা ছোট করেছে তাদের প্রতিও।
হাদীস নং-১৬২০। ‘আয়্যাশ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহা আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের ক্ষমা করুন। সাহারীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদেরকে ক্ষমা করুন। সাহারীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদেরকেও।
হাদীস নং-১৬২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামালেন এবং সাহাবীদের একদলও। আর অন্য একটি দল চুল ছোট করলেন।
হাদীস নং-১৬২২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও মু’আবিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি কাঁচি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল ছেটে ছোট করে দিয়েছিলাম।
হাদীস নং-১৬২৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ করে। এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়।
হাদীস নং-১৬২৪। ইয়াহইয় ইবনু বুকাইর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করলাম। এ সময় সাফিয়্যা (রাঃ)-এর হায়েয দেখা দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে তা ইচ্ছা করছিলেন যা একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছা করে থাকে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি তো হায়েযা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে তো সে আমাদের আটকিয়ে ফেলবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাফিয়্যা (রাঃ) তো কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে রওয়ানা হও। কাসিম, ‘উরওয়া ও আসা’দ (রহঃ) সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাফিয়্যা কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করেছেন।
হাদীস নং-১৬২৫। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যবেহ করা, মাথা কামান ও কংকর মারা এবং (এ কাজগুলো) আগে-পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৬। ‘আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়ারীতে) অবস্থান করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেনঃ একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার আগেই (মাথা) কামিয়ে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি কুরবানী করে নাও, কোন দোষ নেই। তারপর অপর একজন এসে বললেন, আমি না জেনে কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কংকর মেরে নাও, কোন দোষ নেই। সেদিন যে কোন কাজ আগে পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৮। সা’ইদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘আরদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বলেলন, আমার ধারণা ছিল অমুক কাজের আগে অমুক কাজ, আমি কুরবানী কারার আগে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। আর কংকর মারার আগে কুরবানী করে ফেলেছি। এরূপ অনেক কথা জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই। সব কটির জবাবে তিনি এ কথাই কললেন। সেদিন তাঁকে যা-ই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৯। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপর অবস্থান করছিলেন। তারপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। যুহরী (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় মা’মার (রহঃ) সালেহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩০। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুত্বা দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন্ দিনঃ সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন্ শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। তারপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন্ মাস? তারা বললেনঃ সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইয্যত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌছিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়েছি? ইবনু ‘আব্বস (রাঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেনঃ) উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌছিয়ে দেয়। আমার পরে তোমরা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং-১৬৩১। হাফ্স ইবনু ‘উমর (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফাত ময়দানে খুত্বা দিতে শুনেছি। ইবনু ‘উয়াইনা (রহঃ) ‘আম্র (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় বর্ণনায় শু’বা (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খুত্বা দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কি জানো আজ কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। আমরা ধারণা করলাম সম্ভাবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম পেল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি যিলহাজ্জের (হজ্জ) মাস নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তারপর তিনি বললেনঃ এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -ই সবচাইতে বেশী জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। ফলে আমরা ভাবতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম বদলিয়ে অন্য নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এ কি সম্মানিত শহর নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের জন এবং তোমাদের মাল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত এমন সম্মানিত যেমন সম্মান রয়েছে তোমাদের এ দিনের, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের শহরে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ শোন! আমি কি পৌছিয়েছি তোমাদের কাছে? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ (ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )। তারপর তিনি বললেনঃ প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে (আমার দাওয়াত) পৌছিয়ে দেয়। কেননা, কোন কোন মুবাল্লাগ শ্রবণকারী থেকে কখনো কখনো অধিক সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। তোমরা আমার পরে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং-১৬৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অবস্থানকালে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এটি কো্ন দিন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত দিন। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্ শহর? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত শহর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্ মাস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত মাস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জানো, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইয্যত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন। হিশাম ইবনু গায (রহঃ) নাফি’ (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায়কালে কুরবানীর দিন জামারাতের মধ্যবর্তী স্থলে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, এটি হল হাজ্জে (হজ্জ) আকবরের দিন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। এরপর তিনি সাহাবীগণকে বিদায় জানালেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, এ-ই বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)। ১০৯৩ পরিচ্ছেদঃ (হাজীদের) পানি পান করানোর ব্যবস্থাকারীদের ও অন্যান্য লোকদের (ওজর বশত) মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থান করা।
হাদীস নং-১৬৩৪। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু মায়মূন, ইয়াহইয়া ইবনু মূসা ও মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আব্বাস (রাঃ) পানি পান করারনোর জন্য মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম —এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। আবূ উসামা, ‘উক্বা ইবনু খালিদ ও আবূ যামরা (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইরের অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩৫। আবূ নু’আইম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কখন কংকর মারব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কংকর মারবে, তখন তুমিও মারবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কংকর মারতাম।
হাদীস নং-১৬৩৬। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বাতন ওয়াদী থেকে কংকর মারেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! লোকেরা তো এর উচ্চুস্থান থেকে কংকর মারে। তিনি বলেলেন, সে সত্তার কসম! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এটা সে স্থান, যেখানে সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬৩৭। হফস ইবনু ‘উমর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কংকর মেরেছেন।
হাদীস নং-১৬৩৮। আদম (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি যাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলেন। তখন তিনি বায়তুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কংকর মারতে দেখেছেন। এর পর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।
হাদীস নং-১৬৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বারের উপর এরূপ বলতে শুনেছি, যে সূরার মধ্যে বাকারার উল্লেখ রয়েছে, যে সূরার মধ্যে আলে ‘ইমরানের উল্লেখ রয়েছে এবং যে সূরার মধ্যে নিসা-এর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ সে সূরা বাকারা, সূরা আলে ‘ইমরান ও সূরা নিসা পছন্দ করত না। বর্ণনাকারী আ’মাশ (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারটি আমি ইবরাহীম (রহঃ)-কে বললাম। তিনি বললেন, আমার কাছে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জামরায়ে ‘আকাবাতে কংকর মারার সময় তিনি ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বাতন ওয়াদীতে গাছটির বরাবর এসে জামরাকে সম্নে রেখে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর সহকারে কংকর মারলেন। এরপর বললেন, সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এ স্থানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সূরা বাকারা (অর্থাৎ সূরা বাকারা বলা বৈধ)।
হাদীস নং-১৬৪০। ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় কংকর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাঁর উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী থেকে জমরায়ে ‘আকাবায় কংকর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এবূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৬৪১। ইসমা’ঈল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিকটবর্তী জামরায় সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় অনুরূপভাবে কংকর মারতেন। এরপর বাঁ দিক হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং এর কাছে তিনি দেরী করতেন না। তিনি বলতেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি অনুরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৬৪২। মুহাম্মদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মসজিদে মিনার দিক থেকে প্রথমে অবস্থিত জমরায় যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর মারতেন, সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং এখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। তারপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে ওয়াদীর কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। অবশেষে ‘আকাবার কাছের জামরায় এসে তিনি সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর ফিরে যেতেন, এখানে বিলম্ব করতেন না। যুহরী (রহঃ) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-কে তাঁর পিতার মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (রাবী বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।
হাদীস নং-১৬৪৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার এ দু’হাত দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খুশবু লাগিয়েছি, যখন তিনি ইহ্রাম বাঁধার ইচ্ছা করেছেন এবং তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে যখন তিনি ইহরাম খুলে হালাল হয়েছেন। এ কথা বলে তিনি তাঁর উভয় হাত প্রসারিত করলেন।
হাদীস নং-১৬৪৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তবে এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে।
হাদীস নং-১৬৪৫। আসবাগ ইবনু ফারজ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে উপত্যকায় কিছুক্ষণ গুয়ে থাকেন। তারপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। লায়স (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনায় ‘আমর ইবনু হারিস (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৪৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) হায়েযা হলেন এবং পরে এ কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবগত করানো হয়। তখন তিনি বললেনঃ সে কি আমাদের আটকিয়ে রাখবে? তারা বললেন, তিনি তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তো আর বাধা নেই।
হাদীস নং-১৬৪৭। আবূ’নু’মান (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর হায়েয এসেছে এমন মহিলা সম্পর্কে মদিনাবাসী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাদের বললেন, সে রওয়ানা হয়ে যাবে। তারা বললেন, আমরা আপনার কথা গ্রহণ করব না এবং যায়দের কথাও বর্জন করব না। তিনি বললেন, তোমরা মদিনায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে নেবে। তাঁরা মদিনায় এসে জিজ্ঞেস করলেন। যাঁদের কাছে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উম্মে সুলাইম (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাঁদের সাফ্যিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) (রাঃ)-এর ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। হাদিসটি খালিদ ও কতাদা (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬৪৮। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করার পর ঋতুবর্তী মহিলাকে রওনা হয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে মহিলা রওয়ানা হতে পারবে না। পরবর্তীতে তাঁকে ই কথাও শুনেছি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৬৪৯। আবূ নু’মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম। হাজ্জ (হজ্জ)ই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়ার সা’য়ী করলেন। তবে ইহরাম ফেলেননি। তাঁর সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার ছিল। তাঁর সহধর্মিণী ও সাহাবীগণের মধ্যে যারা তাঁর সঙ্গে ছলেন তাঁরাও তাওয়াফ করলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল না, তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। এরপর ‘আয়িশা (রাঃ) ঋতুবর্তী হয়ে পরলেও (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা হাজ্জের (হজ্জ) সমুদয় হুমুম-আহকাম আদায় করলাম। এরপর যখন লায়লাতুল-হাসবা অর্থাৎ রওয়ানা হওয়ার রাত হল, তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ব্যতীত আপনার সকল সাহাবী তো হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা করে ফিরছেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা যে রাতে এসেছি সে রাতে তুমি কি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করনি? আমি বললাম, না। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তান’ঈম (নামক স্থানে) চলে যাও এবং সেখান থেকে ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নাও। আর অমুক অমুক স্থানে তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা থাকল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-এর সঙ্গে তান’ঈমের দিকে গেলাম এবং ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম। আর সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বিরক্ত হয়ে বলেনঃ তুমি তো আমাদেরকে আটকিয়ে ফেললে। তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করছিলে? তিনি বললেন, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে কোন বাধা নেই, রওয়ানা হও। [‘আয়িশা (রাঃ) বলেন] আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মিলিত হলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি মক্কার উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি নিচের দিকে নামছিলাম। অথবা আমি উঠছিলাম আর তিনি নামছিলেন। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় এ হাদীসে (হাঁ)-এর পরিবর্তে ‘লা’ (না) রয়েছে। রাবী জারীর (রহঃ) মনসূর (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় সুসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর অনুরূপ ‘লা’ (না) বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৫০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফা’য় (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তামি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মনে রেখেছেন এমন কিছু কথা আমাকে বলুন। তারবিয়ার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আবতাহ নামক স্থানে। (তারপর বললেন, )তুমি তাই কর যেভাবে তোমার শাসকগণ করেন।
হাদীস নং-১৬৫১। ‘আবদুল মুতা’আলী ইবনু তালিব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর মুহাস্সাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন, পরে সাওয়ার হয়ে বায়তুরল্লাহর দিকে গেলেন এবং রায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং-১৬৫২। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তা হল একটি মানযিল মাত্র, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন, যাতে বেরিয়ে যাওয়া সহজতর হয় অর্থাৎ আবতাহ।
হাদীস নং-১৬৫৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাস্সাবে অবতরণ করা (হাজ্জের (হজ্জ) কিছুই নয়। এ তো শুধু একটি মানযিল, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৫৪। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) দু’ পাহাড়ের মধ্যস্থিত যু-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর মক্কায় উঁচু গিরিপথের দিক থেকে প্রবেশ করতেন। হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা আদায়ের জন্য মক্কা আসলে তিনি মসজিদে হারামের দরজার সামনে ব্যতীত কোথাও উট বসাতেন না। তারপর মসজিদে প্রবশ করে হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন এবং সেখান থেকে তাওয়াফ আরম্ভ করতেন এবং সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন। তিনবার দ্রুতবেগে আর চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর ফিরে এসে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং নিজের মনযিলে ফিরে যাওয়ার আগে সাফা-মারওয়ার মধ্যে সা’য়ী করতেন। আর যখন হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা থেকে ফিরতেন তখন যুল-হুলাইফা উপত্যকার বাতহা নামক স্থানে অবতরণ করতেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৫৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-কে মুহাসসাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নাফি’ (রহঃ) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমর ও ইবনু ‘উমর (রাঃ) সেখানে অবতরণ করেছেন। নাফি’ (রহঃ) থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুহাসসাবে যোহর ও ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আমার মনে হচ্ছে, তিনি মাগরিবের কথাও বলেছেন। খালিদ (রাঃ) বলেন, ‘ইশা সম্পর্কে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। এ কথা ইবনু ‘উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন।
হাদীস নং-১৬৫৬। ‘উসমান ইবনু হায়সাম (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যুল-মাজায ও ‘উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগ, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ ‘তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুমে’ (২:১৯৮)।
হাদীস নং-১৬৫৭। ‘উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যাবর্তনের দিন সাফিয়্যা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিলে তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাদেরকে আটকিয়ে ফেললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে ‘আকরা’, ‘হালকা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন এবং বললেনঃ সে কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছে? বলা হল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তবে চল। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা (মক্কায়) আসলাম, তখন আমাদের হালাল হওয়া নির্দেশ দেন। তারপর প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু আরম্ভ হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হালকা’ আকরা’, বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেনঃ আমার ধারণা, সে তোমাদের আটকিয়েই ফেলবে। তারপর বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছিলে? সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে চল। আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো (‘উমরা আদায় করে) হালাল হইনি। তিনি বললেনঃ তাহলে এখন তুমি তান’ঈম থেকে ‘উমরা আদায় করে নাও। তারপর তাঁর সঙ্গে তার ভাই (‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)] গেলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, (‘উমরা আদায় করার পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়, যখন তিনি শেষ রাতে (বিদায় তওয়াফের জন্য) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ অমুক স্থানে তোমার সাক্ষাত করবে।
হাদীস নং-১৬৫৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ‘উমরার পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হল হাজ্জে (হজ্জ) মাবরূরের প্রতিদান।
হাদীস নং-১৬৫৯। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করা সম্পর্কে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। ‘ইকরিমা (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করেছেন। ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) ইবনু ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) বলেছেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং-১৬৬০। ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) ‘ইা ইবনু খলিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। অবশিষ্ট অংশে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং-১৬৬১। কুতায়বা (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতিমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ)ুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাঁকে এদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ’আত। এরপর ‘উরোয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) তাঁকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আমরা তাঁর কথা রদ করা পছন্দ করলাম না। আমরা উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার ভিতর থেকে তাঁর মিসওয়াক করার আওয়াজ গুনতে পেলাম। তখন ‘উরওয়া (রাঃ) বললেন, হে আম্মাজানো, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ ‘আব্দুর রাহমান কি বলেছেন, আপনি কি শুনেন নি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি কি বলছেন? ‘উরওয়া (রহঃ) বললেন, তিনি বলছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার ‘উময়া আদায় করেছেন। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ ‘আবদুর রাহমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন ‘উমরা আদায় করেননি, যে তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো ‘উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং-১৬৬২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখন ‘উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং-১৬৬৩। হাসসান ইবনু হাস্সান (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ‘উমরা যু-কা’দা মাসে মুশরিকরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে বাঁধা দিয়ছিল। পরবর্তী বছরের যুল-কা’দা মাসের ‘উমরা, যখন মুশরিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল জী’রানার ‘উমরা, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল, সম্ভবতঃ হুনায়নের যুদ্ধে বন্টন করেন। আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন? তিনি বললেন, একবার।
হাদীস নং-১৬৬৪। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ‘উমরা করেছেন যখন তাঁকে মুশরিকরা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী বছর ছিল হুদায়বিয়ার (চুক্তি অনুযায়ী) ‘উমরা, (তৃতীয়) ‘উমরা (জী’রানা) যুল-কা’দা মাসে আর হাজ্জের (হজ্জ) মাসে অপর একটি ‘উমরা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৬৫। হুদাবা/পাশা ইবনু খালিদ (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ‘উমরা করেছেন। তন্মধ্যে হাজ্জের (হজ্জ) মাসে যে ‘উমরা করেছেন তা ছাড়া বাকী সব ‘উমরাই যুল-কা’দা মাসে করেছেন অর্থাৎ হুদায়বিয়ার ‘উমরা, পরবর্তী বছরের ‘উমরা, জী’রানার ‘উমরা যেখানে তিনি হুনায়নের মালে গনীমত বন্টন করেছিলেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) মাসে আদায়কৃত মাসে আদায়কৃত ‘উমরা।
হাদীস নং-১৬৬৬। আহমদ ইবনু ‘উসমান (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা করেছেন। রাবী বলেন, আমি বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) করার আগে দু’বার যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৬৭। মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমার বাঁধা কিসের? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে ছলে গেছেন। আর মাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, রমযান এলে তখন ‘উমরা করে নিও। কেননা, রমযানের একটি ‘উমরা একটি হাজ্জের (হজ্জ) সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৬৮। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমরা সাসূলুল্লাহ –এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম যখন যিলহাজ্জ আগত প্রায়। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে হাজ্জের (হজ্জ) ইবহাম বাঁধাতে চায়, যে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে ‘উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আমতাম তা হলে অবশ্যি আমি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধালেন, আবার কেউ হাজ্জের (হজ্জ)। যারা ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের একজন। ‘আরাফার দিন এল, তখন আমি ঋতুবর্তী ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তা জানালাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও এবং মাথায় বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। যখন মুহাসসাবের রাত হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সঙ্গে (আমার ভাই) ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈমে পাঠালেন এবং আমি ছেড়ে দেওয়া ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলাম।
হাদীস নং-১৬৬৯। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাওয়ারীর পিঠে ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বসিয়ে তান’ঈম থেকে ‘উমরা করানোর নির্দেশ দেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) একবার বলেন, এ হাদীস আমি ‘আমরের কাছে বহুবার শুনেছি।
হাদীস নং-১৬৭০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ছাড়া কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ের ইহরাম বেঁদেছেন, আমিও তার ইহ্রাম বাঁধলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ইহ্রামকে ‘উমরায় পরিণত করতে এবং তাওয়াফ করে এরপর মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার রয়েছে (তারা হালাল হবে না) তাঁরা বললেন, আমরা মীনার দিকে রওয়ানা হবো এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছলে তিনি বললেনঃ যদি আমি এ ব্যাপার পূর্বে জানতাম, যা পরে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে আনতাম না। আর যদি কুরবানীর পশু আমার সঙ্গে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। তার (একবার) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হাজ্জের (হজ্জ) সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করেলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার তো হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরা উভয়টি পালন করে ফিরছেন, আমি কি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করেই ফিরব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্দুর রাহমাইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তান’ঈমে যায়। তারপর যিলহাজ্জ মাসেই হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ের পর ‘আয়িশা (রাঃ) ‘উমরা আদায় করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামরাতুল ‘আকাবায় কংকর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম (রাঃ)-এর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ হাজ্জের (হজ্জ) মাসে ‘উমরা আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস? রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এতো চিরদিনের (সকলের) জন্য।
হাদীস নং-১৬৭১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন যিলহাজ্জ মাস আগত প্রায়, তখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতে চায়, সে যেন ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধে নেয়। আর যে ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধতে চায় সে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতাম। তাই তাঁদের কেউ ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন আর কেউ হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধলেন। যারা ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন। এরপর মক্কা পৌঁছার আগেই আমার ঋতু দেখা দিল। ‘আরাফার দিবস চলে এল, আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। তারপর তামার এ অসুবিধার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও। আর বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। সুহাস্সাবের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈম পাঠালেন। (রাবী বলেন) ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) তাঁকে সাওয়ারীতে নিজের পেছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর ‘আয়িশা (রাঃ) আগের ‘উমরার স্থলে নতুন ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন। এমনিভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা উভয়টই পুরা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর কোন ক্ষেত্রেই কুরবানী বা সাদাকা দিতে কিংবা সিয়াম পালন করতে হয়নি।
হাদীস নং-১৬৭২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আসোয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাহাবীগণ ফিরছেন দু’টি নুসূক (অর্থাৎ হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা) পালন করে আর আমি ফিরছি একটি নুসূক (শুধু হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে। তাঁকে বলা হল, অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তান’ঈমে গিয়ে ইহ্রাম বাঁধবে এরপর অমুক স্থানে আমাদের কাছে আসবে। এ’উমরা (এর সওয়াফ) হবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুপাত।
হাদীস নং-১৬৭৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম্ বেঁধে বের হলাম, হাজ্জের (হজ্জ) মাসে এবং হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালনের উদ্দেশ্যে। যখন সারিফ নামক স্থানে অবতণ করলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে বললেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই এবং সে এই ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করতে চায়, সে যেন তা করে নেয় (অর্থাৎ ‘উমরা করে হালাল হয়)। আর যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার আছে সে এরূপ করবে না (অর্থাৎ হালাল হতে পাওরবে না)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সমর্থ সাহাবীর নিকট কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাঁদের ‘উমরা হয়নি। [‘আয়িশা (রাঃ) বললেন] আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি আপনার সাহাবীগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো ‘উমরা থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি অবস্থা? আমি বললাম, আমি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছি না। তিনি বললেনঃ এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো একজন আদম কন্যাই। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। সম্ভাবতঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ‘উমারাও দান করবেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি এ অবস্থায়ই থেকে গেলাম এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাস্সাবে অবতরণ করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ তুমি তোমায়াফ করে নিবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আমরা মধ্যরাতে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি তাওয়াফ সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। এ সময় তিনি সাহাবীগণকে রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। তাই লোকজন এবং যাঁরা ফজরের পূর্বে তাওয়াফ করেছিলেন তাঁরা রওয়ানা হলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
হাদীস নং-১৬৭৪। আবূ নু’আইম (রহঃ) ই’য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি’ররানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত একব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনি ‘উমরাতে আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হল্দে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অহী নাযিল করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেওয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে চাই। ‘উমরা (রাঃ) বললেন, এসো, আল্লাহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। তারপর ‘উমর (রাঃ) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরীভুত হলে তিনি বললেনঃ ‘উমরা সম্পর্কে পেশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার থেকে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালুকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রঙ পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হাজ্জে (হজ্জ) যা করেছ ‘’উমরাতে তুমি তা-ই করবে।
হাদীস নং-১৬৭৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর বানীঃ সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। (২:১৫৮) তাই সাফা-মারওয়ার সা’য়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হতঃ অর্থাৎ এ দু’টির মাঝে তাওয়াফ না করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহ্রাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সমানে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতারাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। সুফিয়ান ও আবূ মু’আবিয়া (রাঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ না করলে আল্লাহ কারো হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরাকে পূর্ণাঙ্গ গন্য করেন না।
হাদীস নং-১৬৭৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ‘উমরা করলাম। তিনি মক্কা প্রবেশ করে তাওয়াফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। এরপর তিনি সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে সা’য়ী করলাম। আর আমরা তাঁকে মক্কাবাসীদের থেকে লুকিয়ে রাখছিলাম যাতে কোন মুশরিক তাঁর প্রতি কোন কিছু নিক্ষেপ করতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এক সাথী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন? তিনি বললেন, না। প্রশ্নকারী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা (রাঃ) সম্বন্ধে কি বলেছেন? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাদীজাকে বেহেশতের মাঝে একটি মোতি দিয়ে নির্মিত এমন একটি ঘরের সুসংবাদ দাও যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন প্রকার কষ্ট ক্লেশও থাকবে না।
হাদীস নং-১৬৭৭। হূমায়দী (রহঃ) ‘আমার ইবনু দ্বীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমরার মাঝে বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়র তাওয়াফ না করে যে স্ত্রীর নিকট গমন করে, এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) এসে বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে মাকামে ইব্রাহীমের পাশে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এরপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’য়ী করেছেন। আর তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ তো রয়েছে আল্লাহর রাসূল -এর মাঝেই। (রাবী) ‘আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কেও আমরা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেছেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ তার স্ত্রীর নিকট অবশ্যই যাবে না।
হাদীস নং-১৬৭৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবূ মূসা আল-আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় বাতহায় অবতারণ করলে আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি হাজ্জ (হজ্জ) করেছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কিসের ইহ্রাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহারামের মত আমিও ইহ্রামের তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভাল করেছ। এখন বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে হালাল হয়ে যাও। তারপর আমি বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে কায়স গোত্রের এক মিহিলার কাছে গেলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম এবং ‘উমর (রাঃ)-এর খিলাফত পর্যন্ত আমি এভাবেই ফতোয়া দিতে থাকি। ‘উমর (রাঃ) বললেন, যদি আমরা আল্লাহর কিতাব গ্রহণ করি তা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী গ্রহণ করি তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার তার স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত হালাল হননি।
হাদীস নং-১৬৭৯। আহমদ (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, যখনই আসমা (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ)ন এলাকা দিয়ে গমন করতেন তখনই তাঁকে বলতেন শুনেছেন আল্লাহ তাঁর রাসূল) -এর প্রতি রহমত নাযিল করুন, এ স্থানে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে অবতরণ করেছিলাম। তখন আমাদের বোঝা ছিল খুব অল্প, যানবাহন ছিল একেবারে নিগণ্য এবং সম্বল ছিল খুবই কম। আমি, আমার বোন ‘আয়িশা (রাঃ), যুবাইর (রাঃ) এবং অমুক অমুক ‘উমরা আদায় করলাম। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে আমরা সকলেই হালাল হয়ে গেলাম এবং সন্ধ্যাকালে হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধলাম।
হাদীস নং-১৬৮০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন জিহাদ, বা হাজ্জ (হজ্জ) অথবা ‘উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন তিনি প্রত্যেক উঁচু ভূমিতে তিনবার তাকবীর বলতেন এবং পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সর্বময় ক্ষমতা এবং সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, আমাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, নিজ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রুদল্কে পরাজিত করেছেন।
হাদীস নং-১৬৮১। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলে ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে খোশ-আমদেদ জানায়। তিনি একজনকে তাঁর সাওয়রীর সামিনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন।
হাদীস নং-১৬৮২। আহমদ ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ‘মসজিদে শাজারাতে’ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
হাদীস নং-১৬৮৩। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখনো পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি সকাল কিংবা বিকালে ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করাতেন না।
হাদীস নং-১৬৮৪। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইর্ন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৮৫। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারাইয়াম (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদিনার উঁচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনী দ্রুতগতিতে চালাতেন তার বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন।
হাদীস নং-১৬৮৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (উচু রাস্তা)-এর পরিবর্তে (দেয়ালগুলো) সব্দ বলেছেন। হারিস ইবনু ‘উময়র (রহঃ) ইসমা’ঈল (রহঃ)-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হারিস ইবনু ‘উমায়র হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ণনায় আরো বাড়িয়ে বলেছেন, মদিনার মহব্বতে তিনি বাহনকে দ্রুত চালিত করতেন।
হাদীস নং-১৬৮৭। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বাবা’ (রাঃ)-কে বলতে শুনেদি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হাজ্জ (হজ্জ) করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফেরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেওয়া হয়। তখনই নাযিল হয়ঃ পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর। (২:১৮৯)
হাদীস নং-১৬৮৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবলম্বনে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়।
হাদীস নং-১৬৮৯। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কার পথে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। সাফিয়্যা বিনত আবূ ‘উবায়দ (রাঃ)-এর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ তাঁর কাছে পৌছল। তখন তিনি গতি বাড়িয়ে দিলেন। (পশ্চিম আকাশের) লালিমা অদৃশ্য হবার পর সাওয়ারী থেকে নেমে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করেন। তারপর বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, সফরে দ্রুত চলার প্রয়োজন হলে তিনি মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করতেন।
হাদীস নং-১৬৯০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাঙ্গামা চলাকালে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘উমরার নিয়ত করে মক্কায় রওয়ানা হওয়ার পর বললেন, বায়তুল্লাহর পথে বাধাগ্রস্ত হলে, তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৯১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) নাফি’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) উভয়ই তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ) বাহিনী ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, সে সময়ে তাঁরা উভয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বুঝালেন। তাঁরা বললেন, এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) না করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আমরা আশষ্কা করছি, আপনার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। কিন্তু বায়তুল্লাহর পথে কাফির কুরায়শরা আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু যবেহ করে মাথা মুড়িয়ে নিয়েছিলেন। এখন আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার নিজের জন্য ‘উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছি। আল্লাহ চাহেন তো আমি এখন রওয়ানা হয়ে যাব। যদি আমার এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা না আসে তাহলে আমি তাওয়াফ করে নিব। কিন্তু যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমি তখনই সেরূপ করব যেরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন আর আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তারপর তিনি যুল-হুলাইফা থেকে ‘উমরার ইহরাম বেধেঁ কিছুক্ষণ চললেন, এরপরে বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, নিশ্চয়ই আমি আমার ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)ও নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিলাম। তাই তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা কোনটি থেকেই হালাল হননি। অবশেষে কুরবানী দিন কুরবানী করলেন এবং হালাল হলেন। তিনি বলতেন, আমরা হালাল হব না যতক্ষণ পর্যন্ত না মক্কায় প্রবেশ করে একটি তাওয়াফ করে নিই।
হাদীস নং-১৬৯২। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কোন এক ছেলে তাঁর পিতাকে বললেন, যদি আপনি এ বছর বাড়িতে অবস্থান করতেন (তাহলে আপনার জন্য কতই না কল্যাণকর হত)!
হাদীস নং-১৬৯৩। মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুদায়বিয়াতে) বাধাপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি মাথা কামিয়ে নেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং প্রেরিত জানোয়ার কুরবানী করেন। অবশেষে পরবর্তী বছর ‘উমরা আদায় করেন।
হাদীস নং-১৬৯৪। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? তোমাদের কেউ যদি হাজ্জ (হজ্জ) করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় যে যেন (‘উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে তাওয়াফ করে সব কিছু থেকে হলাল হয়ে যায়। অবশেষে পরবর্তী বছর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেয়। তখন সে কুরবানী করবে আর যদি কুরবানী দিতে না পারে তবে সিয়াম পালন করবে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৯৫। মাহামুদ (রাঃ) মিসওয়ার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামানোর আগেই কুরবানী করেন এবং সাহাবাদের অনুরূপ করার নির্দেশ দেন।
হাদীস নং-১৬৯৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদূর রহীম (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ এবং সালিম (রাঃ) উভয়ই ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ‘উমরার নিয়ত করে আমরা রওয়ানা হলে যখন কুরায়শের কাফিররা বায়তুল্লাহর অনতিদূরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উট কুরবানী করেন এবং মাথা কামিয়ে ফেলেন।
হাদীস নং-১৬৯৭। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, (মক্কা মুকার্রামায়) গোলযোগ চলাকালে ‘উমরার নিয়ত করে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) যখন মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন বললেন, বায়তুল্লাহ থেকে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধালেন। করাণ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। তারপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিজের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে বললেন, উভয়টি তো একই রকম। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)কে ওয়াজিব করে নিলাম। তিনি উভয়টির জন্য একই তাওয়াফ করলেন এবং এটাই তাঁর পক্ষ থেকে যথেষ্ট মনে করেন, আর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৬৯৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বোধ হয় তোমার এই কীটেরা (উকুন) তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও কিংবা একটি বকরী কুরবানী কর।
হাদীস নং-১৬৯৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে দাঁড়ালেন। এ সময় আমার মাথা থেকে উকুন ঝরে পরেছিল। রাসূলল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার এই কীটগুলো (উকুন) কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হাঁ, তিনি বললেনঃ মাথা মুড়িয়ে নাও অথবা বললেন, মুড়িয়ে নাও। কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বলেন, আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই আয়াতটিঃ তোমাদের মধ্যে যদি পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে (২ : ১৯৬)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তিনদিন সিয়াম পালন কর কিংবা এক ফরক (তিন সা’ পরিমাণ) ছয়জন মিসকীনের মধ্যে সা’দকা কর, অথবা কুরবানী কর যা তোমার জন্য সহজসাধ্য।
হাদীস নং-১৭০০। আবূল ওলীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’কিল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ)-এর পাশে বসে তাঁকে ফিদ্য়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এ আয়াত বিশেষভাবে আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। তবে এ হুকুম সাধারণভাবে তোমাদের সকলের জন্যই। রাসূলল্লাহ -এর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। তখন আমার চেহারায় উকুন বেয়ে পড়ছে। তিনি বললেনঃ তোমার কষ্ট বা পীড়া যে পর্যায়ে পৌছেছে দেখতে পাচ্ছি, আমার তো আগে ই ধারণা ছিল না। তুমি কি একটি বকরীর ব্যবস্থা করতে পারবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে অর্ধ সা’করে খাওয়াও।
হাদীস নং-১৭০১। ইসহাক (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারায় উকুন হজরে পড়তে দেখে তাঁকে বল্লেনঃ এই কিটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বলেন, হাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মাথা কামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় ছিলেন। এখানেই তাঁদের হালাল হয়ে যেতে হবে এ বিষয়টি তখনো তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। তারা মক্কায় প্রবেশের আশা করছিলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা ফিদ্যার হুকুম নাযিল করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এক ফরক খাদ্যশস্য ছয়জন মিস্কীনের মধ্যে দিতে কিংবা একটি বকরী কুরবানী করতে অথবা তিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এমতবস্থায় দেখলেন যে, তাঁর চেহারার উপর উকুন পড়ছে। এর বাকি অংশ উপরের হাদীসের উনুরুপ।
হাদীস নং-১৭০২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল এবং স্ত্রী সহবাস করল না এবং অন্যায় আচরন করল না, সে প্রত্যাবর্তন করবে মাতৃগর্ভ থেকে প্রসূত শিশুরু মত হয়।
হাদীস নং-১৭০৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল, অশ্লীলতায় লিপ্ত হলনা এবং আল্লাহর নাফরমানী করল না, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুরু মত হয়ে (হাজ্জ (হজ্জ) প্রত্যাবর্তন করবে।
হাদীস নং-১৭০৪। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর (শত্রুদের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য)বের হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী গন ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল, একটি শত্রুদল তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে চায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। এ সময় আমি তাঁর সাবীদের সাথে ছিলাম। হঠাৎ দেখি যে, তারা একে অন্নের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৫। সা’ঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যাত্রা করলাম। তাঁর সকল সাহাবীই ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। এরপর আমাদেরকে গায়কা নামক স্থানে শত্রুর উপস্থিতি সম্পরকে খবর দেয়া হলে আমরা শত্রুর অভিমুখে রওনা হলাম। আমার সঙ্গী সাহাবীগন একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন।। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ও আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রহঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, মদিনা থেকে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামিক স্থানে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদের দেখলা তাররা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। (রাবী বলেন) এ সময় তাঁর চাবুকটি পড়ে গেল। (তিনি আনিয়ে দেওয়ার কথা বললে) সকলেই বললেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই উঠিয়ে তা একটি নিলাম এরপর টিলার পিছনদিক থেকে গাধাটির কাছে এস্তা শিকার করে তা সাহাবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁদের কেউ বললেন, খাও, আবার কেউ বললেন, খেও না। সুতরাং গাধাটি আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি আআমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বল্ললেন, খাও, এতো হালাল। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমাদেরকে ‘আমর ইবনু দ্বীনার বললেন, তোমরা সালিহ (রহঃ) এবং অন্যান্যের নিকট গিয়ে এ সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা কর। তিনি আমাদের এখানে আগমন করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৭। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তাঁকে তাঁর পিতা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জে (হজ্জ) যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করলেন। তাঁদের থেকে একটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে আবূ কাতাদা (রহঃ) ও ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হবে আমাদের পরশপর সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাঁধলেন না। পথে চলতে চলতে তাঁরা কিছু বন্য গাধা দেখতে পেলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) গাদা হুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী হত্যা করে ফেললেন। এরপর একস্থানে অবতরন করে তাঁরা সকলেই এর গোসত খেলেন। তারপর বললেন, আমরা ও মহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার জন্তুর গোশত খেতে পারি? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট অংশ উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা রাসুলুল্লাহ এর নিকট পৌঁছে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা ইহরাম বেধেছিলাম কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাধেনি। এ সময় আমরা কতগুলো বন্যগাধা দেখতে পেলাম। আবূ কাতাদা (রহঃ) এগুলোর উপর আক্রমন করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেলেন। এক স্থানে অবতরন করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নেই। এরপর বললাম। আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় কি আমরা শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমন করতে তাঁকে আদেশ বা ইশারা করেছঃ তাঁরা বললেন, না, আমার আর তা করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে বাকি গোশত তোমরা খেয়ে নাও।
হাদীস নং-১৭০৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সা’ব ইবনু জাসসামা লায়সী (রহঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবোয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শ) কে একটি জংলী গাধা হাদিয়া দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করে বললেনঃ তা আমি কখনো তোমার নিকত নিকট ফিরিয়ে দিতাম না যদি না আমি মুহরিম না হতাম।
হাদীস নং-১৭০৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করা মুহরিমের জন্য দূষনীয় নয়। ‘আদবুল্লাহ ইবনু দ্বীনার ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনীগনের একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে মুহরিম ব্যাক্তি (নির্দিষ্ট) প্রানী হত্যা করতে পারবে। আসবাগ ইবনু ফারাজ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করাতে তাঁর কোন দোষ নেই। যেমনঃ কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং-১৭১০। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী এত ক্ষতিকর যে এগুলো হারাম শরীফেও হত্যা করা যেতে পারে। (যেমন) কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং-১৭১১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মিনাতে পাহাড়ের কোন এক গুহায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় নাজিল হল তাঁর উপর রাওয়াল মুরসালাত (নামায/নামাজ)। তিনি সূরাটি তিলোয়াত করিছিলেন। আর আমি তাঁর পবিত্র মুখ থেকে গ্রহন করছিলাম। তাঁর মুখ (তিলোয়াতের ফলে)সিক্ত ছিল। এমতবস্থায় আমাদের সামনে একটি একটি সাপ লাফিয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে মেরে ফেল। আমরা দৌড়িয়ে গেলে সাপটি চলে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রক্ষা পেল সাপটি তোমাদের অনিষ্ট থেকে যেমন তোমরা রক্ষা পেলে এর অনিষ্ট থেকে। আবূ আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন, এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে মিনা হারাম শরীফের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সাপ মারাকে দোষ মনে করতেন না।
হাদীস নং-১৭১২। ইসমাইল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনি ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন, রাসুল কাঁকলাস কে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু একে হত্যা করার আদেশ দিতে আমি তাঁকে শুনিনি।
হাদীস নং-১৭১৩। কুতায়বা (রহঃ) আবূ সুরাইয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি ব’আমর ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) কে বললেন। যখন আমর মক্কায় সেনাবাহিনী প্রেরন করেছিলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন। আমি আপনাকে এমন কহতা শোনাব যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়য়ের পরের দিন ইরশাদ করেছিলেন। আমার দু’টি কান ঐ কথা গুলো শুনেছে, হৃদয় সেগুলো স্মৃতিতে একে রেখেছে এবং আমার চোখ দু্টো তা প্রত্যক্ষ করেছে। যখন তিনি কথা গুলো বলেছিলেন, তখন তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে মহাসম্মানিত করেছেন। কোন মানুষ তাঁকে মহাসম্মানিত করেনি। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্য মক্কায় রক্তপাত করা বা এর কোন গাছ কাঁটা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসুল কর্তৃক লড়াই পরিচালনার কারনে যদি কেউ যুদ্ধ করার অনুমতি দেয় তাহলে তাঁকে তোমরা বলে দিও, আল্লাহ তাঁর রাসুল কে তো অনুমতি দিয়েছিলেন। তোমাদেরকে তো আর তিনি অনুমতি দেননি। আর এ অনুমতিও কেবল শুধু আমাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আজ (পরের দিন) পুনরায় নিষিদ্ধতা পূনর্বহাল করা হয়েছিল যেমনি ভাবগতকাল ছিল। অতএব প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তির নিকট এই বার্তা পৌঁছে দেয়। আবূ সুরাইয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞেসা করা হল, আপনাকে ‘আমর কি জবাব দিয়েছিলেন? তিনি বললেন, ‘আমর বলেছিলেন, হে আবূ শুরু ায়হ! এর বিষয়টি আমি তোমার থেকে ভাল জানি। হারাম কোন অপরাধীকে, হত্যা করে পলাতক ব্যাক্তিকে এবং চুরি করে পলায়নকারী ব্যাক্তিকে আশ্রয় দেয় না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, শব্দের অর্থ হল ফিতনা – ফাসা’দ।
হাদীস নং-১৭১৪। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল হবে না। তবে আমার জন্য তা কেবল কিছুদিনের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছিল। তাই এখানকার ঘাস, লতাপাতা কাঁটা যাবে না। কোন শিকার জন্তুকে তাড়ান যাবে না এবং কোন হারানো বস্তুকেও হস্তগর করা যাবে না। অবশ্য ঘোষনাকারী ব্যাক্তি এ নিয়মের ব্যতক্রম। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! স্বর্ণকার এবং আমাদের কবরে ব্যবহারের জন্য ইযখির ঘাস গুলোকে বাদ রাখুন। তিনি বল্ললেনঃ হাঁ ইযখির কে বাদ দিয়েই। খালিদ (রাঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেছেন হারামের শিকার জানোয়ারকে তাড়ানো যাবে না, এর অর্থ তুমি কি যান? এর অর্থ হল ছায়া থেকে তাঁকে তাড়িয়ে তাঁর স্থানে অবতরন করা।
হাদীস নং-১৭১৫। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ এখন থেকে আর হিজরত নেই, রয়েছে কেবল জিহাদ এবং নিয়ত। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাকা হবে, এ ডাকে তোমরা সাড়া দিবে। আসমান- যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তা’আলা এ শহরকে মহাসম্মানিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনেই কিয়ামত পর্যন্ত এ শহর থাকবে মহাসম্মানিত হিসেবে। এশহর লড়াই করা আমার পূর্বেও কারো জন্য বৈধ ছিল না এবং আমার জন্য ও কিছু অংশ ব্যতীত বৈধ হয়নি। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনে তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত হিসেবে। এর কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না, তাড়ান যাবে না এর শিকার জানোয়ারকে, ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ এ স্থানে পড়ে থাকা কোন বস্তুকে উঠিয়ে নিতে পারবে না এবং কর্তন করা যাবে না এখানকার কাচা ঘাস ও তরুলতাকে। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইযখির বাদ দিয়ে। কেননা এ তো তাঁদের কর্মকারদের জন্য এবং তাঁদের ঘরে ব্যবহারের জন্য। বর্ননাকারী বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ ইযখির বাদ দিয়ে।
হাদীস নং-১৭১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ রাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। অপর এক সুত্রে সুফিয়ান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ননা করেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি বললাম, এ হাদিসটি ‘আমুর (রাঃ) ‘আতা এবং তাউস (রহঃ) উভয় থেকে শুনেছেন।
হাদীস নং-১৭১৭। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধা অবস্থায় ‘লাহইয়ে জামাল’ নামক স্থানে তাঁর মাথার মধ্যখানে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৭১৮। আবূল মুগীরা ‘আব্দুল কুদ্দুস ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মুনা (রাঃ) কে বিবাহ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭১৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপি পরিধান করবে না। তবে কারো যদি না থাকে তা হলে সে যেন মোজা পরিধান করে তাঁর গিরার নিচের অংশটুকু কেটে নেয়। তোমরা জাফরান এবং ওয়ারস লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগন মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা লাগাবে না। মূসা ইবনু ‘উকবা, ইসমাইল ইবনু ইব্রাহিম ইবনুু’ উকবা, জিওয়ায়রিয়া, ইবনু ইসহাক (রহঃ) নেকাব এবং হাত মোজার বর্ননায় লায়স (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর--- স্থলে --- বলেছেন এবং তিনি বলতেন, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মালিক (রহঃ) নাফি (রহঃ) এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম (রহঃ) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন।
হাদীস নং-১৭২০। কুতায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক মুহরিম ব্যাক্তিকে তাঁর উষ্ট্রী ফেলে দেয়, ফলে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় এবং মারা যায়। তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হয়। তিনি বললেনঃ তোমরা তাঁকে গোসল করাও এবং কাফন পরাও। তবে তাঁর মাথা ঢেকে দিওনা এবং সুগন্ধি লাগিও না। তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় কিয়ামতের ময়দানে উঠানো হবে।
হাদীস নং-১৭২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামিক স্থানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) এর মধ্যে মতানৈক্য হল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি তা র মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, মুহরিম তাঁর মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। আমি তাঁকে কূপ থেকে পানি ঊঠানোর চরকার দু’খুটির মাঝে কাপড়ঘেরা অবস্থায় গোসল করতে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, কে? বললাম, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ুন। মুহরিম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মাথা ধৌত করতে, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবূ আইয়ুব (রাঃ) তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যাক্তিকে, যে তাঁর মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৭২২। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুহরিমদের উদ্দেশ্যে ;আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ যার চপ্পল নেই এ মোজা পরিধান করবে আর যার লুঙ্গি নেই সে পায়জামা পরিধান করবে।
হাদীস নং-১৭২৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ’আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, মুহরিম ব্যাক্তি কাপড় পরিধান করবে এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ মুহরিম ব্যাক্তি জামা। পাগড়ী, পায়জামা, টূপি এবং জাফরান মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচ থেকে কেটে নিবে।
হাদীস নং-১৭২৪। আদম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার ময়দানে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তাঁর ভাষনে বললেনঃ (মুহরিম অবস্থায়) যার লুঙ্গি নেই সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার চপ্পল নেই সে যেন মোজা পরিধান করে।
হাদীস নং-১৭২৫। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা আদায় করার নিয়তে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী লোকেরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তিনি তাঁদের সাথে এই শর্তে চুক্তি করেন যে, সশস্ত্র অবস্থায় নয় বরং তলোয়ার কোষবদ্ধ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করবেন।
হাদীস নং-১৭২৬। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য ‘যুল-হুলাইফা, নাজদবাসীদের জন্য ‘কারনুল মানাযিল’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থানকে ইহরামের জন্য মীকাত নির্ধারিত করেছেন। এ স্থান গুলোর অধিবাসীদের জন্য এবং হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার সংকল্প করে বাইরে থেকে আগত যাত্রী, যারা এ স্থান দিয়ে অতিক্রম করবে, তাঁদের জন্য এ স্থানগুলো মীকার হিসেবে গণ্য হবে। আর মীকাতের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী লোকেদের জন্য তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা করবে সেটাই তাঁদের ইহরাম বাঁধার জায়গা। এমনকি মক্কাবাসী লোকেরা মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৭২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরস্ত্রাণটি মাথা থেকে খোলার পর এক ব্যাক্তি এসে তাঁকে বললেন, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেনঃ তাঁকে তোমরা হত্যা কর।
হাদীস নং-১৭২৮। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ইয়া’লা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় হলুদ বা অনুরুপ রঙে চিহ্ন বিশিষ্ট জামা পরিহিত এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। আর ‘উমর (রাঃ) আমাকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন অহী নাযিল হয় সে মূহুর্তে তুমি কি তাঁকে দেখতে চাও? এরপর (ঐ সময়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহী নাযিল হল। তারপর এ অবস্থার পরিবর্তন হলে তিনি (প্রশ্নকারীকে) বললেনঃ হাজ্জে (হজ্জ) তুমি যা কর ‘উমরাতেও তাই কর। এক ব্যাক্তি অন্য একজনের হাত কামড়িয়ে ধরলে তাঁর দু’টি দাত উৎপাটিত হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত নালিশ তিনি বাতিল করে দেন।
হাদীস নং-১৭২৯। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তাঁর পরিধেয় দু’টি কাপড়ে তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩০। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকেপড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না এবং হানূত ও লাগাবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩১। ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩২। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের একন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের (হজ্জ) মানত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। তুমি কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋন থাকত তা হলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচাইতে অধিক আদায়যোগ্য।
হাদীস নং-১৭৩৩। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ফাযল ইবনু ;আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা বললেন, (অপর সূত্রে) মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর খাস’আম গোত্রের একজন মহিলা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ করা হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় ফরজ হয়েছে যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলে তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় হবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ (নিশ্চয়ই আদায় হবে)।
হাদীস নং-১৭৩৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস) (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতবস্থায় খাস’আম গোত্রের এক মহিলা আসলেন। ফযল (রাঃ) মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তাঁর দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযল (রাঃ) এর মুখটি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বললেন, আমার পিতা বৃদ্ধ অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ হয়েছে এমন সময়, যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেনঃ হাঁ। এ ছিল বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়কার ঘটনা।
হাদীস নং-১৭৩৫। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মালপত্রের সাথে মুযদালিফা থেকে রাত্রিকালে প্রেরন করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭৩৬। ইসহাক (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আমার গাধীর পিঠে আরোহন করে (মিনায়) আগমন করলাম। তখন আমি সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী ছিলাম। ঐ সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি চলতে চলতে প্রথম কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে চলে যাই। এরপর সওয়ারী থেকে নিচে অবতরন করি। গাধাটি চরে খেতে লাগল। আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে লোকদের সাথে লোকদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে যাই। ইউসুফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ননায় “মিনা’ শব্দের পর ‘বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়’ কথাটি বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৩৭। ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ইউনুস (রহঃ) সায়িব ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
হাদীস নং-১৭৩৮। ‘আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) উমর ইবনু ‘আব্দুল ‘আযীয (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি সায়িব ইবনু সম্পর্কে বলতেন, সায়িবকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সামগ্রীর কাছে বসিয়ে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
হাদীস নং-১৭৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি বল্লামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশ করব না? তিনি বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল মাকবূল হাজ্জ (হজ্জ)। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়ব না।
হাদীস নং-১৭৪০। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করতে যেতে চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাঁর সাথেই যাও।
হাদীস নং-১৭৪১। ‘আব্দান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) থেকে ফিরে এসে উম্মে সিনান (রাঃ) নামক এক আনসারই মহিলাকে বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাতে তোমাকে কিসে বাধা দিলঃ তিনি বলেন, অমুকের আব্বা অর্থাৎ তাঁর স্বামী, কারন পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দু’টি উট আছে। একটিতে সওয়ার হয়ে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে গিয়েছেন। আর অন্য টিতে আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসে একটি ‘উমরা আদায় করা একটি ফরজ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান অথবা বলেছেনঃ আমার সাথে একটি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান। হাদীসটি ইবনু জুরায়াজ (রহঃ) ’আতা (রহঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন এবং ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) এর সূত্রে এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৪২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যিয়াদের আযাদকৃত গোলাম কাযা’আ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ইদ (রাঃ) কে যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বারটি যুদ্ধে অনশগ্রহন করেছিলেন, বলতে শুনেছি, চারটি বিষয় যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি (অথবা) তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করতেন। আবূ সা’ইদ (রাঃ) বলেন, এ বিষয় গুলো আমাকে আশ্চর্যানিত করে দিয়েছে এবং চমৎকৃত করে ফেলেছে। (তা হল এই) স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা দুই দিনের পথ সফর করবে না। ‘ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা এ দুই দিন কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। ‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা – এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহন করবে না।
হাদীস নং-১৭৪৩। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে তাঁর দুই ছেলের উপর ভর করে হেটে যেতে দেখে বললেনঃ তাঁর কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, তিনি পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা’আলার এর কোন প্রয়োজন নেই। তাই তিনি তাঁকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন।
হাদীস নং-১৭৪৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ’উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিন বলেন, আমার বোন পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফতোয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ার ও হোক। ইয়াযিদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) বলেন, আবূল খায়ের (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না।
হাদীস নং-১৭৪৫। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকেও এ হাদীস বর্নিত রয়েছে। ১৭৪৪ নম্বর হাদিস দেখুন।
হাদীস নং-১৭৪৬। আবূ’ন নু’মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনা এখান থেকে ওখান পর্যন্ত হারাম (রুপে গন্য)। সুতরাং তাঁর গাছ কাঁটা যাবে না এবং কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ মদিনায় করা যাবে না। কেই যদি কুরআন -সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ করে তাহলে তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং ফিরিশতাদের ও সকল মানুষের।
হাদীস নং-১৭৪৭। আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে মসজিদ নির্মানের আদেশ দেন। তারপর বলেঃ হে বনূ নাজ্জার! আমার নিকট থেকে মূল্য নিয়ে (ভূমি) বিক্রি কর। তাঁরা বললেন। আমরা এর মূল্য কেবল আল্লাহর নিকট চাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কব খুড়ে ফেলা হল এবং ধ্বংসাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছ গুলো কেটে ফেলা হল। কেবল মসজিদের কিবলার দিকে কিছু খেজুর গাছ সারিবদ্ধভাবে রাখা হল।
হাদীস নং-১৭৪৮।ইসমাইল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার দু’পাথরে ভুমির মধ্যবর্তী স্থান আমার ঘোষনা মোতাবেক নর্ধারিত করা হয়েছে। বর্ননাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ হারিসার নিকট তাশরীফ আনেন এবং বলেনঃ হে বানূ হারিসা! আমার ধারনা ছিল যে তোমরা হারামের বাইরে অবস্থান করছ, তারপর তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাত করে বললেনঃ (না তোমরা হারামের বাইরে নও)বরং তোমরা হারামের ভিতরেই আছো।
হাদীস নং-১৭৪৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশআর (রহঃ) ’আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত এই সহীফা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি আরো বলেন, ’আয়ির নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদিনা হল হারাম। যদি কেউ এতে কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ অসঙ্গত কোন কাজ করে অথবা কুরআন- সুন্নাহর খেলাফ, আচরণকারী আশ্রয় দেয়, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহর লা’নত এবং সকল ফেরেশতা এবং মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। তিনি আরো বলেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং সকল মানুষের ও ফিরিশতাদের। আর কবুল করা হবে না তাঁদের কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত। যে ব্যাক্তি তাঁর মাওলার (মিত্রের) অনুমতি ব্যতীত অন্য অন্য কাওমের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তাঁর প্রতিও আল্লাহর লা’নত এবং সক ফেরেশতা ও মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’আদলুন অর্থ বিনিময়।
হাদীস নং-১৭৫০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদের উপর জয়ী হবে। লোকেরা তাঁকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদিনা। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
হাদীস নং-১৭৫১। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদিনায় নিকতবর্তী স্থানে পৌছলে, তিনি বললেনঃ এই হল তাবা।
হাদীস নং-১৭৫২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলতেন, আমি যদি মদিনাতে কোন হরিণকে বেড়াতে দেখি তাহলে তাঁকে আমি তাড়াবো না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার কংকরময় দুই এলাকার মধ্যবর্তী এলাকা হল হারাম বা সম্মানিত স্থান।
হাদীস নং-১৭৫৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তম অবস্থায় মদিনাকে রেখে যাবে। আর তখন জীবিকা অন্বেষনে বিচরণকারী অর্থাৎ পশু-পাখি এসে মদিনাকে আচ্ছন্ন করে নেবে। সবশেষে যাদের মদিনাতে একত্রিত করা হবে তাঁরা হল মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তাঁরা তাঁদের বকরিগূলোকে হাক-ডাক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মদিনাতে আসবে। এসে দেখবে মদিনা বন্য পশুতে ছেয়ে গেছে। এরপর তাঁরা সানিয়্যাতুল-বিদা নামক স্থানে পৌঁছতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
হাদীস নং-১৭৫৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদিনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।
হাদীস নং-১৭৫৫। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান মদিনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তাঁর গর্তে ফিরে আসে।
হাদীস নং-১৭৫৬। হুসাইন ইবনু হুরায়স (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ মদিনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারনা করবে, সে লবন যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে।
হাদীস নং-১৭৫৭। ‘আলী ইবনু আব্দুল্ললাহ (রাঃ) উসামানার কোন একটি টিলায় আরোহন করে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? তিনি বললেন বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফিতনা স্থানসমূহ দেখতে পাচ্ছি। মা’মার ও সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ননায় সুফিয়ানের অনুসরন করেছেন।
হাদীস নং-১৭৫৮। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আব্দল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনাতে দাযযালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফিরিশতা (মোতায়েন) থাকবে।
হাদীস নং-১৭৫৯। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফিরিশতা প্রহরায় নিয়োজিত থাকবে। তাই প্লেগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ কতে পারবে না।
হাদীস নং-১৭৬০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ সা’ইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ননা করেছেন। বর্নিত কথা সমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদিনায় প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ অরা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদিনার নিকতবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরন করবে। তখন তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি যাবে যে উত্তম ব্যাক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। দাজ্জাল বলবে, আমি যদি তাঁকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তাঁরা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিলনা। তারপর দাজ্জাল বলবে , আমি লোকটিকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে আর হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
হাদীস নং-১৭৬১। ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফিরিশতা গন সারিবদ্ধ ভাবে পাহারায় নিয়জিত থাকবে। এরপর মদিনা তাঁর অধিবাসীদেরকে তিন বার কেপে উঠবে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দেবেন।
হাদীস নং-১৭৬২। ‘আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ইসলামের উপর বায়’আত গ্রহন করলো। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল , আমার (বাইয়’আত) ফিরিয়ে নিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখান করলেন। এভাবে তিনবার হল। তারপর বললেনঃ মদিনা কামারের হাফরের মত, যা তাঁর আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভুত করে এবং খাঁটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে।
হাদীস নং-১৭৬৩। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যাতেয়া অরে তাঁর কতিপয় সাথী ফিরে আসলে একদল লোক বলতে লাগল, আমরা তাদেরকে হত্যা করব, আর অন্য দলটি বলতে লাগল, আনা, আমরা তাদেরকে হত্যা অরব না। এ সময়ই (তোমাদের কি হল, তোমরা মুনাফিকদের সম্পর্কে দু’দল হয়ে পড়েছ?) আয়াতটি নাযিল হয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা লোকদেরকে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
হাদীস নং-১৭৬৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মক্কাতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মদিনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও। ‘উসমান ইবনু ‘উমর (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে হাদীসটি জাবীর (রাঃ) র মতই বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৬৫। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার পথে যখন তিনি মদিনার প্রাচীর গুলোর দিকে তাকাতেন, তখন তিনি তাঁর উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তুর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদিনার ভালবাসার কারনে।
হাদীস নং-১৭৬৬। ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বনূ সালিমা গোত্রের লোকেরা মসজিদের নববীর নিকটে চলে যাওয়ার সংকল্প করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকে জনশূন্য করা অপছন্দ করলেন, তাই তিনি বললেন হে বনূ সালিমা! মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের হাটার সওয়াব কি তোমরা হিসাব কর না? এরপর তাঁরা সেখানেই রয়ে গেল।
হাদীস নং-১৭৬৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও মম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি হল জান্নাতের বাগানের একটি বাগান, আর আমার মিম্বরটি হল আমার হাউযের উপর অবস্থিত।
হাদীস নং-১৭৬৮। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় শুভাগ্মন করলে আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবূ বাকর (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেনঃ ‘’প্রত্যেক ব্যাক্তই তাঁর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তাঁর জূতার ফিতা চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। আর বিলাল (রাঃ) জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেনঃ ‘’হায় , আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস। মাজানো্না নামক ঝর্নার পানি কোন দিন পান করার সুযোগ পাব কি? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি শায়বা ইবনু রাবী’আ, ‘উতবা ইবনু রাবী’আ এবং উমায়্যা ইবনু খালফের প্রতি লা’নত বর্ষন কর; যেমনি ভাবে তাঁরা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা এর চেয়ে বেশী। হে আল্লাহ! আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান কর এবং মদিনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদিনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদিনায় বুথান নামক একটি ঝর্না ছিল যার থেকে বিকৃত বর্ণ বিকৃত স্বাদের পানি প্রবাহিত হত।
হাদীস নং-১৭৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এ বলে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শহরে দাও। ইবনু যুরায়’ই (রহঃ) হাফসা বিনত, উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে অনুরুপ বর্ননা করতে শুনেছি। হিশাম (রহঃ) বলেন, যায়দ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’রাওহ তাঁর মায়ের সূত্রে এরুপ বলেছেন। ‘’
পাঁচ দিন বাকী থাকতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন ইচ্ছা ছিল না। যখন আমরা মক্কার কাছাকাছি পৌছলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে হালাল হয়ে যায়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশ্ত আনা হলে আমি বললাম, এ কি? তারা বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীসখানা কাসিমের নিকট আলোচনা করলে তিনি বললেন, সঠিকভাবেই তিনি হাদিসটি তোমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬০২। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কুরবানীর স্থানে কুরবানী করতেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, (অর্থাৎ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর স্থানে।
হাদীস নং-১৬০৩। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুযদালিফা থেকে শেষ রাতের দিকে হাজীদের সাথে, যাদের মধ্যে আযাদ ও ক্রীতদাস থাকত, নিজ কুরবানীর জানোয়ার পাঠিয়ে দিতেন, যাতে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কুরবানীর স্থানে পৌছে যায়।
হাদীস নং-১৬০৪। সাহ্ল ইবনু বাক্কার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদিনাতেও হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি দুম্বা তিনি কুরবানী করেছেন। এখানে হাদিসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস নং-১৬০৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি আসলেন এমন এক ব্যাক্তির নিকট, যে তার নিজের উটটিকে নহর করার জন্য বসিয়ে রেখেছিল। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, সেটি উঠিয়ে দাঁড়ান অবস্থায় বেঁধে নাও। (এ) মুহাম্মদ –রে সুন্নত। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন যে, শু’বা (রহঃ) ইউনুস সূত্রে যিয়াদ (রহঃ) থেকে হাদিসটি । শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬০৬। সাহ্ল ইবনু বাক্কার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে-বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে যোহর চার রাক’আতে এবং যুল হুলাইফাতে ‘আস্র দু’রাক’আত আদায় করলেন এবং এখানেই রাত যাপন করলেন। ভোর হলে তিনি সাওয়ারীতে আরোহণ করে তাহ্লীল ও তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। এরপর বায়াদায় যাওয়ার পর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন এবং মক্কায় প্রবেশ করে তিনি সাহাবাদের ইহ্রাম খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। আর (সে হাজ্জে (হজ্জ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নিজ হাতে কুরবনী করেন আর মদিনাতে হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি মেষ কুরবানী দেন।
হাদীস নং-১৬০৭। মুদাদ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে যোহর চার রাক’আত এবং যুল-হুলাইফাতে ‘আসর দু’রাক’আত আদায় করেন। আয়্যূব (রহঃ) এক ব্যাক্তির মাধ্যমে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এরপর তিনি সেখানে রাত যাপন করেন। ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর সাওয়ারীতে আরোহণ করেন। সাওয়ারী বায়াদায় পৌঁছে সোজা হয়ে দাঁড়ালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন।
হাদীস নং-১৬০৮। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পাঠালেন, আমি কুরবানীর জানোয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, তারপর তিনি আমাকে আদেশ করলেন। আমি ওগুলোর গোশ্ত বন্টন করে দিলাম। এরপর তিনি আমাদের আদেশ করলেন। আমি এর পিঠের আবরণ এবং চামড়াগুলোও বিতরণ করে দিলাম। সুফিয়ান (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে এবং এর থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে কসাইকে কিছু না দিতে।
হাদীস নং-১৬০৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোস্ত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং এর থেকে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসাবে কিছুই না দেওয়া হয়।
হাদীস নং-১৬১০। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর একশ’ উট পাঠান এবং আমাকে গোশত সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। আমি তা বন্টন করে দিলাম। এরপর তিনি তার পিঠের আবরণ সম্বন্ধে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম। তারপর তিনি আমাকে চামড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দেন, আমি তা বন্টন করে দিলাম।
হাদীস নং-১৬১১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্ত মিনাত তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। রাবী বলেন, আমি ‘আতা (রহঃ)-কে বললাম, জাবির (রাঃ) কি বলেছেন আমরা মদিনায় আসা পর্যন্ত? তিনি বললেন, না।
হাদীস নং-১৬১২। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুল-কা’দার পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়া আমরা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি, অবশেষে আমরা যখন মক্কার নিকটে পৌছলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যায়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর কুরবানীর দিন আমাদের কাছে গরুর গোশত পাঠানো হল। আমি বললাম, এ কি? বলা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, আমি কাসিম (রহঃ)-এর নিকট হাদিসটি উল্লেখ করলে তিনি বললেন, ‘আমরা (রহঃ) হাদীসটি ঠিকভাবেই তোমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬১৩। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) হব্ন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে মাথা কামনোর আগে কুরবানী অথবা অনুরূপ কোন কাজ করেছে। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই, এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬১৪। আহ্মদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, আমি কংকর মারার আগেই আওয়াফে যিয়ারত করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী পুনরায় বললেন, আমি যবেহ করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সাহাবী আবারও বললেন, আমি কংকর মারার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। ‘আব্দুর রহীম ইবনু সুলাইমান রাযী, কাসিম ইবনু ইয়াহইয়া ও ‘আফ্ফান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হাম্মাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, সন্ধ্যার পর আমি কংকর মেরেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই। সে আবার বলল কুরবানী করার আগেই আমি মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ এতে কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬১৬। ‘আবদান (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাতহা নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ কিসের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মত ইহরাম বেঁধে আমি তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভালই করেছ। যাও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী কর। এরপর আমি বনূ কায়স গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম। তিনি আমার মাথার উকুন বেছে দিলেন। তারপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। (তখন থেকে) ‘উমর (রাঃ)-এর খিলাফরকাল পর্যন্ত এ ভাবেই আমি লোকদের (হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা সম্পর্কে) ফতোয়া দিতাম। তারপর তাঁর সঙ্গে আমি এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাবকে অনিসরণ করি তহলে তা তো আময়াদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নতের অনুসরণ করি তাহলে তো (দেখি যে), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার যথাস্থানে পৌছার আগে হালাল হননি।
হাদীস নং-১৬১৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কি হল যে, তারা ‘উমরা করে হালাল হয়ে গেল অথচ আপনি ‘উমরা থেকে হালাল হননি! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো আমার মাথায় আঁঠালো বস্তু লাগিয়েছি এবং পশুর গলায় কিলাদা ঝুলিয়েছি। তাই কুরবানী না করে আমি হালাল হতে পারি না।
হাদীস নং-১৬১৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) সময় তাঁর মাথা কামিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৬১৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুঙ্কারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (রহঃ) রলেন, আমাদের নাফি’ (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ মাথামুন্ডুনকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার অথবা দু’বার বলেছেন। রাবী বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, চতুর্থবার বলেছেনঃ চুল যারা ছোট করেছে তাদের প্রতিও।
হাদীস নং-১৬২০। ‘আয়্যাশ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহা আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদের ক্ষমা করুন। সাহারীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! মাথা মুন্ডুনকারীদেরকে ক্ষমা করুন। সাহারীগন বললেন, যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেন, এরপর বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদেরকেও।
হাদীস নং-১৬২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামালেন এবং সাহাবীদের একদলও। আর অন্য একটি দল চুল ছোট করলেন।
হাদীস নং-১৬২২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও মু’আবিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি কাঁচি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল ছেটে ছোট করে দিয়েছিলাম।
হাদীস নং-১৬২৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ করে। এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়।
হাদীস নং-১৬২৪। ইয়াহইয় ইবনু বুকাইর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করলাম। এ সময় সাফিয়্যা (রাঃ)-এর হায়েয দেখা দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে তা ইচ্ছা করছিলেন যা একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছা করে থাকে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি তো হায়েযা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে তো সে আমাদের আটকিয়ে ফেলবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাফিয়্যা (রাঃ) তো কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে রওয়ানা হও। কাসিম, ‘উরওয়া ও আসা’দ (রহঃ) সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাফিয়্যা কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করেছেন।
হাদীস নং-১৬২৫। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যবেহ করা, মাথা কামান ও কংকর মারা এবং (এ কাজগুলো) আগে-পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৬। ‘আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়ারীতে) অবস্থান করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেনঃ একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার আগেই (মাথা) কামিয়ে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি কুরবানী করে নাও, কোন দোষ নেই। তারপর অপর একজন এসে বললেন, আমি না জেনে কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কংকর মেরে নাও, কোন দোষ নেই। সেদিন যে কোন কাজ আগে পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৮। সা’ইদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘আরদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বলেলন, আমার ধারণা ছিল অমুক কাজের আগে অমুক কাজ, আমি কুরবানী কারার আগে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। আর কংকর মারার আগে কুরবানী করে ফেলেছি। এরূপ অনেক কথা জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই। সব কটির জবাবে তিনি এ কথাই কললেন। সেদিন তাঁকে যা-ই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।
হাদীস নং-১৬২৯। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপর অবস্থান করছিলেন। তারপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। যুহরী (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় মা’মার (রহঃ) সালেহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩০। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুত্বা দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন্ দিনঃ সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন্ শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। তারপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন্ মাস? তারা বললেনঃ সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইয্যত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌছিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়েছি? ইবনু ‘আব্বস (রাঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেনঃ) উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌছিয়ে দেয়। আমার পরে তোমরা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং-১৬৩১। হাফ্স ইবনু ‘উমর (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফাত ময়দানে খুত্বা দিতে শুনেছি। ইবনু ‘উয়াইনা (রহঃ) ‘আম্র (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় বর্ণনায় শু’বা (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খুত্বা দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কি জানো আজ কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। আমরা ধারণা করলাম সম্ভাবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম পেল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি যিলহাজ্জের (হজ্জ) মাস নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তারপর তিনি বললেনঃ এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -ই সবচাইতে বেশী জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। ফলে আমরা ভাবতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম বদলিয়ে অন্য নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এ কি সম্মানিত শহর নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের জন এবং তোমাদের মাল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত এমন সম্মানিত যেমন সম্মান রয়েছে তোমাদের এ দিনের, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের শহরে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ শোন! আমি কি পৌছিয়েছি তোমাদের কাছে? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ (ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )। তারপর তিনি বললেনঃ প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে (আমার দাওয়াত) পৌছিয়ে দেয়। কেননা, কোন কোন মুবাল্লাগ শ্রবণকারী থেকে কখনো কখনো অধিক সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। তোমরা আমার পরে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
হাদীস নং-১৬৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অবস্থানকালে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এটি কো্ন দিন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত দিন। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্ শহর? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত শহর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্ মাস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত মাস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জানো, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইয্যত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন। হিশাম ইবনু গায (রহঃ) নাফি’ (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায়কালে কুরবানীর দিন জামারাতের মধ্যবর্তী স্থলে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, এটি হল হাজ্জে (হজ্জ) আকবরের দিন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। এরপর তিনি সাহাবীগণকে বিদায় জানালেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, এ-ই বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)। ১০৯৩ পরিচ্ছেদঃ (হাজীদের) পানি পান করানোর ব্যবস্থাকারীদের ও অন্যান্য লোকদের (ওজর বশত) মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থান করা।
হাদীস নং-১৬৩৪। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু মায়মূন, ইয়াহইয়া ইবনু মূসা ও মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আব্বাস (রাঃ) পানি পান করারনোর জন্য মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম —এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। আবূ উসামা, ‘উক্বা ইবনু খালিদ ও আবূ যামরা (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইরের অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৩৫। আবূ নু’আইম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কখন কংকর মারব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কংকর মারবে, তখন তুমিও মারবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কংকর মারতাম।
হাদীস নং-১৬৩৬। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বাতন ওয়াদী থেকে কংকর মারেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! লোকেরা তো এর উচ্চুস্থান থেকে কংকর মারে। তিনি বলেলেন, সে সত্তার কসম! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এটা সে স্থান, যেখানে সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬৩৭। হফস ইবনু ‘উমর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কংকর মেরেছেন।
হাদীস নং-১৬৩৮। আদম (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি যাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলেন। তখন তিনি বায়তুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কংকর মারতে দেখেছেন। এর পর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।
হাদীস নং-১৬৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বারের উপর এরূপ বলতে শুনেছি, যে সূরার মধ্যে বাকারার উল্লেখ রয়েছে, যে সূরার মধ্যে আলে ‘ইমরানের উল্লেখ রয়েছে এবং যে সূরার মধ্যে নিসা-এর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ সে সূরা বাকারা, সূরা আলে ‘ইমরান ও সূরা নিসা পছন্দ করত না। বর্ণনাকারী আ’মাশ (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারটি আমি ইবরাহীম (রহঃ)-কে বললাম। তিনি বললেন, আমার কাছে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জামরায়ে ‘আকাবাতে কংকর মারার সময় তিনি ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বাতন ওয়াদীতে গাছটির বরাবর এসে জামরাকে সম্নে রেখে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর সহকারে কংকর মারলেন। এরপর বললেন, সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এ স্থানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সূরা বাকারা (অর্থাৎ সূরা বাকারা বলা বৈধ)।
হাদীস নং-১৬৪০। ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় কংকর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাঁর উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী থেকে জমরায়ে ‘আকাবায় কংকর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এবূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৬৪১। ইসমা’ঈল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিকটবর্তী জামরায় সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় অনুরূপভাবে কংকর মারতেন। এরপর বাঁ দিক হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং এর কাছে তিনি দেরী করতেন না। তিনি বলতেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি অনুরূপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৬৪২। মুহাম্মদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মসজিদে মিনার দিক থেকে প্রথমে অবস্থিত জমরায় যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর মারতেন, সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং এখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। তারপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে ওয়াদীর কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। অবশেষে ‘আকাবার কাছের জামরায় এসে তিনি সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর ফিরে যেতেন, এখানে বিলম্ব করতেন না। যুহরী (রহঃ) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-কে তাঁর পিতার মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (রাবী বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।
হাদীস নং-১৬৪৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার এ দু’হাত দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খুশবু লাগিয়েছি, যখন তিনি ইহ্রাম বাঁধার ইচ্ছা করেছেন এবং তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে যখন তিনি ইহরাম খুলে হালাল হয়েছেন। এ কথা বলে তিনি তাঁর উভয় হাত প্রসারিত করলেন।
হাদীস নং-১৬৪৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তবে এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে।
হাদীস নং-১৬৪৫। আসবাগ ইবনু ফারজ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে উপত্যকায় কিছুক্ষণ গুয়ে থাকেন। তারপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। লায়স (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনায় ‘আমর ইবনু হারিস (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৪৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) হায়েযা হলেন এবং পরে এ কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবগত করানো হয়। তখন তিনি বললেনঃ সে কি আমাদের আটকিয়ে রাখবে? তারা বললেন, তিনি তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তো আর বাধা নেই।
হাদীস নং-১৬৪৭। আবূ’নু’মান (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর হায়েয এসেছে এমন মহিলা সম্পর্কে মদিনাবাসী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাদের বললেন, সে রওয়ানা হয়ে যাবে। তারা বললেন, আমরা আপনার কথা গ্রহণ করব না এবং যায়দের কথাও বর্জন করব না। তিনি বললেন, তোমরা মদিনায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে নেবে। তাঁরা মদিনায় এসে জিজ্ঞেস করলেন। যাঁদের কাছে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উম্মে সুলাইম (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাঁদের সাফ্যিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) (রাঃ)-এর ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। হাদিসটি খালিদ ও কতাদা (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
হাদীস নং-১৬৪৮। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করার পর ঋতুবর্তী মহিলাকে রওনা হয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে মহিলা রওয়ানা হতে পারবে না। পরবর্তীতে তাঁকে ই কথাও শুনেছি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।
হাদীস নং-১৬৪৯। আবূ নু’মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম। হাজ্জ (হজ্জ)ই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়ার সা’য়ী করলেন। তবে ইহরাম ফেলেননি। তাঁর সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার ছিল। তাঁর সহধর্মিণী ও সাহাবীগণের মধ্যে যারা তাঁর সঙ্গে ছলেন তাঁরাও তাওয়াফ করলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল না, তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। এরপর ‘আয়িশা (রাঃ) ঋতুবর্তী হয়ে পরলেও (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা হাজ্জের (হজ্জ) সমুদয় হুমুম-আহকাম আদায় করলাম। এরপর যখন লায়লাতুল-হাসবা অর্থাৎ রওয়ানা হওয়ার রাত হল, তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ব্যতীত আপনার সকল সাহাবী তো হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা করে ফিরছেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা যে রাতে এসেছি সে রাতে তুমি কি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করনি? আমি বললাম, না। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তান’ঈম (নামক স্থানে) চলে যাও এবং সেখান থেকে ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নাও। আর অমুক অমুক স্থানে তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা থাকল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-এর সঙ্গে তান’ঈমের দিকে গেলাম এবং ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম। আর সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বিরক্ত হয়ে বলেনঃ তুমি তো আমাদেরকে আটকিয়ে ফেললে। তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করছিলে? তিনি বললেন, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে কোন বাধা নেই, রওয়ানা হও। [‘আয়িশা (রাঃ) বলেন] আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মিলিত হলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি মক্কার উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি নিচের দিকে নামছিলাম। অথবা আমি উঠছিলাম আর তিনি নামছিলেন। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় এ হাদীসে (হাঁ)-এর পরিবর্তে ‘লা’ (না) রয়েছে। রাবী জারীর (রহঃ) মনসূর (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় সুসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর অনুরূপ ‘লা’ (না) বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৫০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফা’য় (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তামি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মনে রেখেছেন এমন কিছু কথা আমাকে বলুন। তারবিয়ার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আবতাহ নামক স্থানে। (তারপর বললেন, )তুমি তাই কর যেভাবে তোমার শাসকগণ করেন।
হাদীস নং-১৬৫১। ‘আবদুল মুতা’আলী ইবনু তালিব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর মুহাস্সাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন, পরে সাওয়ার হয়ে বায়তুরল্লাহর দিকে গেলেন এবং রায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন।
হাদীস নং-১৬৫২। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তা হল একটি মানযিল মাত্র, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন, যাতে বেরিয়ে যাওয়া সহজতর হয় অর্থাৎ আবতাহ।
হাদীস নং-১৬৫৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাস্সাবে অবতরণ করা (হাজ্জের (হজ্জ) কিছুই নয়। এ তো শুধু একটি মানযিল, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৫৪। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) দু’ পাহাড়ের মধ্যস্থিত যু-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর মক্কায় উঁচু গিরিপথের দিক থেকে প্রবেশ করতেন। হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা আদায়ের জন্য মক্কা আসলে তিনি মসজিদে হারামের দরজার সামনে ব্যতীত কোথাও উট বসাতেন না। তারপর মসজিদে প্রবশ করে হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন এবং সেখান থেকে তাওয়াফ আরম্ভ করতেন এবং সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন। তিনবার দ্রুতবেগে আর চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর ফিরে এসে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং নিজের মনযিলে ফিরে যাওয়ার আগে সাফা-মারওয়ার মধ্যে সা’য়ী করতেন। আর যখন হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা থেকে ফিরতেন তখন যুল-হুলাইফা উপত্যকার বাতহা নামক স্থানে অবতরণ করতেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৫৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-কে মুহাসসাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নাফি’ (রহঃ) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমর ও ইবনু ‘উমর (রাঃ) সেখানে অবতরণ করেছেন। নাফি’ (রহঃ) থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুহাসসাবে যোহর ও ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আমার মনে হচ্ছে, তিনি মাগরিবের কথাও বলেছেন। খালিদ (রাঃ) বলেন, ‘ইশা সম্পর্কে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। এ কথা ইবনু ‘উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন।
হাদীস নং-১৬৫৬। ‘উসমান ইবনু হায়সাম (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যুল-মাজায ও ‘উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগ, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ ‘তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুমে’ (২:১৯৮)।
হাদীস নং-১৬৫৭। ‘উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যাবর্তনের দিন সাফিয়্যা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিলে তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাদেরকে আটকিয়ে ফেললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে ‘আকরা’, ‘হালকা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন এবং বললেনঃ সে কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছে? বলা হল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তবে চল। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা (মক্কায়) আসলাম, তখন আমাদের হালাল হওয়া নির্দেশ দেন। তারপর প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু আরম্ভ হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হালকা’ আকরা’, বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেনঃ আমার ধারণা, সে তোমাদের আটকিয়েই ফেলবে। তারপর বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছিলে? সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে চল। আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো (‘উমরা আদায় করে) হালাল হইনি। তিনি বললেনঃ তাহলে এখন তুমি তান’ঈম থেকে ‘উমরা আদায় করে নাও। তারপর তাঁর সঙ্গে তার ভাই (‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)] গেলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, (‘উমরা আদায় করার পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়, যখন তিনি শেষ রাতে (বিদায় তওয়াফের জন্য) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ অমুক স্থানে তোমার সাক্ষাত করবে।
হাদীস নং-১৬৫৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ‘উমরার পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হল হাজ্জে (হজ্জ) মাবরূরের প্রতিদান।
হাদীস নং-১৬৫৯। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করা সম্পর্কে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। ‘ইকরিমা (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করেছেন। ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) ইবনু ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) বলেছেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং-১৬৬০। ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) ‘ইা ইবনু খলিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। অবশিষ্ট অংশে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
হাদীস নং-১৬৬১। কুতায়বা (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতিমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ)ুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাঁকে এদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ’আত। এরপর ‘উরোয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) তাঁকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আমরা তাঁর কথা রদ করা পছন্দ করলাম না। আমরা উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার ভিতর থেকে তাঁর মিসওয়াক করার আওয়াজ গুনতে পেলাম। তখন ‘উরওয়া (রাঃ) বললেন, হে আম্মাজানো, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ ‘আব্দুর রাহমান কি বলেছেন, আপনি কি শুনেন নি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি কি বলছেন? ‘উরওয়া (রহঃ) বললেন, তিনি বলছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার ‘উময়া আদায় করেছেন। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ ‘আবদুর রাহমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন ‘উমরা আদায় করেননি, যে তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো ‘উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং-১৬৬২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখন ‘উমরা আদায় করেননি।
হাদীস নং-১৬৬৩। হাসসান ইবনু হাস্সান (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ‘উমরা যু-কা’দা মাসে মুশরিকরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে বাঁধা দিয়ছিল। পরবর্তী বছরের যুল-কা’দা মাসের ‘উমরা, যখন মুশরিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল জী’রানার ‘উমরা, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল, সম্ভবতঃ হুনায়নের যুদ্ধে বন্টন করেন। আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন? তিনি বললেন, একবার।
হাদীস নং-১৬৬৪। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ‘উমরা করেছেন যখন তাঁকে মুশরিকরা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী বছর ছিল হুদায়বিয়ার (চুক্তি অনুযায়ী) ‘উমরা, (তৃতীয়) ‘উমরা (জী’রানা) যুল-কা’দা মাসে আর হাজ্জের (হজ্জ) মাসে অপর একটি ‘উমরা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৬৫। হুদাবা/পাশা ইবনু খালিদ (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ‘উমরা করেছেন। তন্মধ্যে হাজ্জের (হজ্জ) মাসে যে ‘উমরা করেছেন তা ছাড়া বাকী সব ‘উমরাই যুল-কা’দা মাসে করেছেন অর্থাৎ হুদায়বিয়ার ‘উমরা, পরবর্তী বছরের ‘উমরা, জী’রানার ‘উমরা যেখানে তিনি হুনায়নের মালে গনীমত বন্টন করেছিলেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) মাসে আদায়কৃত মাসে আদায়কৃত ‘উমরা।
হাদীস নং-১৬৬৬। আহমদ ইবনু ‘উসমান (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা করেছেন। রাবী বলেন, আমি বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) করার আগে দু’বার যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৬৭। মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমার বাঁধা কিসের? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে ছলে গেছেন। আর মাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, রমযান এলে তখন ‘উমরা করে নিও। কেননা, রমযানের একটি ‘উমরা একটি হাজ্জের (হজ্জ) সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৬৮। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমরা সাসূলুল্লাহ –এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম যখন যিলহাজ্জ আগত প্রায়। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে হাজ্জের (হজ্জ) ইবহাম বাঁধাতে চায়, যে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে ‘উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আমতাম তা হলে অবশ্যি আমি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধালেন, আবার কেউ হাজ্জের (হজ্জ)। যারা ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের একজন। ‘আরাফার দিন এল, তখন আমি ঋতুবর্তী ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তা জানালাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও এবং মাথায় বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। যখন মুহাসসাবের রাত হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সঙ্গে (আমার ভাই) ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈমে পাঠালেন এবং আমি ছেড়ে দেওয়া ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলাম।
হাদীস নং-১৬৬৯। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাওয়ারীর পিঠে ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বসিয়ে তান’ঈম থেকে ‘উমরা করানোর নির্দেশ দেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) একবার বলেন, এ হাদীস আমি ‘আমরের কাছে বহুবার শুনেছি।
হাদীস নং-১৬৭০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ছাড়া কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ের ইহরাম বেঁদেছেন, আমিও তার ইহ্রাম বাঁধলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ইহ্রামকে ‘উমরায় পরিণত করতে এবং তাওয়াফ করে এরপর মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার রয়েছে (তারা হালাল হবে না) তাঁরা বললেন, আমরা মীনার দিকে রওয়ানা হবো এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছলে তিনি বললেনঃ যদি আমি এ ব্যাপার পূর্বে জানতাম, যা পরে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে আনতাম না। আর যদি কুরবানীর পশু আমার সঙ্গে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। তার (একবার) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হাজ্জের (হজ্জ) সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করেলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার তো হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরা উভয়টি পালন করে ফিরছেন, আমি কি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করেই ফিরব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্দুর রাহমাইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তান’ঈমে যায়। তারপর যিলহাজ্জ মাসেই হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ের পর ‘আয়িশা (রাঃ) ‘উমরা আদায় করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামরাতুল ‘আকাবায় কংকর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম (রাঃ)-এর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ হাজ্জের (হজ্জ) মাসে ‘উমরা আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস? রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এতো চিরদিনের (সকলের) জন্য।
হাদীস নং-১৬৭১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন যিলহাজ্জ মাস আগত প্রায়, তখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতে চায়, সে যেন ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধে নেয়। আর যে ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধতে চায় সে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধতাম। তাই তাঁদের কেউ ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন আর কেউ হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধলেন। যারা ‘উমরার ইহ্রাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন। এরপর মক্কা পৌঁছার আগেই আমার ঋতু দেখা দিল। ‘আরাফার দিবস চলে এল, আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। তারপর তামার এ অসুবিধার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও। আর বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। সুহাস্সাবের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈম পাঠালেন। (রাবী বলেন) ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) তাঁকে সাওয়ারীতে নিজের পেছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর ‘আয়িশা (রাঃ) আগের ‘উমরার স্থলে নতুন ‘উমরার ইহ্রাম বাঁধলেন। এমনিভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা উভয়টই পুরা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর কোন ক্ষেত্রেই কুরবানী বা সাদাকা দিতে কিংবা সিয়াম পালন করতে হয়নি।
হাদীস নং-১৬৭২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আসোয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাহাবীগণ ফিরছেন দু’টি নুসূক (অর্থাৎ হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা) পালন করে আর আমি ফিরছি একটি নুসূক (শুধু হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে। তাঁকে বলা হল, অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তান’ঈমে গিয়ে ইহ্রাম বাঁধবে এরপর অমুক স্থানে আমাদের কাছে আসবে। এ’উমরা (এর সওয়াফ) হবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুপাত।
হাদীস নং-১৬৭৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম্ বেঁধে বের হলাম, হাজ্জের (হজ্জ) মাসে এবং হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালনের উদ্দেশ্যে। যখন সারিফ নামক স্থানে অবতণ করলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে বললেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই এবং সে এই ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করতে চায়, সে যেন তা করে নেয় (অর্থাৎ ‘উমরা করে হালাল হয়)। আর যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার আছে সে এরূপ করবে না (অর্থাৎ হালাল হতে পাওরবে না)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সমর্থ সাহাবীর নিকট কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাঁদের ‘উমরা হয়নি। [‘আয়িশা (রাঃ) বললেন] আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি আপনার সাহাবীগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো ‘উমরা থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি অবস্থা? আমি বললাম, আমি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছি না। তিনি বললেনঃ এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো একজন আদম কন্যাই। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। সম্ভাবতঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ‘উমারাও দান করবেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি এ অবস্থায়ই থেকে গেলাম এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাস্সাবে অবতরণ করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ তুমি তোমায়াফ করে নিবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আমরা মধ্যরাতে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি তাওয়াফ সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। এ সময় তিনি সাহাবীগণকে রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। তাই লোকজন এবং যাঁরা ফজরের পূর্বে তাওয়াফ করেছিলেন তাঁরা রওয়ানা হলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
হাদীস নং-১৬৭৪। আবূ নু’আইম (রহঃ) ই’য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি’ররানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত একব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনি ‘উমরাতে আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হল্দে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অহী নাযিল করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেওয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে চাই। ‘উমরা (রাঃ) বললেন, এসো, আল্লাহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। তারপর ‘উমর (রাঃ) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরীভুত হলে তিনি বললেনঃ ‘উমরা সম্পর্কে পেশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার থেকে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালুকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রঙ পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হাজ্জে (হজ্জ) যা করেছ ‘’উমরাতে তুমি তা-ই করবে।
হাদীস নং-১৬৭৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর বানীঃ সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। (২:১৫৮) তাই সাফা-মারওয়ার সা’য়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হতঃ অর্থাৎ এ দু’টির মাঝে তাওয়াফ না করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহ্রাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সমানে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতারাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। সুফিয়ান ও আবূ মু’আবিয়া (রাঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ না করলে আল্লাহ কারো হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরাকে পূর্ণাঙ্গ গন্য করেন না।
হাদীস নং-১৬৭৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ‘উমরা করলাম। তিনি মক্কা প্রবেশ করে তাওয়াফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। এরপর তিনি সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে সা’য়ী করলাম। আর আমরা তাঁকে মক্কাবাসীদের থেকে লুকিয়ে রাখছিলাম যাতে কোন মুশরিক তাঁর প্রতি কোন কিছু নিক্ষেপ করতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এক সাথী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন? তিনি বললেন, না। প্রশ্নকারী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা (রাঃ) সম্বন্ধে কি বলেছেন? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাদীজাকে বেহেশতের মাঝে একটি মোতি দিয়ে নির্মিত এমন একটি ঘরের সুসংবাদ দাও যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন প্রকার কষ্ট ক্লেশও থাকবে না।
হাদীস নং-১৬৭৭। হূমায়দী (রহঃ) ‘আমার ইবনু দ্বীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমরার মাঝে বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়র তাওয়াফ না করে যে স্ত্রীর নিকট গমন করে, এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) এসে বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে মাকামে ইব্রাহীমের পাশে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এরপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’য়ী করেছেন। আর তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ তো রয়েছে আল্লাহর রাসূল -এর মাঝেই। (রাবী) ‘আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কেও আমরা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেছেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ তার স্ত্রীর নিকট অবশ্যই যাবে না।
হাদীস নং-১৬৭৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবূ মূসা আল-আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় বাতহায় অবতারণ করলে আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি হাজ্জ (হজ্জ) করেছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কিসের ইহ্রাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহারামের মত আমিও ইহ্রামের তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভাল করেছ। এখন বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে হালাল হয়ে যাও। তারপর আমি বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে কায়স গোত্রের এক মিহিলার কাছে গেলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম এবং ‘উমর (রাঃ)-এর খিলাফত পর্যন্ত আমি এভাবেই ফতোয়া দিতে থাকি। ‘উমর (রাঃ) বললেন, যদি আমরা আল্লাহর কিতাব গ্রহণ করি তা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী গ্রহণ করি তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার তার স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত হালাল হননি।
হাদীস নং-১৬৭৯। আহমদ (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, যখনই আসমা (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ)ন এলাকা দিয়ে গমন করতেন তখনই তাঁকে বলতেন শুনেছেন আল্লাহ তাঁর রাসূল) -এর প্রতি রহমত নাযিল করুন, এ স্থানে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে অবতরণ করেছিলাম। তখন আমাদের বোঝা ছিল খুব অল্প, যানবাহন ছিল একেবারে নিগণ্য এবং সম্বল ছিল খুবই কম। আমি, আমার বোন ‘আয়িশা (রাঃ), যুবাইর (রাঃ) এবং অমুক অমুক ‘উমরা আদায় করলাম। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে আমরা সকলেই হালাল হয়ে গেলাম এবং সন্ধ্যাকালে হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্রাম বাঁধলাম।
হাদীস নং-১৬৮০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন জিহাদ, বা হাজ্জ (হজ্জ) অথবা ‘উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন তিনি প্রত্যেক উঁচু ভূমিতে তিনবার তাকবীর বলতেন এবং পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সর্বময় ক্ষমতা এবং সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, আমাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, নিজ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রুদল্কে পরাজিত করেছেন।
হাদীস নং-১৬৮১। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলে ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে খোশ-আমদেদ জানায়। তিনি একজনকে তাঁর সাওয়রীর সামিনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন।
হাদীস নং-১৬৮২। আহমদ ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ‘মসজিদে শাজারাতে’ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
হাদীস নং-১৬৮৩। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখনো পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি সকাল কিংবা বিকালে ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করাতেন না।
হাদীস নং-১৬৮৪। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইর্ন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস নং-১৬৮৫। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারাইয়াম (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদিনার উঁচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনী দ্রুতগতিতে চালাতেন তার বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন।
হাদীস নং-১৬৮৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (উচু রাস্তা)-এর পরিবর্তে (দেয়ালগুলো) সব্দ বলেছেন। হারিস ইবনু ‘উময়র (রহঃ) ইসমা’ঈল (রহঃ)-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হারিস ইবনু ‘উমায়র হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ণনায় আরো বাড়িয়ে বলেছেন, মদিনার মহব্বতে তিনি বাহনকে দ্রুত চালিত করতেন।
হাদীস নং-১৬৮৭। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বাবা’ (রাঃ)-কে বলতে শুনেদি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হাজ্জ (হজ্জ) করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফেরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেওয়া হয়। তখনই নাযিল হয়ঃ পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর। (২:১৮৯)
হাদীস নং-১৬৮৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবলম্বনে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়।
হাদীস নং-১৬৮৯। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কার পথে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। সাফিয়্যা বিনত আবূ ‘উবায়দ (রাঃ)-এর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ তাঁর কাছে পৌছল। তখন তিনি গতি বাড়িয়ে দিলেন। (পশ্চিম আকাশের) লালিমা অদৃশ্য হবার পর সাওয়ারী থেকে নেমে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করেন। তারপর বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, সফরে দ্রুত চলার প্রয়োজন হলে তিনি মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করতেন।
হাদীস নং-১৬৯০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাঙ্গামা চলাকালে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘উমরার নিয়ত করে মক্কায় রওয়ানা হওয়ার পর বললেন, বায়তুল্লাহর পথে বাধাগ্রস্ত হলে, তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।
হাদীস নং-১৬৯১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) নাফি’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) উভয়ই তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ) বাহিনী ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, সে সময়ে তাঁরা উভয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বুঝালেন। তাঁরা বললেন, এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) না করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আমরা আশষ্কা করছি, আপনার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। কিন্তু বায়তুল্লাহর পথে কাফির কুরায়শরা আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু যবেহ করে মাথা মুড়িয়ে নিয়েছিলেন। এখন আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার নিজের জন্য ‘উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছি। আল্লাহ চাহেন তো আমি এখন রওয়ানা হয়ে যাব। যদি আমার এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা না আসে তাহলে আমি তাওয়াফ করে নিব। কিন্তু যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমি তখনই সেরূপ করব যেরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন আর আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তারপর তিনি যুল-হুলাইফা থেকে ‘উমরার ইহরাম বেধেঁ কিছুক্ষণ চললেন, এরপরে বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, নিশ্চয়ই আমি আমার ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)ও নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিলাম। তাই তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা কোনটি থেকেই হালাল হননি। অবশেষে কুরবানী দিন কুরবানী করলেন এবং হালাল হলেন। তিনি বলতেন, আমরা হালাল হব না যতক্ষণ পর্যন্ত না মক্কায় প্রবেশ করে একটি তাওয়াফ করে নিই।
হাদীস নং-১৬৯২। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কোন এক ছেলে তাঁর পিতাকে বললেন, যদি আপনি এ বছর বাড়িতে অবস্থান করতেন (তাহলে আপনার জন্য কতই না কল্যাণকর হত)!
হাদীস নং-১৬৯৩। মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুদায়বিয়াতে) বাধাপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি মাথা কামিয়ে নেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং প্রেরিত জানোয়ার কুরবানী করেন। অবশেষে পরবর্তী বছর ‘উমরা আদায় করেন।
হাদীস নং-১৬৯৪। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? তোমাদের কেউ যদি হাজ্জ (হজ্জ) করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় যে যেন (‘উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে তাওয়াফ করে সব কিছু থেকে হলাল হয়ে যায়। অবশেষে পরবর্তী বছর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেয়। তখন সে কুরবানী করবে আর যদি কুরবানী দিতে না পারে তবে সিয়াম পালন করবে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-১৬৯৫। মাহামুদ (রাঃ) মিসওয়ার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামানোর আগেই কুরবানী করেন এবং সাহাবাদের অনুরূপ করার নির্দেশ দেন।
হাদীস নং-১৬৯৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদূর রহীম (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ এবং সালিম (রাঃ) উভয়ই ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ‘উমরার নিয়ত করে আমরা রওয়ানা হলে যখন কুরায়শের কাফিররা বায়তুল্লাহর অনতিদূরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উট কুরবানী করেন এবং মাথা কামিয়ে ফেলেন।
হাদীস নং-১৬৯৭। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, (মক্কা মুকার্রামায়) গোলযোগ চলাকালে ‘উমরার নিয়ত করে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) যখন মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন বললেন, বায়তুল্লাহ থেকে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধালেন। করাণ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। তারপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিজের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে বললেন, উভয়টি তো একই রকম। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)কে ওয়াজিব করে নিলাম। তিনি উভয়টির জন্য একই তাওয়াফ করলেন এবং এটাই তাঁর পক্ষ থেকে যথেষ্ট মনে করেন, আর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৬৯৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বোধ হয় তোমার এই কীটেরা (উকুন) তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও কিংবা একটি বকরী কুরবানী কর।
হাদীস নং-১৬৯৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে দাঁড়ালেন। এ সময় আমার মাথা থেকে উকুন ঝরে পরেছিল। রাসূলল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার এই কীটগুলো (উকুন) কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হাঁ, তিনি বললেনঃ মাথা মুড়িয়ে নাও অথবা বললেন, মুড়িয়ে নাও। কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বলেন, আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই আয়াতটিঃ তোমাদের মধ্যে যদি পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে (২ : ১৯৬)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তিনদিন সিয়াম পালন কর কিংবা এক ফরক (তিন সা’ পরিমাণ) ছয়জন মিসকীনের মধ্যে সা’দকা কর, অথবা কুরবানী কর যা তোমার জন্য সহজসাধ্য।
হাদীস নং-১৭০০। আবূল ওলীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’কিল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ)-এর পাশে বসে তাঁকে ফিদ্য়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এ আয়াত বিশেষভাবে আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। তবে এ হুকুম সাধারণভাবে তোমাদের সকলের জন্যই। রাসূলল্লাহ -এর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। তখন আমার চেহারায় উকুন বেয়ে পড়ছে। তিনি বললেনঃ তোমার কষ্ট বা পীড়া যে পর্যায়ে পৌছেছে দেখতে পাচ্ছি, আমার তো আগে ই ধারণা ছিল না। তুমি কি একটি বকরীর ব্যবস্থা করতে পারবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে অর্ধ সা’করে খাওয়াও।
হাদীস নং-১৭০১। ইসহাক (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারায় উকুন হজরে পড়তে দেখে তাঁকে বল্লেনঃ এই কিটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বলেন, হাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মাথা কামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় ছিলেন। এখানেই তাঁদের হালাল হয়ে যেতে হবে এ বিষয়টি তখনো তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। তারা মক্কায় প্রবেশের আশা করছিলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা ফিদ্যার হুকুম নাযিল করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এক ফরক খাদ্যশস্য ছয়জন মিস্কীনের মধ্যে দিতে কিংবা একটি বকরী কুরবানী করতে অথবা তিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এমতবস্থায় দেখলেন যে, তাঁর চেহারার উপর উকুন পড়ছে। এর বাকি অংশ উপরের হাদীসের উনুরুপ।
হাদীস নং-১৭০২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল এবং স্ত্রী সহবাস করল না এবং অন্যায় আচরন করল না, সে প্রত্যাবর্তন করবে মাতৃগর্ভ থেকে প্রসূত শিশুরু মত হয়।
হাদীস নং-১৭০৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল, অশ্লীলতায় লিপ্ত হলনা এবং আল্লাহর নাফরমানী করল না, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুরু মত হয়ে (হাজ্জ (হজ্জ) প্রত্যাবর্তন করবে।
হাদীস নং-১৭০৪। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর (শত্রুদের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য)বের হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী গন ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল, একটি শত্রুদল তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে চায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। এ সময় আমি তাঁর সাবীদের সাথে ছিলাম। হঠাৎ দেখি যে, তারা একে অন্নের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৫। সা’ঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যাত্রা করলাম। তাঁর সকল সাহাবীই ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। এরপর আমাদেরকে গায়কা নামক স্থানে শত্রুর উপস্থিতি সম্পরকে খবর দেয়া হলে আমরা শত্রুর অভিমুখে রওনা হলাম। আমার সঙ্গী সাহাবীগন একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন।। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ও আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রহঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, মদিনা থেকে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামিক স্থানে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদের দেখলা তাররা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। (রাবী বলেন) এ সময় তাঁর চাবুকটি পড়ে গেল। (তিনি আনিয়ে দেওয়ার কথা বললে) সকলেই বললেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই উঠিয়ে তা একটি নিলাম এরপর টিলার পিছনদিক থেকে গাধাটির কাছে এস্তা শিকার করে তা সাহাবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁদের কেউ বললেন, খাও, আবার কেউ বললেন, খেও না। সুতরাং গাধাটি আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি আআমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বল্ললেন, খাও, এতো হালাল। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমাদেরকে ‘আমর ইবনু দ্বীনার বললেন, তোমরা সালিহ (রহঃ) এবং অন্যান্যের নিকট গিয়ে এ সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা কর। তিনি আমাদের এখানে আগমন করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭০৭। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তাঁকে তাঁর পিতা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জে (হজ্জ) যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করলেন। তাঁদের থেকে একটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে আবূ কাতাদা (রহঃ) ও ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হবে আমাদের পরশপর সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাঁধলেন না। পথে চলতে চলতে তাঁরা কিছু বন্য গাধা দেখতে পেলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) গাদা হুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী হত্যা করে ফেললেন। এরপর একস্থানে অবতরন করে তাঁরা সকলেই এর গোসত খেলেন। তারপর বললেন, আমরা ও মহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার জন্তুর গোশত খেতে পারি? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট অংশ উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা রাসুলুল্লাহ এর নিকট পৌঁছে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা ইহরাম বেধেছিলাম কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাধেনি। এ সময় আমরা কতগুলো বন্যগাধা দেখতে পেলাম। আবূ কাতাদা (রহঃ) এগুলোর উপর আক্রমন করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেলেন। এক স্থানে অবতরন করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নেই। এরপর বললাম। আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় কি আমরা শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমন করতে তাঁকে আদেশ বা ইশারা করেছঃ তাঁরা বললেন, না, আমার আর তা করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে বাকি গোশত তোমরা খেয়ে নাও।
হাদীস নং-১৭০৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সা’ব ইবনু জাসসামা লায়সী (রহঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবোয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শ) কে একটি জংলী গাধা হাদিয়া দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করে বললেনঃ তা আমি কখনো তোমার নিকত নিকট ফিরিয়ে দিতাম না যদি না আমি মুহরিম না হতাম।
হাদীস নং-১৭০৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করা মুহরিমের জন্য দূষনীয় নয়। ‘আদবুল্লাহ ইবনু দ্বীনার ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনীগনের একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে মুহরিম ব্যাক্তি (নির্দিষ্ট) প্রানী হত্যা করতে পারবে। আসবাগ ইবনু ফারাজ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করাতে তাঁর কোন দোষ নেই। যেমনঃ কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং-১৭১০। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী এত ক্ষতিকর যে এগুলো হারাম শরীফেও হত্যা করা যেতে পারে। (যেমন) কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।
হাদীস নং-১৭১১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মিনাতে পাহাড়ের কোন এক গুহায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় নাজিল হল তাঁর উপর রাওয়াল মুরসালাত (নামায/নামাজ)। তিনি সূরাটি তিলোয়াত করিছিলেন। আর আমি তাঁর পবিত্র মুখ থেকে গ্রহন করছিলাম। তাঁর মুখ (তিলোয়াতের ফলে)সিক্ত ছিল। এমতবস্থায় আমাদের সামনে একটি একটি সাপ লাফিয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে মেরে ফেল। আমরা দৌড়িয়ে গেলে সাপটি চলে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রক্ষা পেল সাপটি তোমাদের অনিষ্ট থেকে যেমন তোমরা রক্ষা পেলে এর অনিষ্ট থেকে। আবূ আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন, এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে মিনা হারাম শরীফের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সাপ মারাকে দোষ মনে করতেন না।
হাদীস নং-১৭১২। ইসমাইল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনি ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন, রাসুল কাঁকলাস কে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু একে হত্যা করার আদেশ দিতে আমি তাঁকে শুনিনি।
হাদীস নং-১৭১৩। কুতায়বা (রহঃ) আবূ সুরাইয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি ব’আমর ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) কে বললেন। যখন আমর মক্কায় সেনাবাহিনী প্রেরন করেছিলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন। আমি আপনাকে এমন কহতা শোনাব যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়য়ের পরের দিন ইরশাদ করেছিলেন। আমার দু’টি কান ঐ কথা গুলো শুনেছে, হৃদয় সেগুলো স্মৃতিতে একে রেখেছে এবং আমার চোখ দু্টো তা প্রত্যক্ষ করেছে। যখন তিনি কথা গুলো বলেছিলেন, তখন তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে মহাসম্মানিত করেছেন। কোন মানুষ তাঁকে মহাসম্মানিত করেনি। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্য মক্কায় রক্তপাত করা বা এর কোন গাছ কাঁটা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসুল কর্তৃক লড়াই পরিচালনার কারনে যদি কেউ যুদ্ধ করার অনুমতি দেয় তাহলে তাঁকে তোমরা বলে দিও, আল্লাহ তাঁর রাসুল কে তো অনুমতি দিয়েছিলেন। তোমাদেরকে তো আর তিনি অনুমতি দেননি। আর এ অনুমতিও কেবল শুধু আমাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আজ (পরের দিন) পুনরায় নিষিদ্ধতা পূনর্বহাল করা হয়েছিল যেমনি ভাবগতকাল ছিল। অতএব প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তির নিকট এই বার্তা পৌঁছে দেয়। আবূ সুরাইয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞেসা করা হল, আপনাকে ‘আমর কি জবাব দিয়েছিলেন? তিনি বললেন, ‘আমর বলেছিলেন, হে আবূ শুরু ায়হ! এর বিষয়টি আমি তোমার থেকে ভাল জানি। হারাম কোন অপরাধীকে, হত্যা করে পলাতক ব্যাক্তিকে এবং চুরি করে পলায়নকারী ব্যাক্তিকে আশ্রয় দেয় না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, শব্দের অর্থ হল ফিতনা – ফাসা’দ।
হাদীস নং-১৭১৪। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল হবে না। তবে আমার জন্য তা কেবল কিছুদিনের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছিল। তাই এখানকার ঘাস, লতাপাতা কাঁটা যাবে না। কোন শিকার জন্তুকে তাড়ান যাবে না এবং কোন হারানো বস্তুকেও হস্তগর করা যাবে না। অবশ্য ঘোষনাকারী ব্যাক্তি এ নিয়মের ব্যতক্রম। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! স্বর্ণকার এবং আমাদের কবরে ব্যবহারের জন্য ইযখির ঘাস গুলোকে বাদ রাখুন। তিনি বল্ললেনঃ হাঁ ইযখির কে বাদ দিয়েই। খালিদ (রাঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেছেন হারামের শিকার জানোয়ারকে তাড়ানো যাবে না, এর অর্থ তুমি কি যান? এর অর্থ হল ছায়া থেকে তাঁকে তাড়িয়ে তাঁর স্থানে অবতরন করা।
হাদীস নং-১৭১৫। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ এখন থেকে আর হিজরত নেই, রয়েছে কেবল জিহাদ এবং নিয়ত। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাকা হবে, এ ডাকে তোমরা সাড়া দিবে। আসমান- যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তা’আলা এ শহরকে মহাসম্মানিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনেই কিয়ামত পর্যন্ত এ শহর থাকবে মহাসম্মানিত হিসেবে। এশহর লড়াই করা আমার পূর্বেও কারো জন্য বৈধ ছিল না এবং আমার জন্য ও কিছু অংশ ব্যতীত বৈধ হয়নি। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনে তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত হিসেবে। এর কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না, তাড়ান যাবে না এর শিকার জানোয়ারকে, ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ এ স্থানে পড়ে থাকা কোন বস্তুকে উঠিয়ে নিতে পারবে না এবং কর্তন করা যাবে না এখানকার কাচা ঘাস ও তরুলতাকে। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইযখির বাদ দিয়ে। কেননা এ তো তাঁদের কর্মকারদের জন্য এবং তাঁদের ঘরে ব্যবহারের জন্য। বর্ননাকারী বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ ইযখির বাদ দিয়ে।
হাদীস নং-১৭১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ রাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। অপর এক সুত্রে সুফিয়ান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ননা করেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি বললাম, এ হাদিসটি ‘আমুর (রাঃ) ‘আতা এবং তাউস (রহঃ) উভয় থেকে শুনেছেন।
হাদীস নং-১৭১৭। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধা অবস্থায় ‘লাহইয়ে জামাল’ নামক স্থানে তাঁর মাথার মধ্যখানে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন।
হাদীস নং-১৭১৮। আবূল মুগীরা ‘আব্দুল কুদ্দুস ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মুনা (রাঃ) কে বিবাহ করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭১৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপি পরিধান করবে না। তবে কারো যদি না থাকে তা হলে সে যেন মোজা পরিধান করে তাঁর গিরার নিচের অংশটুকু কেটে নেয়। তোমরা জাফরান এবং ওয়ারস লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগন মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা লাগাবে না। মূসা ইবনু ‘উকবা, ইসমাইল ইবনু ইব্রাহিম ইবনুু’ উকবা, জিওয়ায়রিয়া, ইবনু ইসহাক (রহঃ) নেকাব এবং হাত মোজার বর্ননায় লায়স (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর--- স্থলে --- বলেছেন এবং তিনি বলতেন, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মালিক (রহঃ) নাফি (রহঃ) এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম (রহঃ) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন।
হাদীস নং-১৭২০। কুতায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক মুহরিম ব্যাক্তিকে তাঁর উষ্ট্রী ফেলে দেয়, ফলে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় এবং মারা যায়। তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হয়। তিনি বললেনঃ তোমরা তাঁকে গোসল করাও এবং কাফন পরাও। তবে তাঁর মাথা ঢেকে দিওনা এবং সুগন্ধি লাগিও না। তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় কিয়ামতের ময়দানে উঠানো হবে।
হাদীস নং-১৭২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামিক স্থানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) এর মধ্যে মতানৈক্য হল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি তা র মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, মুহরিম তাঁর মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। আমি তাঁকে কূপ থেকে পানি ঊঠানোর চরকার দু’খুটির মাঝে কাপড়ঘেরা অবস্থায় গোসল করতে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, কে? বললাম, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ুন। মুহরিম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মাথা ধৌত করতে, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবূ আইয়ুব (রাঃ) তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যাক্তিকে, যে তাঁর মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ করতে দেখেছি।
হাদীস নং-১৭২২। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুহরিমদের উদ্দেশ্যে ;আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ যার চপ্পল নেই এ মোজা পরিধান করবে আর যার লুঙ্গি নেই সে পায়জামা পরিধান করবে।
হাদীস নং-১৭২৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ’আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, মুহরিম ব্যাক্তি কাপড় পরিধান করবে এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ মুহরিম ব্যাক্তি জামা। পাগড়ী, পায়জামা, টূপি এবং জাফরান মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচ থেকে কেটে নিবে।
হাদীস নং-১৭২৪। আদম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার ময়দানে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তাঁর ভাষনে বললেনঃ (মুহরিম অবস্থায়) যার লুঙ্গি নেই সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার চপ্পল নেই সে যেন মোজা পরিধান করে।
হাদীস নং-১৭২৫। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা আদায় করার নিয়তে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী লোকেরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তিনি তাঁদের সাথে এই শর্তে চুক্তি করেন যে, সশস্ত্র অবস্থায় নয় বরং তলোয়ার কোষবদ্ধ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করবেন।
হাদীস নং-১৭২৬। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য ‘যুল-হুলাইফা, নাজদবাসীদের জন্য ‘কারনুল মানাযিল’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থানকে ইহরামের জন্য মীকাত নির্ধারিত করেছেন। এ স্থান গুলোর অধিবাসীদের জন্য এবং হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার সংকল্প করে বাইরে থেকে আগত যাত্রী, যারা এ স্থান দিয়ে অতিক্রম করবে, তাঁদের জন্য এ স্থানগুলো মীকার হিসেবে গণ্য হবে। আর মীকাতের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী লোকেদের জন্য তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা করবে সেটাই তাঁদের ইহরাম বাঁধার জায়গা। এমনকি মক্কাবাসী লোকেরা মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
হাদীস নং-১৭২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরস্ত্রাণটি মাথা থেকে খোলার পর এক ব্যাক্তি এসে তাঁকে বললেন, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেনঃ তাঁকে তোমরা হত্যা কর।
হাদীস নং-১৭২৮। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ইয়া’লা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় হলুদ বা অনুরুপ রঙে চিহ্ন বিশিষ্ট জামা পরিহিত এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। আর ‘উমর (রাঃ) আমাকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন অহী নাযিল হয় সে মূহুর্তে তুমি কি তাঁকে দেখতে চাও? এরপর (ঐ সময়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহী নাযিল হল। তারপর এ অবস্থার পরিবর্তন হলে তিনি (প্রশ্নকারীকে) বললেনঃ হাজ্জে (হজ্জ) তুমি যা কর ‘উমরাতেও তাই কর। এক ব্যাক্তি অন্য একজনের হাত কামড়িয়ে ধরলে তাঁর দু’টি দাত উৎপাটিত হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত নালিশ তিনি বাতিল করে দেন।
হাদীস নং-১৭২৯। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তাঁর পরিধেয় দু’টি কাপড়ে তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩০। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকেপড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না এবং হানূত ও লাগাবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩১। ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাঁর সওয়ারি থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
হাদীস নং-১৭৩২। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের একন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের (হজ্জ) মানত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। তুমি কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋন থাকত তা হলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচাইতে অধিক আদায়যোগ্য।
হাদীস নং-১৭৩৩। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ফাযল ইবনু ;আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা বললেন, (অপর সূত্রে) মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর খাস’আম গোত্রের একজন মহিলা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ করা হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় ফরজ হয়েছে যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলে তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় হবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ (নিশ্চয়ই আদায় হবে)।
হাদীস নং-১৭৩৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস) (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতবস্থায় খাস’আম গোত্রের এক মহিলা আসলেন। ফযল (রাঃ) মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তাঁর দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযল (রাঃ) এর মুখটি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বললেন, আমার পিতা বৃদ্ধ অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ হয়েছে এমন সময়, যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেনঃ হাঁ। এ ছিল বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়কার ঘটনা।
হাদীস নং-১৭৩৫। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মালপত্রের সাথে মুযদালিফা থেকে রাত্রিকালে প্রেরন করেছিলেন।
হাদীস নং-১৭৩৬। ইসহাক (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আমার গাধীর পিঠে আরোহন করে (মিনায়) আগমন করলাম। তখন আমি সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী ছিলাম। ঐ সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি চলতে চলতে প্রথম কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে চলে যাই। এরপর সওয়ারী থেকে নিচে অবতরন করি। গাধাটি চরে খেতে লাগল। আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে লোকদের সাথে লোকদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে যাই। ইউসুফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ননায় “মিনা’ শব্দের পর ‘বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়’ কথাটি বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৩৭। ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ইউনুস (রহঃ) সায়িব ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
হাদীস নং-১৭৩৮। ‘আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) উমর ইবনু ‘আব্দুল ‘আযীয (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি সায়িব ইবনু সম্পর্কে বলতেন, সায়িবকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সামগ্রীর কাছে বসিয়ে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
হাদীস নং-১৭৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি বল্লামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশ করব না? তিনি বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল মাকবূল হাজ্জ (হজ্জ)। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়ব না।
হাদীস নং-১৭৪০। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করতে যেতে চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাঁর সাথেই যাও।
হাদীস নং-১৭৪১। ‘আব্দান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) থেকে ফিরে এসে উম্মে সিনান (রাঃ) নামক এক আনসারই মহিলাকে বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাতে তোমাকে কিসে বাধা দিলঃ তিনি বলেন, অমুকের আব্বা অর্থাৎ তাঁর স্বামী, কারন পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দু’টি উট আছে। একটিতে সওয়ার হয়ে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে গিয়েছেন। আর অন্য টিতে আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসে একটি ‘উমরা আদায় করা একটি ফরজ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান অথবা বলেছেনঃ আমার সাথে একটি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান। হাদীসটি ইবনু জুরায়াজ (রহঃ) ’আতা (রহঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন এবং ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) এর সূত্রে এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৪২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যিয়াদের আযাদকৃত গোলাম কাযা’আ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ইদ (রাঃ) কে যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বারটি যুদ্ধে অনশগ্রহন করেছিলেন, বলতে শুনেছি, চারটি বিষয় যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি (অথবা) তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করতেন। আবূ সা’ইদ (রাঃ) বলেন, এ বিষয় গুলো আমাকে আশ্চর্যানিত করে দিয়েছে এবং চমৎকৃত করে ফেলেছে। (তা হল এই) স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা দুই দিনের পথ সফর করবে না। ‘ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা এ দুই দিন কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। ‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা – এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহন করবে না।
হাদীস নং-১৭৪৩। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে তাঁর দুই ছেলের উপর ভর করে হেটে যেতে দেখে বললেনঃ তাঁর কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, তিনি পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা’আলার এর কোন প্রয়োজন নেই। তাই তিনি তাঁকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন।
হাদীস নং-১৭৪৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ’উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিন বলেন, আমার বোন পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফতোয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ার ও হোক। ইয়াযিদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) বলেন, আবূল খায়ের (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না।
হাদীস নং-১৭৪৫। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকেও এ হাদীস বর্নিত রয়েছে। ১৭৪৪ নম্বর হাদিস দেখুন।
হাদীস নং-১৭৪৬। আবূ’ন নু’মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনা এখান থেকে ওখান পর্যন্ত হারাম (রুপে গন্য)। সুতরাং তাঁর গাছ কাঁটা যাবে না এবং কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ মদিনায় করা যাবে না। কেই যদি কুরআন -সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ করে তাহলে তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং ফিরিশতাদের ও সকল মানুষের।
হাদীস নং-১৭৪৭। আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে মসজিদ নির্মানের আদেশ দেন। তারপর বলেঃ হে বনূ নাজ্জার! আমার নিকট থেকে মূল্য নিয়ে (ভূমি) বিক্রি কর। তাঁরা বললেন। আমরা এর মূল্য কেবল আল্লাহর নিকট চাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কব খুড়ে ফেলা হল এবং ধ্বংসাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছ গুলো কেটে ফেলা হল। কেবল মসজিদের কিবলার দিকে কিছু খেজুর গাছ সারিবদ্ধভাবে রাখা হল।
হাদীস নং-১৭৪৮।ইসমাইল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার দু’পাথরে ভুমির মধ্যবর্তী স্থান আমার ঘোষনা মোতাবেক নর্ধারিত করা হয়েছে। বর্ননাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ হারিসার নিকট তাশরীফ আনেন এবং বলেনঃ হে বানূ হারিসা! আমার ধারনা ছিল যে তোমরা হারামের বাইরে অবস্থান করছ, তারপর তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাত করে বললেনঃ (না তোমরা হারামের বাইরে নও)বরং তোমরা হারামের ভিতরেই আছো।
হাদীস নং-১৭৪৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশআর (রহঃ) ’আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত এই সহীফা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি আরো বলেন, ’আয়ির নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদিনা হল হারাম। যদি কেউ এতে কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ অসঙ্গত কোন কাজ করে অথবা কুরআন- সুন্নাহর খেলাফ, আচরণকারী আশ্রয় দেয়, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহর লা’নত এবং সকল ফেরেশতা এবং মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। তিনি আরো বলেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং সকল মানুষের ও ফিরিশতাদের। আর কবুল করা হবে না তাঁদের কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত। যে ব্যাক্তি তাঁর মাওলার (মিত্রের) অনুমতি ব্যতীত অন্য অন্য কাওমের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তাঁর প্রতিও আল্লাহর লা’নত এবং সক ফেরেশতা ও মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’আদলুন অর্থ বিনিময়।
হাদীস নং-১৭৫০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদের উপর জয়ী হবে। লোকেরা তাঁকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদিনা। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
হাদীস নং-১৭৫১। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদিনায় নিকতবর্তী স্থানে পৌছলে, তিনি বললেনঃ এই হল তাবা।
হাদীস নং-১৭৫২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলতেন, আমি যদি মদিনাতে কোন হরিণকে বেড়াতে দেখি তাহলে তাঁকে আমি তাড়াবো না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার কংকরময় দুই এলাকার মধ্যবর্তী এলাকা হল হারাম বা সম্মানিত স্থান।
হাদীস নং-১৭৫৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তম অবস্থায় মদিনাকে রেখে যাবে। আর তখন জীবিকা অন্বেষনে বিচরণকারী অর্থাৎ পশু-পাখি এসে মদিনাকে আচ্ছন্ন করে নেবে। সবশেষে যাদের মদিনাতে একত্রিত করা হবে তাঁরা হল মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তাঁরা তাঁদের বকরিগূলোকে হাক-ডাক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মদিনাতে আসবে। এসে দেখবে মদিনা বন্য পশুতে ছেয়ে গেছে। এরপর তাঁরা সানিয়্যাতুল-বিদা নামক স্থানে পৌঁছতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
হাদীস নং-১৭৫৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদিনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।
হাদীস নং-১৭৫৫। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান মদিনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তাঁর গর্তে ফিরে আসে।
হাদীস নং-১৭৫৬। হুসাইন ইবনু হুরায়স (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ মদিনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারনা করবে, সে লবন যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে।
হাদীস নং-১৭৫৭। ‘আলী ইবনু আব্দুল্ললাহ (রাঃ) উসামানার কোন একটি টিলায় আরোহন করে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? তিনি বললেন বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফিতনা স্থানসমূহ দেখতে পাচ্ছি। মা’মার ও সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ননায় সুফিয়ানের অনুসরন করেছেন।
হাদীস নং-১৭৫৮। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আব্দল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনাতে দাযযালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফিরিশতা (মোতায়েন) থাকবে।
হাদীস নং-১৭৫৯। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফিরিশতা প্রহরায় নিয়োজিত থাকবে। তাই প্লেগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ কতে পারবে না।
হাদীস নং-১৭৬০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ সা’ইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ননা করেছেন। বর্নিত কথা সমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদিনায় প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ অরা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদিনার নিকতবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরন করবে। তখন তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি যাবে যে উত্তম ব্যাক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। দাজ্জাল বলবে, আমি যদি তাঁকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তাঁরা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিলনা। তারপর দাজ্জাল বলবে , আমি লোকটিকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে আর হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
হাদীস নং-১৭৬১। ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফিরিশতা গন সারিবদ্ধ ভাবে পাহারায় নিয়জিত থাকবে। এরপর মদিনা তাঁর অধিবাসীদেরকে তিন বার কেপে উঠবে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দেবেন।
হাদীস নং-১৭৬২। ‘আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ইসলামের উপর বায়’আত গ্রহন করলো। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল , আমার (বাইয়’আত) ফিরিয়ে নিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখান করলেন। এভাবে তিনবার হল। তারপর বললেনঃ মদিনা কামারের হাফরের মত, যা তাঁর আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভুত করে এবং খাঁটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে।
হাদীস নং-১৭৬৩। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যাতেয়া অরে তাঁর কতিপয় সাথী ফিরে আসলে একদল লোক বলতে লাগল, আমরা তাদেরকে হত্যা করব, আর অন্য দলটি বলতে লাগল, আনা, আমরা তাদেরকে হত্যা অরব না। এ সময়ই (তোমাদের কি হল, তোমরা মুনাফিকদের সম্পর্কে দু’দল হয়ে পড়েছ?) আয়াতটি নাযিল হয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা লোকদেরকে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
হাদীস নং-১৭৬৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মক্কাতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মদিনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও। ‘উসমান ইবনু ‘উমর (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে হাদীসটি জাবীর (রাঃ) র মতই বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১৭৬৫। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার পথে যখন তিনি মদিনার প্রাচীর গুলোর দিকে তাকাতেন, তখন তিনি তাঁর উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তুর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদিনার ভালবাসার কারনে।
হাদীস নং-১৭৬৬। ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বনূ সালিমা গোত্রের লোকেরা মসজিদের নববীর নিকটে চলে যাওয়ার সংকল্প করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকে জনশূন্য করা অপছন্দ করলেন, তাই তিনি বললেন হে বনূ সালিমা! মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের হাটার সওয়াব কি তোমরা হিসাব কর না? এরপর তাঁরা সেখানেই রয়ে গেল।
হাদীস নং-১৭৬৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও মম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি হল জান্নাতের বাগানের একটি বাগান, আর আমার মিম্বরটি হল আমার হাউযের উপর অবস্থিত।
হাদীস নং-১৭৬৮। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় শুভাগ্মন করলে আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবূ বাকর (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেনঃ ‘’প্রত্যেক ব্যাক্তই তাঁর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তাঁর জূতার ফিতা চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। আর বিলাল (রাঃ) জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেনঃ ‘’হায় , আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস। মাজানো্না নামক ঝর্নার পানি কোন দিন পান করার সুযোগ পাব কি? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি শায়বা ইবনু রাবী’আ, ‘উতবা ইবনু রাবী’আ এবং উমায়্যা ইবনু খালফের প্রতি লা’নত বর্ষন কর; যেমনি ভাবে তাঁরা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা এর চেয়ে বেশী। হে আল্লাহ! আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান কর এবং মদিনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদিনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদিনায় বুথান নামক একটি ঝর্না ছিল যার থেকে বিকৃত বর্ণ বিকৃত স্বাদের পানি প্রবাহিত হত।
হাদীস নং-১৭৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এ বলে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শহরে দাও। ইবনু যুরায়’ই (রহঃ) হাফসা বিনত, উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে অনুরুপ বর্ননা করতে শুনেছি। হিশাম (রহঃ) বলেন, যায়দ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’রাওহ তাঁর মায়ের সূত্রে এরুপ বলেছেন। ‘’
No comments:
Post a Comment